টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের আধিপত্য কারও অজানা নয়। তার ওপর ঘরের মাঠে তারা কতটা শক্তিশালী সেটাও সবার জানা। সেই দলটির বিপক্ষেই চেন্নাইতে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে আগামী বৃহস্পতিবার সাদা পোশাকের লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামার চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে লাল বলের ম্যাচে মাঠে নামার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
মূল লড়াই শুরুর আগে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ভারতের বিপক্ষে লড়াই নিয়ে নিজের মতামত জানিয়ে বাংলাদেশ কোচ বলেছেন, 'বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে (টেস্ট) খেলতে পারলে আমরা আরও উৎসাহিত হই। যেমন ভারতে এসে ভারতের বিপক্ষে খেলা। এখনকার দিনে ক্রিকেটে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সেরাদের বিপক্ষে খেলা সব সময় আপনাকে এই অনুভূতি দেয়, আপনি একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা এখন সেই চ্যালেঞ্জের দিকেই তাকিয়ে।'
এই তো কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের মাটিতে লাল বলের ক্রিকেটে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই সম্মিলিত দারুণ পারফরম্যান্সে আসে এই জয়। আর বর্তমান এই দলটাই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল বলেই মনে করেন টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের মতো অনুশীলন করে বাংলাদেশ দল। আর অনুশীলন সেশন শেষে সাংবাদিকদের কোচ হাথুরুসিংহে বলেন, 'আমি মনে করি আমার মেয়াদে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া সম্ভবত এটাই সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল।'
এরপর নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, 'আমরা অনেক পেসার নিয়ে এসেছি এবং আমরা ভালো ফাস্ট বোলার পেয়েছি। আমরা সত্যিই ভালো অভিজ্ঞ স্পিন আক্রমণ পেয়েছি। এবং তারপর ব্যাটিং, আসলে একটি ব্যাটিং গভীরতা আছে আমাদের দুটি কারণে। এক হলো আমাদের দুই স্পিনার প্রকৃতপক্ষে ব্যাটারও, যারা টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন। এবং এরপর আমাদের দুই উইকেটরক্ষক যারা আমাদের প্রধান ব্যাটার। সুতরাং এই সিরিজের জন্য দলের ভারসাম্য সত্যিই দারুণ এবং এটি আসলে আমাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস দেয় যে আমরা সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।'
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুই যুগের পথচলায় এবারই প্রথম কোনো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে ২-০ ব্যবধানের সিরিজ জয়ে টাইগারদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। ভারতের বিপক্ষে আসন্ন দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও লড়াই করার রশদ পেয়েছেন তারা।
পাকিস্তান সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করেছেন মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। একই সঙ্গে পেস এবং স্পিন বিভাগ থেকে ভয়ংকর বোলিং পারফরম্যান্স। মূলত এটা সম্পূর্ণ একটি দলীয় প্রচেষ্টা যা পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশকে একটি দুর্দান্ত ফলাফল এনে দিয়েছিল।
হাথুরুসিংহের দাবি, 'অবশ্যই, এটা (পাকিস্তানে জয়) আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দেয়। ফলাফলের জন্যই নয়, সেই সিরিজে আমরা যেভাবে খেলেছি, যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি, আমরা উভয় টেস্টেই পেছনে ছিলাম এবং পরে আমরা কীভাবে ফিরে আসি। বিভিন্ন সময় যারা অবদান রেখেছেন, এটাও। এই সিরিজের জন্য আমাদের অনেক বিশ্বাস তৈরি করেছে।'
সাকিবের পর বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে যার নামটা আসে তিনি হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের খারাপ সময়ে ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্স জয় এনে দেওয়া যার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে এই ডানহাতি অলরাউন্ডারকে ভবিষ্যৎ সাকিব আল হাসান বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। এবার সে তালিকায় যোগ হলেন কোচ হাথুরুসিংহের নামও।
ভারত সিরিজের স্কোয়াডে আছেন সাকিব-মিরাজ। বাংলাদেশকে জেতাতে এই দুই ক্রিকেটারকে যে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মাঠে নামার আগেই মিরাজকে ভবিষ্যৎ সাকিবকে মন্তব্য করেছেন টাইগার হেড মাস্টার।
হাথুরুসিংহে বলেন, 'যখনই সে দলে থাকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সাকিব বড় ভূমিকা রাখে। যেভাবে আমরা দলে ভারসাম্য আনতে চাই, সে থাকলে সেই কাজটা অবশ্যই সহজ হয়ে যায়।'
'আমরা যে একজন বাড়তি বোলার বা একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলাতে চাই, সেটা তার অলরাউন্ড সামর্থ্যের জন্যই পারি। সে শুধু ওই সমন্বয়টাই সহজ করে না, নিজের বিশাল অভিজ্ঞতাটাও যোগ করে।'
তিনি আরও বলেন, 'সে সম্ভবত এ মুহূর্তে সবচেয়ে লম্বা ক্যারিয়ারের আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় আর এখন তো সে কাউন্টি ম্যাচ খেলে এসেছে। তার শারীরিক অবস্থাও ভালো। তাই শুধু স্কিল দিয়ে নয়, অন্যান্য দিক থেকেও দলের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে।'
এদিন হাথুরুকে প্রশ্ন করা হয় সাকিবের ভূমিকা পরে কে নেবেন? এ সময় তিনি মেহেদী হাসান মিরাজের কথা জানান। এই কোচ বলেন, 'আমার কাছে সে (মিরাজ) গত পাঁচ বা ছয় বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতি করা ক্রিকেটার। সত্যিকার অর্থেই সে (ভবিষ্যতে) সাকিবের ভূমিকা নেওয়ার জন্য তৈরি।'
'সে (মিরাজ) তার ব্যাটিং তো বটেই, নিশ্চিত করেই যেটা তার বড় শক্তির জায়গা, সেই বোলিংয়েরও উন্নতি ঘটিয়েছে। এখন সে নিজের ব্যাটিংয়ের উন্নতি ঘটিয়েছে। সে অসাধারণ একজন ফিল্ডারও।'
কয়েক দিন আগেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। আর এই সিরিজে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ম্যাচসেরা হয়েছেন মিরাজ।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ জয় পায় ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সেই জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন মিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাট-বল দুই বিভাগেই তার বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রথম ইনিংসে তিনি শিকার করেন ৫ উইকেট। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে করেন ৭৮ রান।