পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পর আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ও তিন টি২০'র সিরিজ খেলতে আগামী রোববার দেশ ছাড়বে নাজমুল হোসেন শান্তরা। তার আগে মিরপুর শেরেবাংলার মাঠে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। অনুশীলনের এক ফাঁকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন উইকেটকিপার ব্যাটার লিটন দাস।
দুই যুগের টেস্ট ইতিহাসে সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন পাকিস্তান সিরিজ হারানো। পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবল-ধোলাই করবে বাংলাদেশ, সেটি ভাবনার বাইরে ছিল। অসম্ভবকে সম্ভব করে চারদিকে প্রশংসা ভাসছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
পাকিস্তানকে সিরিজ হারানোর পেছনে লিটন দাসের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষত, দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং যখন খাদের কিনারায়, দলকে টেনে তোলেন লিটন। তার ১৩৮ রানের ইনিংসে দল পায় এগিয়ে যাওয়ার রসদ। সেই লিটনই মনে করেন, পাকিস্তান সিরিজ এখন অতীত হয়ে গেছে। মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার এমনটিই জানান তিনি।
লিটন বলেন, 'আমরা পাকিস্তানে খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয় এটা অতীত হয়ে গেছে। এটা নিয়ে কথা না বললে ভালো হয়। পাকিস্তান থেকে আমরা কিছুটা আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে যখন তাদের মাটিতে খেলব, তারা সবসময় ভালো দল। আমি বলব না, খুব চ্যালেঞ্জিং হবে না, আবার খুব সহজও হবে না। ভারতের চেনা পরিবেশ,র্ যাংঙ্কিংয়েও ওপরে। সিরিজটা চ্যালেঞ্জিং হবে।'
চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ দল। মিরপুরে কঠোর অনুশীলনে ঝরাচ্ছে ঘাম। সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার, আত্মবিশ্বাস, সেটি পুরো দলের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। কোনো একটি সিরিজের আগে, নির্দিষ্ট করে বললে ভারতের মতো দলের বিপক্ষে খেলতে যাওয়ার আগে এতটা প্রত্যয় দেখা যায়নি বাংলাদেশের মধ্যে। লিটন যতই অতীত বলুন পাকিস্তান সিরিজকে, সেখান থেকে পাওয়া অদম্য মানসিকতাই সাহস জোগাবে বাংলাদেশকে।
ভারত সিরিজ নিয়ে লিটনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল দুই দলের ব্যাটিং গভীরতা সম্পর্কে। জবাবে টাইগারদের উইকেটকিপার এই ব্যাটার বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় দুই দলের ব্যাটিং গভীরতায় খুবই ভালো। দুই দল যখন খেলবে সাত-আটটা করে মেইন ব্যাটসম্যান থাকবে।'
সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে দারুণ করেছেন লিটন। জানালেন এখনই দায়িত্ব নেওয়ার সময়, 'না স্বাভাবিক আমি অলমোস্ট নয়-দশ বছর ক্রিকেট খেলছি। সো ওইটুকু অভিজ্ঞতা তো হয়েছে দায়িত্ব নেওয়ার, তো এখন না আর কবে সুযোগ পেলে। আমি বলছি যে দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। এই জিনিসটা এই না যে প্রতি ম্যাচের দায়িত্ব নিতে হবে আমাকে। আমি মানুষ আমার ভুল হতে পারে।'
উইকেট কিপিং নিয়ে দুই ক্রিকেটার তাহলে দুই মেরুতে চলে গেলেন। মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাশ। কিপিং নিয়ে মুশফিকুর রহিমের ভাবনা মোটামুটি সবারই জানা। কিপিং তার মনের ভেতর এমনভাবে গেঁথে গেছে, এটা তার কাছে ব্যাটিংয়েরই একটা প্রক্রিয়া। অথচ তারই সতীর্থ লিটন দাশের সরল স্বীকারোক্তি, কিপিং ব্যাটিংয়ে কখনো সাহায্য করে না।
২০০৫ সালে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় মুশফিকের। সে সময় বাংলাদেশের হয়ে উইকেটের পেছনে দাঁড়াতেন খালেদ মাসুদ পাইলট। ২০০৭ সালে পাইলটের অবসরের পর উইকেটকিপার হিসেবে মুশফিকের পথচলা শুরু হয়।
ব্যাটিংয়ে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠলেও মুশফিকের উইকেট কিপিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকবার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ ফেলা, রান আউট মিস করার কারণে তাকে এ দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। যদিও উইকেট কিপিং নিয়ে তার ভাবনা ছিল এরকম, 'কিপিং যেটা বলি আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করে। এমন নয় কিপিং করলে আমি প্রতি ম্যাচেই একশ' বা দুশ' করব। কিন্তু কিপিংটা একটা প্রক্রিয়া এবং আমি এই প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি বিশ্বাসী। আমার মনে হয় এটা অনেক সাহায্য করে।'
মুশফিকের থেকে অনেকটা 'জোর' করেই গস্নাভস নেওয়া হয়েছে। ব্যাটিংয়ে তাকে পুরো মনোযোগী রাখতেই এমনটা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। পরিসংখ্যান টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষেই কথা বলছে।
৯০ টেস্ট খেলা মুশফিক ৫৫ টেস্টে কিপিং করেছেন। যেখানে ১০৪ ইনিংসে রান করেছেন ৩৫১৫। ব্যাটিং গড় ৩৭.০০। যেখানে রয়েছে ৬ সেঞ্চুরি ও ১৬ ফিফটি। ক্যারিয়ারসেরা ২১৯ রান করেছেন উইকেট কিপিং করে। কিপিং ছাড়া ৩৫ টেস্টে ৬২ ইনিংসে মুফিকের রান ২৩৭৭। ব্যাটিং গড় ৪২.৪৪। রয়েছে ৫ সেঞ্চুরি, ১১ ফিফটি। এ সময়ও রয়েছে একটি ডাবল সেঞ্চুরি (২০৩*)। এ ছাড়া শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৭৫* এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯১ রান করেছেন।
লিটন এখন দলের উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। লম্বা সময় কিপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও করছেন সিদ্ধহস্তে। ৪৩ টেস্ট খেলা লিটন ৩২ টেস্ট খেলেছেন উইকেট কিপার হিসেবে। ৪০.৯৪ গড়ে ২০৮৮ রান করেছেন। ৪ সেঞ্চুরির তিনটিই কিপিং করে। ১৭ ফিফটির ১৪টিই এসেছে এ সময়। কিপিং নিয়ে তাই বেশ খোলামনে এই ক্রিকেটার জানিয়েছেন, কিপিংয়ে কেবল খেলার একটি অংশ হিসেবেই দেখছেন, 'কিপিং কখনো ব্যাটিংয়ে সাহায্য করে না। কিপিং একটা পার্ট। যদি ফিল্ডিং করি, তাহলে ফিল্ডিং যেভাবে করতে হয়, কিপিং জিনিসটাও একই।'
নিজের ব্যাটিং নিয়েও লিটন খোলামেলা কথা বলেছেন, 'আমি যে খুব অ্যাটাকিং খেলি, ব্যাপারটা তা নয়। আমার কাছে যেটা মনে হয় স্কোরিং জোনের বল, আমি ওইটাতে স্কোর করার চেষ্টা করি। আর অবশ্যই এখন যে কোনো ফরম্যাটে দেখবেন রান করাকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেয়। আপনি যদি লাস্ট গেমও চিন্তা করেন বা তার আগের গেমও চিন্তা করেন আমি একটা জায়গায় গিয়ে কিন্তু রান করতে পারছিলাম না।'