নামে-ভারে, অভিজ্ঞতা আর শক্তি, সবদিক দিয়েই বাংলাদেশের চেয়ে টেস্টে বেশ এগিয়ে ভারত। চেন্নাই টেস্টে যা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছে সফরকারীরা। চিপকের সেই হতাশা পেছনে ফেলে কানপুরে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া শান্তরা। অন্যদিকে, প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্টেও আধিপত্য ধরে রাখার লক্ষ্য ভারতের। সবমিলিয়ে জমজমাট এক লড়াইয়ের প্রত্যাশায় ভক্তরা।
প্রথম ম্যাচে হারের দুঃস্মৃতি ভুলে সিরিজ সমতায় শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আজ শুক্রবার কানপুরের গ্রিন পার্কে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামছে সফরকারী বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়। পাকিস্তানের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের সুখস্মৃতি নিয়ে ভারতের মাটিতে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু
ঘরের মাঠে ভারত যে অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ সেটি
প্রমাণিত হয়েছে।
প্রথম টেস্টে ভারত ম্যাচের লাগাম নেওয়ার আগে মাত্র দুই সেশন লড়াই করতে পারে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে রেকর্ড ২৮০ রানের ব্যবধানে হারের লজ্জা পায় টাইগাররা। এই হারে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট জয় এখনো অধরাই আছে। কারণ এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচ খেলে ১২টিতে হার ও দুটি ড্র করেছে বাংলাদেশ। এই চক্রে (তৃতীয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ) ভারতের বিপক্ষে আর কোনো টেস্ট না থাকায় টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে হারের বৃত্ত ভাঙার শেষ সুযোগ পাচ্ছে টাইগাররা। কানপুরের উইকেট অনুকূলে থাকায় বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে ফেভারিট ভারতই। তাই সিরিজ হার এড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
কানপুরের উইকেট কালো মাটি দিয়ে তৈরি। এটি অনেকটা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মতো। মিরপুরের মতো কানপুরের উইকেট ধীরগতির এবং নিচু প্রকৃতির। যা ভারতের চেয়ে বাংলাদেশি স্পিনারদের বেশি সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেওয়ার মূল কারিগর ভারতের দুই প্রধান স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। টার্নিং এবং স্পোর্টিং উইকেটে বেশি সাফল্য পেয়েছেন তারা। কিন্তু ধীরগতির উইকেটে বাংলাদেশিদের চেয়ে তাদের স্পিনারদের সাফল্যের মাত্রাটা কম। সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে তাইজুল ইসলামকে যুক্ত করে ভারতের বিপক্ষে তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানোর পরিকল্পনা করতে পারে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে একজন ব্যাটার বাদ দিতে হবে টাইগারদের।
প্রথম টেস্টে জসপ্রিত বুমরাহর ডেলিভারিতে ডান হাতের আঙুলে ব্যথা পেয়েছিলেন সাকিব। এতে দ্বিতীয় টেস্টে তার খেলা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সাকিবের খেলা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কানপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে হাথুরুসিংহে বলেন, 'আমি সাকিবকে নিয়ে কোনো অভিযোগ শুনিনি। দলের ফিজিও বা অন্য কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। তাই সে খেলার জন্য প্রস্তুত।' যদিও প্রথম টেস্টে স্বাভাবিকের চেয়েও কম বোলিং করেছেন সাকিব। এমনকি ব্যাট হাতেও ভালো কিছু করতে পারেননি। কানপুরে মিরপুরের মতো উইকেটে সাকিবের দলে থাকা বাংলাদেশকে আরও উৎসাহী করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাথুরু বলেন, 'আমি সাকিবের পারফরমেন্স নিয়ে নয়, আমাদের পারফরমেন্স এবং আমরা কিভাবে আরও ভালো করতে পারতাম তা নিয়ে চিন্তিত। আমরা সবাই জানি তার কতটা সামর্থ্য আছে।' দ্বিতীয় টেস্টের আগে কানপুরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারণ, সম্প্র্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া হামলার প্রতিবাদে কিছু ডানপন্থি সংগঠন খেলা বন্ধের দাবি জানায়। এতে দু'দলকে তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এটি বিচ্ছিন্ন বেষ্টনী, বাইরের বেষ্টনী এবং স্টেডিয়ামের আশপাশে বেষ্টনী নিয়ে গঠিত। টেস্ট ম্যাচের জন্য বিভিন্ন শাখার এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন হাথুরুসিংহে। দ্বিতীয় টেস্টে ভালো শুরু করার নিয়েই বেশি চিন্তিত তিনি। যা প্রতি টেস্টেই বাংলাদেশকে সমস্যায় ফেলে। হাথুরু বলেন, 'ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যে
নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে তাতে আমাদের আস্থা আছে।
তাই এসব নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।'
বাংলাদেশ দল : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, নাহিদ রানা, জাকের আলী অনিক, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, সরফরাজ খান, ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক), ধ্রম্নব জুয়েল (উইকেটরক্ষক), রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ, আকাশ দীপ, জসপ্রিত বুমরাহ, যশ দয়াল।