সাকিবের আঙুলে রহস্যময় ইনজুরি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তামিম-কার্তিক
প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া ডেস্ক
আত্মবিশ্বাসের পালে কিছুটা বাড়তি হাওয়া নিয়েই ভারতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিতভাবেই মানসিকভাবে ফুরফুরে রেখেছিল টাইগারদের। ভরসার নাম ছিল সাকিব আল হাসান। কাউন্টি ক্রিকেটে ১৩ বছর পরে ফিরেই বল হাতে ছিল সাকিবের ৯ উইকেট। চেন্নাইয়ের স্পিনিং উইকেটে সাকিব দারুণ কিছু করবেন, এটাই ছিল প্রত্যাশা।
কিন্তু চেন্নাই যেন বাংলাদেশের আশাভঙ্গের হাটবাজার। ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র তো ছিলই। বল হাতেও সুসময়টা ছিল সেই প্রথম দিনের প্রথম দুই সেশন পর্যন্তই। এরপর অশ্বিন-জাদেজার ১৯৯ রানের সেই বিশাল জুটির কথা বাংলাদেশ ভুলে যেতে চাইবে নিশ্চিতভাবে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ছিল ঋষভ পান্ত-শুভমান গিলের জোড়া সেঞ্চুরি।
এতকিছুর পরেও প্রশ্ন, দলের প্রয়োজনে বল হাতে সাকিব কোথায়? কাউন্টিতে যার কাছ থেকে ছিল ৯ উইকেট। দলের প্রয়োজনে করেছিলেন টানা ২৮ ওভার। কিন্তু দিন ছয়েক পরেই চেন্নাইয়ে সাকিব করেছেন মোটে ২১ ওভার। ছিল না কোনো উইকেট। চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিনও ৭ ওভার বল করে উইকেটশূন্য সাকিব দিয়েছেন ৫৯ রান। কেন এমন দশা সাকিবের, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন সবাই। আর সেটা পাওয়া গিয়েছে মুরালি কার্তিকের সুবাদে।
ভারতের সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছেন তৃতীয় দিনে এসে। পরে ধারাভাষ্যে এসে সাকিবের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সেটাও জানিয়েছেন, 'তাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী কারণে সে কম বোলিং করছে... সে আমাকে যা বলেছে, তা একজন স্পিনার হিসেবে আমি তা বুঝতে পারছি।'
এরপরই সাকিবের ইনজুরির কথা বলেন মুরালি কার্তিক, 'তার বাঁ হাতের স্পিনিং ফিঙ্গারে একটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেটি এখন ফুলে গেছে, শক্ত হয়ে আছে। ওই আঙুলে সে বলের অনুভূতিটাও পাচ্ছে না। স্পিনার হিসেবে বলের অনুভূতিটা দরকার। এ ছাড়া তার কাঁধেও অস্বস্তি আছে।'
ধারাভাষ্যকক্ষে ছিলেন সাকিবের দীর্ঘদিনের সতীর্থ তামিম। মুরালি কার্তিকের এই ব্যাখ্যার পরেই টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে তুলেছেন প্রশ্ন, 'মুরালি কার্তিক বলে গেছে, আঙুলের সমস্যার কারণে সাকিব বল গ্রিপ করতে পারছে না। যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশ চারজন ফ্রন্টলাইন বোলার নিয়ে খেলছে। টিম ম্যানেজমেন্টের অবশ্যই জানানো উচিত, তারা এই ইনজুরির কথাটা আগে থেকেই জানত কি না।'
এদিকে সাকিবের ইনজুরির বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানালেন ভিন্ন আরেক তথ্য। গণমাধ্যমকে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানান, সাকিবের সার্জারি হলে তো জানতেন তিনি। এ ছাড়া সাকিবের সবশেষ ইনজুরি নিয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
এদিকে চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিনে অবশ্য সাকিব একটি রেকর্ড গড়েছেন। টাইগারদের হয়ে শনিবার সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট খেলার রেকর্ডটি গড়েছেন সাকিব। এদিন তার বয়স দাঁড়িয়েছে ৩৭ বছর ১৮০ দিন বয়সে। এতদিন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ বয়সে টেস্ট খেলার রেকর্ডটি ছিল সাবেক বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের। এর আগে তিনি ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় পোস্টারবয় সাকিব। একের পর এক ব্যক্তিগত মাইলফলকে তিনি নাম তুলে চলেছেন ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত সময়ে এসেও। যদিও আগের মতো ঠিক অলরাউন্ডার সাকিবের দেখা মেলে না সহসা। তবে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডারের কাতারে তার নামটাই হয়তো ওপরের দিকে থাকবে। এমন কিছু রেকর্ড গড়েছেন তিনি, যা ভাঙার অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ ও কঠিন।
বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট খেলার রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের উইলফ্রেড রোডসের দখলে। ১৯৩০ সালে তিনি যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যখন তিনি শেষ টেস্ট খেলেছেন, তখন তার বয়স ছিল ৫২ বছর ১৬৫ দিন। তার টেস্ট ক্যারিয়ারও ছিল অবিস্মরণীয় ৩০ বছরের। এত লম্বা ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়তে বর্তমান সময়ে দেখা যায় না। আধুনিক ক্রিকেট প্রচলনের পর সবচেয়ে বেশি বয়সি হিসেবে টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়েন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি শেষ টেস্ট খেলেছেন ৪২ বছর ৩৫১ দিন বয়সে।