অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
দশম অধ্যায় পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই জীবজগৎ বৈচিত্র্যময়। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে প্রায় ৮৭ লক্ষ প্রজাতির জীব বাস করে, শুধু তাই নয় প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন জীব আবিষ্কৃত হচ্ছে। নানা ধরনের জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে জীবজগতে বৈচিত্র্য দেখা যায় আবার সকল জীব নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য একে অপরের উপর নিভরশীল। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই জীবজগতের অবদান অসীম। এসব জীবে রয়েছে নানা ধরনের ভিন্নতা, এদের গঠন ভিন্ন, আবাসস্থল ভিন্ন, কেউ উপকারী আবার কেউ অপকারী। এ কারণে জীবজগতের শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে আমাদের সুসংবদ্ধ ধারণা থাকা প্রযয়োজন। জীবের শ্রেণিবিন্যাস বিজ্ঞানীরা এই বিশাল সংখ্যক জীবদের শত শত বছর থেকে শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সঠিকভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা থাকলে তার সাহায্যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সহজে, স্বল্প পরিশ্রমে ও কম সময়ে পৃথিবীর সকল প্রজাতি সম্বন্ধে জানা যায়। নতুন প্রজাতি শনাক্ত করতেও শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জীবের ভেতর পারস্পরিক সম্পর্কের বিভিন্ন তথ্য এবং উপাত্ত পাওয়া যায় এবং ধীরে ধীরে তাদের মাঝে যে পরিবতন ঘটেছে বা ঘটছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একসময় ধারণা করা হতো পৃথিবীর জীবকুল উদ্ভিদ ও প্রাণী এই দুই রাজত্বে বিভক্ত। কিন্তু যতই বিজ্ঞানের উন্নতি হতে থাকে বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে অনুভব করতে শুরু করেন যে জীবজগতের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য শুধু উদ্ভিদ ও প্রাণী এই দুইটি রাজত্ব যথেষ্ট নয়। যেমন : ছত্রাক উদ্ভিদ থেকে যথেষ্ট ভিন্ন, এর মাঝে ক্লোরোফিল নেই এবং উদ্ভিদের মতো নিজের খাবার নিজে তৈরি করতে পারে না, তাই ছত্রাককে একটি আলাদা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হওয়ার পর অণুজীবের একটি বিশাল জগৎ আবিষ্কৃত হয় এবং বিজ্ঞানীরা কোষের গঠন সম্পর্কে জানতে পারেন। তাই এককোষী জীবের জন্য একটি ভিন্ন রাজ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এককোষী জীবদের মাঝেও কোষের গঠনের উপর নির্ভর করে দুইটি সুস্পষ্ট ভাগ রয়েছে। একটি প্রোক্যারিওট (জীবকোষে অগঠিত নিউক্লিয়াস) এবং অন্যটি ইউক্যারিওট (জীবকোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস)। সে কারণে প্রোক্যারিওট এককোষীদের জন্য মনেরা এবং ইউক্যারিওট এককোষীদের জন্য প্রোটিস্টা নামে দুইটি ভিন্ন রাজ্যত্বে ভাগ করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন মনেরা রাজ্যের প্রোক্যারিওট এককোষী প্রাণীদের মাঝে আর্কিব্যাক্টেরিয়া এবং ইউব্যাক্টেরিয়া নামে দুইটি সুস্পষ্ট বিভাজন আছে এবং তারা এক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই বর্তমানে মনেরার পরিবর্তে আর্কিব অ্যাক্টেরিয়া এবং ইউব্যাক্টেরিয়া নামে দুইটি ভিন্ন রাজ্যের কথা বলা হয়। কাজেই জীবজগতকে সব মিলিয়ে প্রাণী, উদ্ভিদ, ছত্রাক, প্রোটিস্টা, ইউব্যাক্টেরিয়া এবং আর্কিব্যাক্টেরিয়া এই ছয়টি রাজ্যে ভাগ করা হলে সকল জীবকে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিভুক্ত করা সম্ভব। জীবজগতের শ্রেণিবিভাগের জন্য নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করা হয়। ১. কোষের সংখ্যা (এককোষী নাকি বহুকোষী) ২. কোষের ধরন (প্রোক্যারিওটিক নাকি ইউক্যারিওটিক) ৩. পুষ্টির ধরন (স্বভোজী নাকি পরভোজী) একইসঙ্গে জিনেটিকসের অগ্রগতি হতে থাকে এবং জীবদের জিনেটিক গঠন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ইউকেরিয়া, ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কি এই তিনটি তিনটি ডোমেইন বা অধিজগতে ভাগ করা হয়। পাশের ছবিতে ছয়টি রাজ্য বিবর্তিত হযয়ে তিনটি ডোমেইনে কীভাবে বিভক্ত করা হযয়েছে সেটি দেখানো হয়েছে। নিচে ছয়টি রাজ্যের সংক্ষিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো। এখানে উলেস্নখ্য যে জীবজগৎ এত বৈচিত্র্যময় যে উপরে উলেস্নখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর মাঝে অনেক ব্যতিক্রম পাওয়া যায়। যেমন- পস্নাটিপাস নামে একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে যেটি ডিম পারে, ঘোস্ট পস্নান্ট নামে উদ্ভিদ আছে যেখানে ক্লোরোপস্নাস্ট নেই, কেল্প নামে প্রোটিস্টা আছে যেটি বিশাল এলাকাজুড়ে থাকে, সি শ্লাগ নামে প্রাণীর এক ধরনের প্রজাতি আছে যারা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে-ইত্যাদি। প্রাণী : এটি সর্ববৃহৎ রাজ্য, এখানে প্রায় ১০ লক্ষ প্রজাতি রয়েছে। এটি বহুকোষী, ইউক্যারিওটিক, চলতে সক্ষম, পরভোজী এবং যৌন প্রজনন দিয়ে বংশ বৃদ্ধি করে। উদ্ভিদ : উদ্ভিদের প্রায় ২.৫ লক্ষ প্রজাতি রযয়েছে। এটিও বহুকোষী, ইউক্যারিওটিক এবং স্বভোজী। উদ্ভিদকোষে ক্লোরোপস্নাস্ট রযয়েছে এবং সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের খাবার তৈরি করে এবং জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীদের খাদ্য সরবরাহ করে। শুধু তাই নয় উদ্ভিদ অক্সিজেন সৃষ্টি করে জীবজগৎকে বাঁচিয়ে রাখে। ছত্রাক : ছত্রাকের প্রায় ১.৫ লক্ষ প্রজাতি রয়েছে। এগুলো সাধারণত বহুকোষী, ইউক্যারিওটিক এবং পরভোজী জীব। পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে ছত্রাক পুষ্টিকর খাদ্য তৈরি করে পরিবেশ রক্ষা করে। প্রোটিস্টা : বেশির ভাগ প্রোটিস্টা এককোষী, ইউক্যারিওটিক এবং পরভোজী। প্রোটিস্টা প্রাণী সদৃশ, উদ্ভিদ সদৃশ কিংবা ছত্রাক সদৃশ হতে পারে। ইউব্যাক্টেরিয়া : ইউব্যাক্টেরিয়া প্রোক্যারিওট এককোষী এবং পরভোজী। এরা বাইনারি ফিশান বা অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে অযৌন প্রজনন করে থাকে। এরা মানুষকে রোগাক্রান্ত করতে পারে। আর্কিব্যাক্টেরিয়া : আর্কিব্যাক্টেরিয়া প্রোক্যারিওটক, এককোষী এবং আদিব্যাক্টেরিয়া। উষ্ণ প্রস্রবণ, সমুদ্রের গভীরে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ, অতি লবণাক্ত স্থান এরকম প্রতিকূল পরিবেশেও আর্কিব্যাক্টেরিয়া পাওয়া গেছে। এরা মানুষকে রোগাক্রান্ত করতে পারে না। যেহেতু এগুলো ব্যাকটেরিয়া থেকে অনেক ভিন্ন সেজন্য অনেক সময় এদের শুধু আর্কিযা বলা হয়। তোমরা সবাই জানো, উপরে উলেস্নখিত এই ছয়টি রাজ্য ছাড়াও অকোষীয় (হড়হপবষষঁষধৎ) অণুজীবের আরেকটি বড় জগৎ রয়েছে। জীবজগতের বাইরে জীব ও জড়ের মাঝামাঝি এই অণুজীবের একটি উদাহরণ হচ্ছে ভাইরাস। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়