মাত্র তিন-চার কদমের রানআপ। দুয়েকটি ডেলিভারি লেগ স্পিন দিয়েই হুট করে একটি গুগলি। ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান ব্যাটাররা, অনেক সময় বিলিয়ে দিতে হয় উইকেটও। রশিদ খান এমন মুহূর্তের সৃষ্টি করছেন অহরহ। তার ডেলিভারিতে বৈচিত্র্য অনেকগুলো। আফগান এ ক্রিকেটারের লেগ স্পিন অন্যদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। গুগলিই করেন দুভাবে; একটাতে বলের রিলিজ পয়েন্ট অনেকটা উপরে, অন্যটায় স্বাভাবিক ডেলিভারি।
শুধু বোলিংই নয়, রশিদ খানের ব্যাটিংও দেখার মতো। প্রয়োজনে প্রায়ই দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা যায় তাকে, করেন বিস্ফোরক ব্যাটিংও।
জন্মদিনে ৫ উইকেট নিয়ে আফগানদের সিরিজ জেতালেন রশিদ খান। রশিদ খানের বোলিংয়ের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা ছিলেন অসহায় ব্যাটারদের দারুণ পারফরম্যান্সের পর রশিদ খান ও নাঙ্গেলিয়া খারোতের স্পিন ভেল্কিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭৭ রানের বিশাল জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। এ জয়ের ফলে আফগানরা এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে।
১৯৯৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের নাঙ্গরাহার প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১১ ভাইয়ের মধ্যে রশিদ ষষ্ঠ। তার জন্মের বছর তিনেক পরেই শুরু হয় আফগানিস্তান যুদ্ধ। 'নাইন ইলেভেন' হামলার জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার দেশটিতে ২০০১ সালে যুদ্ধের সূত্রপাত করে। ওই যুদ্ধের প্রভাব মাথায় নিয়ে পাকিস্তানে চলে যেতে হয় ছোট্ট রশিদের পরিবারকে। পাকিস্তানের পেশোয়ার ইসলামি কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালেখা করেন তিনি, হাতেখড়ি হয় ক্রিকেটেও।
পাকিস্তানে বসবাসকালে দেশটির অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির খেলা দেখতেন রশিদ, চেষ্টা করতেন তার মতো করে বল করতে, ক্রমে ক্রমে অ্যাকশনে বদল এনে রশিদ খান আজকের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার। অনেকে এখন তাকে টি-২০ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ই মনে করেন।
২০১৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় রশিদ খানের। অভিষেকের বছর দুয়েক পরও সেভাবে পরিচিতি পাননি। তবুও ওই সময় বেশ কয়েকটি বিদেশি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলেন। শুরুটা করেন বিপিএল দিয়ে, কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সিতে ২০১৬-১৭ মৌসুমে খেলেন তিনি। তবে আলোড়ন তুলেন আইপিএলে ডাক পেয়ে।
ভারতে ক্রিকেটের বাজার চাঙ্গা। বিশেষ করে আইপিএল এলে মাতামাতির অন্ত থাকে না। এই প্রতিযোগিতায় ২০১৭ সালে দল পেলে বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়ন উঠে। কারণ ৪ কোটি রুপিতে কেনা রশিদের দেশ তখনও আইসিসির সহযোগী। অভিষেক ম্যাচে রশিদ নেন মানদিপ সিং ও ট্রাভিস হেডের উইকেট। পুরো আসরে তার শিকার ১৭ উইকেট।
রশিদ এখন বিশ্বের প্রায় সব লিগেই খেলে ফেলেছেন; বিপিএল, আইপিএল, পিএসএল, এলপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশ, এসএ টি-২০, দ্য হান্ড্রেড, মেজর লিগ ক্রিকেট, গেস্নাবাল টি-২০। বাকি কী?
এত এত লিগ খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বলেই শুধু রশিদ খানকে টি-২০'র সেরা ক্রিকেটার দাবি করা হচ্ছে না। এই ফরম্যাটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬১৩টি উইকেট তার, ৪৪৮ ম্যাচে। তাও আবার শীর্ষে থাকা ডোয়াইন ব্রাভোর চেয়ে একশর বেশি ম্যাচ কম খেলে। ব্রাভো ৫৮০ ম্যাচে নিয়েছেন ৬৩১ উইকেট।
২০০১ সালে আইসিসির সদস্য হওয়া আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দেয় ২০০৯ সালে। ২০১৩ সালে মিলে সহযোগী সদস্যের মর্যাদা, আর ২০১৭ সালে পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রের। একঝাঁক তারকার বিচক্ষণতায় ক্রিকেটে এখন তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর অন্যতম কুশীলব রশিদ। মোহাম্মদ নবিকে বড় তারকা মানা হলেও রশিদই দেশটির প্রথম বৈশ্বিক সুপারস্টার। অনেক রেকর্ডে জড়িয়ে আছে তার নাম। তিনি টেস্ট ও ওয়ানডেতে দায়িত্ব পালন করা সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক। ২০ বছর ৩৫০ দিন বয়সে টেস্ট দলকে ও ১৯ বছর ১৬৫ দিন বয়সে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়ানডে দলকে।
দেশের হয়ে রশিদ খান এখন পর্যন্ত ৫টি টেস্ট, ১০৪টি ওয়ানডে ও ৯৩টি টি-২০ খেলেছেন। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১ হাজার ৮৮২ রান ও ৩৭১ উইকেট নিয়েছেন তিনি।