বাফুফে নির্বাচন

কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে তোড়জোড়-দর কষাকষি

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
আগামী ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন। ১৩৯ সংস্থা/সংগঠনের মনোনীত কাউন্সিলরদের ভোটে বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। যার জন্য ক্লাব, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থাগুলোকে বাফুফের কাছে নিজ নিজ সংগঠনের প্রতিনিধির নাম প্রেরণ করতে হবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।  বাফুফের নির্বাচনে কাউন্সিলর হওয়া নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে চলছে তোড়জোড়। অনেকে কাউন্সিলর হওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার যারা নির্বাচন করবেন, তারা তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে বিভিন্ন সংস্থার কাউন্সিলর করে আনার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। যাতে ভোটগুলো নিজের পক্ষেই থাকে। বিভিন্ন ক্লাব ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে রয়েছে নানা পক্ষ। ফলে সেই সকল প্রতিষ্ঠান থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে এখনও দর-কষাকষি চলছে।  অনেক সংগঠন একেবারে ৩০ সেপ্টেম্বর শেষদিন শেষ ক্ষণে নাম চূড়ান্ত করে বাফুফেতে প্রেরণ করবে। আবার অনেক সংস্থায় নাম চূড়ান্তও হয়েছে। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর প্রিমিয়ার লিগের কয়েকটি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। ঢাকা আবাহনী থেকে ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মো. আলমগীর, ফর্টিজ এফসি থেকে শাহীন, ব্রাদার্স ইউনিয়ন থেকে সদস্য সচিব সাব্বির আহমেদ আরিফের নাম ফেডারেশনে কাউন্সিলর হিসেবে যাচ্ছে। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র এবার লিগে অংশগ্রহণ করছে না। সর্বশেষ লিগে অংশগ্রহণ করায় কাউন্সিলরশিপ চেয়ে চিঠি দিয়েছিল তারা। ফিফার সঙ্গে আলোচনা করে বাফুফে শেখ রাসেলের চিঠির উত্তর প্রদান করবে। প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস পড়েছে মধুর সমস্যায়। ২৬ অক্টোবর ভুটানে এএফসি কাপের ম্যাচ। অনেক কর্মকর্তাই ভুটানে থাকবেন, তাই কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে খানিকটা দোটানায় লিগ চ্যাম্পিয়ন দলটি। কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি নির্বাচন না করবেন না এমন ঘোষণার পরদিনই সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তরফদার রুহুল আমিন। তার নিজস্ব দুটি দল ছিল সাইফ স্পোর্টিংয়ের। সেই দুটি দলও প্রত্যাহার করেছেন। তরফদার রুহুল আমিন চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বছর দশেক। তাই তিনি চট্টগ্রাম আবাহনী থেকেই কাউন্সিলর হওয়ার চেষ্টা করছেন। বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে নোফেল স্পোর্টিং তাবিথ আউয়ালের নিজস্ব ক্লাব। তাবিথ নোফেল স্পোর্টিং থেকে কাউন্সিলর হচ্ছেন। সম্প্রতি আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি হয়েছেন তাবিথ আউয়ালের ছোট ভাই তাজওয়ার আউয়াল। ফলে আসন্ন নির্বাচনে আরামবাগের কাউন্সিলর তাজওয়ারই হচ্ছেন। আরামবাগ ক্লাব পাড়ায় অবস্থিত ওয়ান্ডারার্স থেকে সাঁতার ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শাহীন, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং থেকে জামান, দিলকুশা স্পোর্টিং থেকে হাবিবুন নবী সোহেলের নাম কাউন্সিলর হিসেবে ফুটবলাঙ্গনে শোনা যাচ্ছে। বাফুফে নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার পাচ্ছে নারী ফুটবল লিগের শীর্ষ চার ক্লাব। চ্যাম্পিয়ন নাসরিন স্পোর্টিং ক্লাব থেকে বিসিবির পরিচালক মঞ্জুরুল আলম, রানার্স-আপ আতাউর রহমান ভূঁইয়া স্পোর্টিং থেকে সোহেল কাউন্সিলর হচ্ছেন। বাফুফের গত তিন নির্বাচনে প্রভাবক ছিলেন চট্টগ্রাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিলর আ জ ম নাসির। পটপরিবর্তনে তিনি এখন আত্মগোপনে। নির্বাচনে প্রভাব রাখা তো দূরের কথা, এবার কাউন্সিলরও নন নাসির। চট্টগ্রাম থেকে কাউন্সিলর হচ্ছেন সাবেক ফুটবলার শহিদুল ইসলাম। বাফুফে নির্বাচনে জেলা-বিভাগের ভোটের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই বিভিন্ন পক্ষ চায় নিজের অনুকূলে কাউন্সিলর নির্ধারণ। জেলা-বিভাগের দুই সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন ও আব্দুলস্নাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান কাউন্সিলরশিপ ফরম বিতরণ নিয়ে শুক্রবার উপদেষ্টার সামনেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'বাফুফের একটি পক্ষ নিজেদের ইচ্ছে মতো ভোটার করতে বেশ কয়েকটি জেলায় হাতে হাতে ফরম দিয়েছে, যা একেবারেই আইনে নেই। আমরা চাই সেই ফরম বাতিল করে ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে প্রেরণ করার।' তাদের এই অভিযোগের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন, 'অনেক জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পলাতক এবং বিভিন্ন মামলার আসামি। হাতে হাতে কাউন্সিলর ফরম দেওয়ায় বাফুফের কয়েকজন কর্মকর্তার ইচ্ছে মতো সেই জায়গা থেকে কাউন্সিলর ঠিক করবে।' বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি নির্বাহী সদস্য হলেও বাফুফের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেক সংগঠকের অনুমান, নির্বাচনে কাউন্সিলরশিপের ক্ষেত্রেও তিনি প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং একটি প্যানেল তৈরির পেছনেও নানা অঙ্ক করছেন। বাফুফের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের ২১ দিন আগে নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু করতে হবে। সেই হিসেবে ৫ অক্টোবর থেকে নির্বাচন কমিশনের কাজ শুরু হওয়ার কথা। তাই বাফুফের নির্বাহী কমিটি এই সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকে বসবে। সেই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠন ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত কাউন্সিলরদের নাম অনুমোদন করবে। দেশে অন্য সকল ফেডারেশনের নির্বাচনের চেয়ে বাফুফে নির্বাচনে দুটি বিষয় ভিন্নতা রয়েছে। যেকোনো ফেডারেশনে নির্বাচন করতে হলে কাউন্সিলর হতে হয়। বাফুফেতে অবশ্য কাউন্সিলর হওয়া ছাড়াও নির্বাচন করা যায়। সেক্ষেত্রে আগ্রহী ব্যক্তিকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে একজন কাউন্সিলরের সমর্থক ও প্রস্তাবক হিসেবে স্বাক্ষর প্রয়োজন। দুইজন কাউন্সিলরের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রে থাকলে সেটি বৈধতা পায়। বাফুফে নির্বাচনে আরেকটি বিশেষ বিষয় বর্তমান নির্বাহী কমিটির কেউ কাউন্সিলর হতে পারেন না। বর্তমান কমিটির কেউ পুনরায় নির্বাচন করতে চাইলে একজন কাউন্সিলর প্রস্তাবক ও আরেকজন কাউন্সিলর সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়।