চেন্নাই টেস্টে ইতিবাচক দিক তাসকিন-হাসানদের বোলিং
প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর বড় স্বপ্ন নিয়ে ভারতে সিরিজ খেলতে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু প্রথম টেস্টে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি শান্ত বাহিনী। যার ফলে বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা।
চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশের সামনে ছিল ৫১৫ রানের প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের ব্যাটিং ব্যর্থতাই নির্ধারণ করে দেয় ম্যাচের ভাগ্য। দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা ভালো ব্যাটিং করলেও বড় পরাজয় এড়াতে পারেনি সফরকারীরা। চতুর্থ দিনে মাত্র ৪০ রানের ব্যবধানে ৬ উইকেট হারায় লাল-সবুজের দল। এমন বড় পরাজয়ের কারণ জানালেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
ম্যাচ-পরবর্তী পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে হারের কারণ জানিয়ে শান্ত বলেন, 'এই টেস্টে ইতিবাচক দিক বলতে তাসকিন-হাসানদের বোলিং। তারা প্রথম ইনিংসের প্রথম ২-৩ ঘণ্টা যেভাবে বোলিং করেছেন, তাতে বেশ চাপে ছিল ভারতীয় ব্যাটাররা। যদিও পরবর্তীতে তারা ঘুরে দাঁড়ায়। আমরা নতুন বল বেশ ভালোভাবে কাজে
লাগাতে পেরেছি। তবে সেই ধারাবাহিকতা
\হআর ধরে রাখতে পারিনি।'
নিজের ব্যাটিং প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, 'আমি সবসময় দলের প্রয়োজনে অবদান রাখার চেষ্টা করি। আমি ব্যাটিং করতে খুবই উপভোগ করি। চেষ্টা করি যতটা সম্ভব লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার। কানপুর টেস্টটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বোলাররা
ভালো করছে, আশা করি ব্যাটাররাও দ্রম্নতই
ছন্দে ফিরে আসবে।'
ভারতের এই জয়ের পেছনে মূল কারিগর অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তার সেঞ্চুরি ও ৬ উইকেটের কীর্তিতেই মস্নান হয়ে গেছে শান্তদের পুরো দলের পারফরম্যান্স। ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ১১৩ রান করার পাশাপাশি বল
হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছেন
অভিজ্ঞ এই তারকা।
বাংলাদেশ যে দুটো দলের সঙ্গে এখনও টেস্ট জিতেনি, তার মধ্যে ভারত একটি, অন্যটি দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট আঙিনায় পা রাখার ২৩ বছরের মধ্যে এবারের ভারত সিরিজের আগেই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় মনে করা হচ্ছিল। কিছুদিন আগেই যে দাপটের সঙ্গে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে এসেছে টাইগাররা। কিন্তু ভারতে প্রথম ম্যাচে নূ্যনতম লড়াইও করতে পারল ন্তুুত্ম বাহিনী।
চেন্নাইয়ে রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। ভারতের ৩৭৬ ও ২৮৭ রানের জবাবে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৪৯ ও ২৩৪ রান করে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা অনায়াসে জিতেছে ২৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে।
হারলেও এই টেস্টে ইতিবাচকতা দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ভারতের প্রথম ইনিংসের কয়েক ঘণ্টা দারুণ বল করেছিল বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্ট। দলীয় ৩৪ রানের মধ্যেই রোহিত শর্মা, শুভমান গিল ও বিরাট কোহলির উইকেট তুলে নেন হাসান মাহমুদ। যদিও পরে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। হাসান মাহমুদ ওই ইনিংসে নেন ৫ উইকেট। তাসকিন ৩ ও নাহিদ রানা একটি উইকেট নেন, মিরাজের শিকারও ১টি। বোলারদের এই পারফরম্যান্সকে সফলতা মনে করেন শান্ত।
প্রথম ইনিংসে ২০ রানে আউট হয়েছিলেন শান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিই সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন। এভাবে লম্বা সময় ব্যাটিং করার ইচ্ছা তার। শান্ত বলেন, 'ব্যাটার হিসেবে আমি সবসময় অবদান রাখতে চাই। ব্যাট করা উপভোগ করি। কী হবে না হবে, তা না ভেবে যতক্ষণ পারি ব্যাট করে যেতে চাই। প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। খেলতে চাই নিজেদের শক্তির মধ্যে থেকে। বোলাররা ভালো করেছে, আশা করি ব্যাটাররাও দারুণ কিছু করবে।'
ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড ব্যবধানে ২৮০ রানে হারের পর দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কাঁটাছেড়া হওয়াটা স্বাভাবিক। দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে বড় রান করার সুযোগ থাকলেও সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। প্রশ্ন জেগেছে তার আঙুলের চোট নিয়ে। সবকিছুর উত্তর অবশ্য খোলাসা করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, 'আসলে অধিনায়ক হিসেবে সত্যি কথা বলতে পেস্নয়ারদের মধ্যে যেটা দেখি যে, শুধু সাকিব ভাই বলে না, যে কতটুকু কষ্ট করছে। কামব্যাক করার জন্য যা যা করা দরকার তা করছে কিনা। দলের প্রতি ইনটেনশনটা কী রকম। আমি চেষ্টা করি (দেখার) যে এই পেস্নয়ারটা দলকে দেওয়ার জন্য কতটুকু প্রস্তুত, ১০০% কিনা। এটা অনেকে ভাবতে পারেন হয়তো সাকিব ভাই দেখে বলছি কিন্তু জিনিসটা এরকম না। নাহিদ রানা থেকে শুরু করে মুশফিক ভাই পর্যন্ত একই জিনিস আমি দেখার চেষ্টা করি। রান করছে কী করছে না এটার থেকে জরুরি আমার কাছে লাগে তার প্রস্তুতি কেমন, দলের প্রতি চিন্তাভাবনা কেমন। সে দলকে ভালো কিছু দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না। এই জিনিসটা দেখে আমি খুশি। দলে যে ১৫-১৬ জন পেস্নয়ার আছে সবার ওই প্রস্তুতি বা কমিটমেন্ট দেখে আমি খুশি।'
পরে সাকিবের আঙুলের চোট নিয়ে শান্ত বলেন, 'আঙুলের যে ব্যাপারটা এটা আসলে ব্যাট করার সময় গস্নাভসে একটা বল লাগে যেটা হয়তো আপনারা দেখেছেন। যে কারণে ট্যাপটা পেঁচানো। আমি আসলে কখনও কোনো পেস্নয়ারের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। কারণ খেলাটা একটা টিম গেম। পুরা দলের অবদানে কিন্তু একটা ম্যাচ জেতা সম্ভব। সবাই দল হিসেবে যদি আমরা অবদান রাখতে পারতাম হয়তো আরও ভালো কিছু হতে পারত। ফলে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত নই।'
প্রথম ইনিংসে কেন দেরিতে বল করেন সাকিব সে ব্যাখ্যা দিয়ে শান্ত বলেন, 'সাকিব ভাইয়ের বোলিংয়ের ব্যাপারে যা বললেন, প্রথম ইনিংসে ৩ পেসার খুবই দারুণ বোলিং করেছে। আমার প্রয়োজনই পড়েনি তাকে বোলিংয়ে আনার। এক পাশ থেকে মিরাজ ভালো বল করছিল। এটা একটা পরিকল্পনাই ছিল যত বেশি আমরা পেসারদের বল করাতে পারি। শুরুর ৬টা উইকেটও আমরা খুব তাড়াতাড়িই নিলাম। তো এইটাই পস্ন্যান ছিল।'