ভোটে আছে, খেলায় নেই ডিএফএ
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন আসন্ন। সেই নির্বাচনে অন্যতম বড় প্রভাবক হবেন জেলা-বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ৭২ জন কাউন্সিলর। অথচ প্রতিটি জেলা-বিভাগে হয় না নিয়মিত লিগ, এমনকি বাফুফেও জেলাগুলোর জন্য আয়োজন করতে পারে না জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ।
হকি, সাঁতার, অ্যাথলেটিক্সসহ অনেক ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে রয়েছে ফেডারেশনের চার বছর মেয়াদে অন্তত দুইবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে হবে। দুইবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ না করলে কাউন্সিলরশিপ/ভোটাধিকার থাকবে না। দেশের অন্যতম শীর্ষ ফেডারেশন হয়ে বাফুফের গঠনতন্ত্রে সেই ধারা নেই। গঠনতন্ত্রের ২১ ধারার সি ও ডি উপধারায় বলা হয়েছে, শুধু প্রতি জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজন করে ডেলিগেট হবেন।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা সব খেলা পরিচালনা করে আসছিল। ২০০৭ সালের পর বাফুফে ফিফার নির্দেশনা দেখিয়ে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে আলাদা সংগঠন করে 'জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন' ও 'বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন'। এরপর থেকে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল আয়োজন করে না। জেলা-বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ওপরই মূলত দায়িত্ব ফুটবল আয়োজনের। জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আওতায় নেই ফলে সরকারি অর্থ অনুদান পায় না। বাফুফের অধীভুক্ত হলেও বাফুফেও আর্থিক সহায়তা দিতে পারে না। জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নেই নিজস্ব স্থাপনাও। জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা স্টেডিয়ামের দুই একটি কক্ষে কোনোরকম চলে আসছে এই অফিস।
জেলা-বিভাগে ফুটবল পরিচালনার জন্য বাফুফে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কয়েক লাখ টাকা করে দিয়েছিল। যদিও ফুটবলাঙ্গনের অনেকের ধারণা, সেই অর্থ ২০২০ সালের নির্বাচন সামনে রেখেই দেওয়া হয়েছিল। এর আগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর কাদের জেলা ফুটবল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় বেশ কয়েক জেলায় দুই-এক বছর লিগ হয়েছিল। এরপর বাফুফে সভাপতির সঙ্গে মনোমালিন্যে মঞ্জুর কাদের আর উদ্যোগ নেননি। বাফুফের কাছে মঞ্জুর কাদেরের এখনো অর্ধ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। মাস দুয়েক আগে বাফুফেই একটি তালিকা করেছে গত পাঁচ-ছয় বছরে কোন জেলায় ফুটবল লিগ হয়েছে। ২০১৮-২৪ পর্যন্ত সেই তালিকায় প্রতি বছর লিগ হয়েছে এমন একটি জেলাও নেই। যদিও মাঝে করোনা মহামারি ছিল। নিয়মিত জেলা আয়োজনের মধ্যে রয়েছে শুধু সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। নীলফামারী ও নরসিংদী বাফুফের নিয়মিত লিগের তালিকায় না থাকলেও এই দুই জেলার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিশ্চিত করেছেন তারা নিয়মিত আয়োজন করেন। বাফুফের তথ্য অনুযায়ী ছয় বছরে মাত্র একটি লিগ আয়োজন করেছে মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ। গাজীপুর সেটাও করেনি। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে ৬ বছরে ২-৩ বার করেছে অধিকাংশ।
জেলা পর্যায়ে লিগ আয়োজন হয় না। আবার ফেডারেশন সব জেলা নিয়েও কোনো টুর্নামেন্ট করে না। এরপরও সবাই ভোটার। আশি-নব্বইয়ের দশকে শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী কাপ অত্যন্ত জমজমাট হতো। এখন আর বাফুফে জাতীয় পর্যায়ে সেই রকম আয়োজন করে না। কাজী সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে বাফুফে সভাপতি হওয়ার পরের বছর সব জেলা নিয়ে ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ করেছিলেন। সেটা কিছুটা সাড়া ফেললেও পরবর্তীতে আর ধারাবাহিকতা ছিল না।
জেলা-বিভাগের দিকে বাফুফের মনোযোগ নেই। শুধু ভোটের সময় তাদের কদর বাড়ে।