দর্শকে ঠাসা গ্যালারি ম্যাচজুড়ে তুমুল সমর্থন দিয়ে গেল ঘরের ছেলে টেইলর ফ্রিটসকে। পপ মেগাস্টার টেইলর সুইফট গলা ফাটালেন, রক তারকা জন বন জোভি উৎসাহ জোগালেন। কিন্তু ফ্রিটসের প্রতিপক্ষ যে এদিন ছিলেন অদম্য! ম্যাচজুড়ে অসাধারণ টেনিসের প্রদর্শনীতে আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের গ্যালারিকে হতাশ করে, গোটা যুক্তরাষ্ট্রের আশা পিষ্ট করে ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতলেন ইতালির ইয়ানিক সিনার।
টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ পারফর্ম করে আসা সিনার সেরাটা জমা রেখেছিলেন যেন ফাইনালের জন্যই। ফ্রিটসকে তিনি সেভাবে দাঁড়াতেই দেননি। রোববার রাতে প্রবল সমর্থন পাওয়া ঘরের ছেলেকে হারিয়ে দেন তিনি ৬-৩, ৬-৪, ৭-৫ গেমে। তার নাম খোদাই হয়ে যায় ইতিহাসেও। ইউএস ওপেন জয় করা প্রথম ইতালিয়ান সিনারই। আরেকটি অনন্য কীর্তিও তিনি গড়েছেন, যেখানে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন নিজ দেশের সীমানা। একই বছরে হার্ড কোর্টের দুটি গ্র্যান্ড স্স্নামজয়ী সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় এখন ২৩ বছর বয়সি এই তারকাই। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনও জিতেছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষ হতেই দুই হাত উঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে কিছুক্ষণ থাকেন সিনার। খুব খ্যাপাটে কিংবা বাঁধনহারা উদযাপন দেখা যায়নি। গ্যালারিতে গিয়ে সাপোর্ট স্টাফের সবাইকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে অবশ্য উপভাগ করেন মুহূর্তটি। তার সঙ্গিনী রুশ টেনিস তারকা আনা কালিনস্কেয়ার ঠোঁটে এঁকে দেন চুম্বনচিহ্ন। গোটা স্টেডিয়াম তখন তাকে অভিবাদন জানায়, 'ব্রাভো-ব্রাভো'-গর্জনে।
ফ্রিটস তখন কোর্টের পাশে চেয়ারে বসে হতাশায় ভেঙে পড়েন মাথায় হাত দিয়ে। তার হারে আরও দীর্ঘায়িত হলো যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাও। সেই ২০০৩ সালে অ্যান্ডি রডিকের ইউএস ওপেন জয়ের পর আর কোনো গ্র্যান্ড স্স্নাম জিততে পারেননি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পুরুষ খেলোয়াড়। হলো না এবারও। মেয়েদের ফাইনালে আরিয়ানা সাবালেঙ্কার কাছে জেসিকা পেগুলার হারের পর ছেলেদের ফাইনালে ফ্রিটসের এই পরাজয়ে ইউএস ওপেনের শেষটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হলো হতাশাময়।
বরাবরই দুর্দান্ত সার্ভ, কোর্টের গতিময় বিচরণ আর রকেট-গতির ফোরহ্যান্ডের জন্য পরিচিত সিনার। ফাইনাল তিনি বেইজলাইনে দারুণ শক্তিশালী পারফরম্যান্সও মেলে ধরেন। প্রথম গেমেই 'আনফোর্সড এরর' করা ফ্রিটস পরে চেষ্টা করেছিলেন ঘুরে দাঁড়াতে। কিন্তু সিনারের দাপটের সামনে টিকতে পারেননি।
কিন্তু ইউএস ওপেনের আগে আবার বড় ধাক্কা আসে তার জন্য। দুই দফা ডোপ টেস্টে উতরাতে ব্যর্থ হওয়ার পুরনো খবর প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে। এই টুর্নামেন্টে তার খেলা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে অবশ্য সেই দায় থেকে মুক্তি পান তিনি। টুর্নামেন্টের ট্রফি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বসে সিনার বললেন, 'প্রতিটি দিন আমরা চেষ্টা করেছি, ভালো করে অনুশীলন করেছি, এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও নিজেদের ওপর ভরসা রেখেছি, সবচেয়ে জরুরি যেটা। উপলব্ধি করতে পেরেছি, বিশেষ করে এই টুর্নামেন্টে যে, এই খেলায় মানসিক দিকটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার জন্য এই শিরোপা অনেক বড় কিছু, কারণ আমার ক্যারিয়ারের সবশেষ কিছুদিন খুব সহজ ছিল না। এই টুর্নামেন্টের আগের সময়টাও খুব ভালো ছিল না। কিন্তু এখানে এসে প্রতিটি ম্যাচের পর মনে হয়েছে যেন আরও পোক্ত হয়েছি। আত্মবিশ্বাসও ক্রমে বেড়েছে প্রতিদিন।' উল্টো প্রান্তে ছিলেন ফ্রিটস। ম্যাচ শেষে আক্ষেপে পুড়ছিলেন তিনি, 'এই মুহূর্তে অনেক কিছু নিয়েই আমি খুব হতাশ-কোর্টে যা কিছু করেছি, যেভাবে খেলেছি, কিছু শট যেভাবে মেরেছি- খুবই বাজে। আমি জানি, আমরা গোটা দেশ অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছি একজন চ্যাম্পিয়নকে পাওয়ার জন্য। আমেরিকান সমর্থকরা অপেক্ষা করছে লম্বা সময় ধরে। আমি জানি না- নিজের খেলায় খুবই বিপর্যস্ত আমি- মনে হচ্ছে যেন, জানি না আসলে- অনেক মানুষেরই মন ভেঙে দিয়েছি। দুঃখিত, এবার আমি পারলাম না। তবে কষ্ট করে যাব এবং আশা করি, পরের বার পারব।'