শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

কঠোর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ দলের অনুশীলন

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কঠোর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ দলের অনুশীলন

কানপুর এয়ারপোর্টে নেমে গত বুধবার বাংলাদেশ দলের জন্য স্থানীয় পুলিশের যে কঠোর নিরাপত্তা ছিল, তাই যেন আবার দেখা গেছে কানপুর গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামে প্রবেশের বিভিন্ন ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশ। কোনো যানবাহনকেই সেখানে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি স্টেডিয়ামে আসা ব্যক্তিদের বাহনও। স্টেডিয়ামের বাইরে নেই কোনো সাধারণ জনতা। কার্ডধারী ছাড়া কেউ স্টেডিয়ামের ভেতর প্রবেশ করতে পারছেন না।

কার্ডধারী হলেও তাদেরও নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। মাঠে প্রবেশের আগে পুলিশ তাদের তলস্নাশি করেছে। বাদ যাননি ভারত-বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও। স্টেডিয়ামের আঙ্গিনায় প্রবেশের পর মাঠের ভেতর ঢোকার গেটেও পুলিশের অবস্থান। এমন কি মাঠে প্রবেশের পর বাউন্ডারি লাইনের বাইরেও পুলিশ। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশ দলের নেট অনুশীলনের জায়গাতেও দাঁড়ানো ছিলেন উচ্চপদস্থ কমকর্তাসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্য। যতক্ষণ বাংলাদেশ দল অনুশীলন করেছে, ততক্ষণই দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচকে সামনে রেখে পৃথিবীর সব দেশেই দুই দলকেই কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। কিন্তু এভাবে অনুশীলনের সময় খেলোয়াড়দের কাছাকাছি কখনো দেখা যায়নি। এবার বাংলাদেশ-ভারতের কানপুর টেস্ট নিয়ে উত্তর প্রদেশের হিন্দু মহাসভা নামের সংগঠনের দেওয়া হুমকির কারণেই এ রকম কঠোর নিরাপত্তা।

খেলা বন্ধ না করলে তারা পিচ খুঁড়িয়ে রাখারও হুমকি দিয়েছে। সব মিলিয়ে কানপুর টেস্টকে ঘিরে রাজ্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। শুক্রবার টেস্ট শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার পুলিশ পালাক্রমে গ্রিন পাক স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। টেস্ট শুরুর দিন থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রশ্ন আসতে পারে পালাক্রমে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন কী? দুই দল চলে যাওয়ার পর তো আর সেভাবে কোনো ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করার কারণ পিচ রক্ষা। আন্দোলনকারীদের পিচও নষ্ট করে ফেলার হুমকি রয়েছে। যে কারণে উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কিউরেটর শিভ কুমার পিচের যাতে কোনো রকমের ক্ষতি না হয়, তাই বাড়তি নিরাপত্তার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। যে কারণে এই শিফটিং ডিউটি।

উত্তর প্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিসিপি রাজেশ বলেন, 'বাংলাদেশ-ভারতের টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছি। একটি হচ্ছে মাঠ ও পিচের নিরাপত্তা দেওয়া, আরেকটি হচ্ছে স্টেডিয়ামে প্রবেশের রাস্তা, অপরটি হচ্ছে আশপাশের এলাকা। প্রতিটি স্তরই তিন-চারটি ভাগে বিভক্ত।'

এছাড়া খেলার দিন দর্শকদের ভালোভাবে তলস্নাশি করে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। তিনি জানান, হুমকি নিয়ে তারা খুব একটা উদ্বিগ্ন নন, কিন্তু সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হিন্দু মহাসভার এই হুমকির কারণে স্টেডিয়ামের বাইরে ক্রিকেট ভক্তদের ভিড়ও তাই ছিল না। অন্য সময় হলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের এক নজর দেখার জন্য ক্রিকেট ভক্তরা স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে ভিড় করে থাকেন। সেখানে তারপরও টিকিটের জন্য কিছু ভিড় ছিল।

টিকিট কিনতে আসা হারস সিং মাঠে ঢুকে কোহলিকে দেখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। তার অনুরোধে সাড়া দেওয়ার মতো অবস্থানে ছিলেন না পুলিশের সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত এই প্রতিবেদককেও অনুরোধ করেন অল্প সময়ের জন্য হলেও মাঠে ঢুকার ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে তা ছিল অসম্ভব। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে হিন্দু মহাসভার কোনো তৎপরতা স্টেডিয়ামের আশপাশে নজরে পড়েনি। উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর সৌরভ কুমার বলেন, 'এটি খুবই ছোট সংগঠন। মূলত মিডিয়া কাভারেজ নিতেই তারা এ রকম হুমকি দিয়েছে। তাদের এই হুমকিতে ম্যাচের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।'

সবকিছুই স্বাভাবিক। কানপুরের মানুষ ক্রিকেটকে খুবই ভালোবাসে। তারা টেস্ট দেখতেও পছন্দ করেন। ভারত-নিউজিল্যান্ডের শেষ টেস্টের শেষ দুদিন স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ ছিল। এবারও দর্শকরা ঠিকই মাঠ ভরে তুলবেন।'

এদিকে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছেন, তারা হিন্দু মহাসভার হুমকি নিয়ে চিন্তিত নন। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও

তারা চিন্তা করছেন না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে