ভারত সফরের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ। তপ্ত রোদে প্রতিদিন চলছে অনুশীলন। পাকিস্তান সিরিজ জিতে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বেশ তুঙ্গে। মিশন এবার ভারত। আসন্ন টেস্ট সিরিজের জন্য বৃহস্পতিবার ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
চমক হিসেবে টেস্ট দলে প্রথমবার জায়গা পেয়েছেন জাকের আলী অনিক। তবে রাখা হয়নি শরিফুলকে। দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম। দেশের অন্যতম সেরা এই পেসারকে দলে না রাখার পেছনে মূল কারণ চোট। পাকিস্তান সিরিজে কুঁচকির চোটে পড়েছিলেন তিনি। ফলে খেলতে পারেননি দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে।
ধারণা করা হচ্ছিল, মিরপুরে চলমান অনুশীলন ক্যাম্পে পুরোপুরি সেরে উঠবেন শরিফুল। দলের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করছেন তিনি। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি। আর সপ্তাহখানেক লাগবে ফিট হতে। যে কারণে তাকে নিয়ে ঝুঁকি নেয়নি বিসিবি।
জানা গেছে, টেস্ট সিরিজে না খেললেও তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে খেলবেন শরিফুল। এর মাঝে সেরে উঠবেন বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। টেস্ট সিরিজ শেষ হলে ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তিনি।
এ সম্পর্কে বিসিবি নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেছেন, 'শরিফুল এখনো তার ইনজুরি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাকে নিয়ে আমরা কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না।'
এই সিরিজে একটিই পরিবর্তন আনা হয়েছে। পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গা নিয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলি অনিক। কুঁচকির চোটে অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টেস্টেও খেলেননি শরিফুল। ভারতের বিপক্ষেও কি একই কারণে নেই?
উত্তরে নির্বাচক হান্নান সরকার বলেন, 'শরিফুলকে আসলে শতভাগ ফিট বলা যাবে না। (পাকিস্তানে) দ্বিতীয় টেস্টেই ও আনফিট ছিল। যে কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ছিল না। তারপর সেই প্রক্রিয়ায় ওকে ফলো-আপে রাখা হয়েছে। ফিজিও-ট্রেনাররা তার দেখভাল করছেন। তাকে টেস্টের জন্য শতভাগ ফিট বলব না। কারণ টেস্টে ১৫-২০ ওভার বোলিং দরকার হতে পারে। সামনে আমাদের টি২০ খেলাও আছে। ওই সংস্করণেও শরিফুল আমাদের
গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার।'
'সেই জায়গা থেকে ও যেহেতু শতভাগ ফিট নয়, তাই আমরা ঝুঁকির জায়গায় যেতে যাচ্ছি না। কারণ আমাদের টেস্ট দলে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো বেশ কয়েকজন তৈরি করতে পেরেছি। যারা ফিট আছে। তাই আমরা শরিফুলকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইনি। আশা করি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে গেলে সে টি২০ দলে আসবে।'
বাংলাদেশের একাদশে খেলেন আট ব্যাটার। এরপর নেওয়া হয়েছে আরও একজনকে। পেসারের বদলে ব্যাটসম্যান কেন? এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছিল হান্নানের কাছে। উত্তরে প্রতিপক্ষ ও উইকেটের কথা বলেছেন তিনি।
হান্নান বলেন, 'জাকের আলি অনিকের বিষয়টা... আমরা একটা জিনিস মাথায় রেখেছি, কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ। সেই জায়গা থেকে আমরা পাকিস্তানে ৫ জন পেসার নিয়ে গিয়েছিলাম। এবার আমরা একজন পেসার কমিয়েছি। ওই জায়গায় একজন ব্যাটসম্যান বাড়িয়েছি, মিডল-অর্ডার স্পেশালিস্ট। আমাদের টিম কম্বিনেশনে মনে হয় মিডল-অর্ডারে একটা বিকল্প বাড়ান দরকার, কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ বিবেচনায়। তাই ব্যাটসম্যান বাড়িয়েছি।'
পাকিস্তান 'এ' দলের বিপক্ষে ১৭২ রানের ইনিংস খেলেন জাকের আলি। ওই পুরস্কার হিসেবেই তিনি সুযোগ পেলেন দলে। তবে হান্নান বলছেন, ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও জাকের পরীক্ষিত পারফর্মার।
তিনি বলেন, 'আমাদের সবগুলো পরিকল্পনায় (শাহাদাত হোসেন) দীপু ছিল। একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন, দীপু যে ম্যাচগুলো খেলেছে তখন সাকিব বা মুশফিকের কেউ একজন সবসময় ছিল না। কেউ একজন অনুপস্থিত ছিল, তখন ম্যাচগুলোতে দীপু সুযোগ পেয়েছে এবং খারাপ-ভালো মিলিয়েই খেলেছে। আমি বলব না খুব ভালো খেলেছে বা খুব খারাপ খেলেছে।'
'সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সটা আমরা এদিকে বিবেচনায় নিয়েছি। দীপু অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে, পাকিস্তান গিয়েছে। দুইটা করে চার দিনের ম্যাচ খেলেছে। খুব ছন্দে নেই। একজন ক্রিকেটার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে যাবে, তার ছন্দটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গা থেকে দীপু আমাদের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার। এনসিএল শুরু হচ্ছে, সে সেটার জন্য তৈরি হচ্ছে। দীপু খুব কাছ থেকেই আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।'
জাকেরর ঘরোয়া পারফরম্যান্সের কথা জানিয়ে হান্নান বলেন, 'পাশাপাশি জাকেরের যে বিষয়টা, জাকের কিন্তু... তার রেকর্ড যদি দেখেন এনসিএল, বিসিএল, লঙ্গার ভার্শনে রেকর্ডগুলো যদি দেখেন, একটা আইডিয়া হয়তো পেয়ে যাবেন যে সে লঙ্গার ভার্শনের জন্য খুব কার্যকর ক্রিকেটার হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত চোটের কারণে হয়তো আরও আগে অভিষেক বা সুযোগ থাকলেও হয়তো হয়নি বা দলে আসার সুযোগ থাকার পরও পারেনি।'
ভারত সফরের উদ্দেশে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চেন্নাইয়ে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর কানপুরে।