বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন :শান্ত
প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
পাকিস্তানে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বুধবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ দলের এই বহরে আছেন ১৫ জন, নেই সাকিব আল হাসান। ছাত্র অভু্যত্থানে গার্মেন্টকর্মী রুবেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত এ ক্রিকেটার বিসিবির অনাপত্তিপত্র নিয়ে যাচ্ছেন কাউন্টি খেলতে। দেশে আসার পর ফুল দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তদের বরণ করে নেন বিসিবি পরিচালকরা।
পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর তো উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েই এসেছেন শান্ত ও দলের অন্যরা। ঐতিহাসিক এই সিরিজ জয়ের পর দেশে ফিরে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, তার মতে এটিই এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সাফল্য।
এবারের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্টে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের। পাকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে জয় ছিল না কোনো সংস্করণেই। এবার শুধু প্রথমবার টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়েই ক্ষান্তি দেয়নি শান্তর দল, পরের টেস্ট জিতে সিরিজও জয় করেছে। টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশের ২৪ বছরের পথচলায় দেশের বাইরে টেস্ট
সিরিজ জয়ের নজির ছিল এতদিন একটিই।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ
দলের বিপক্ষে এসেছিল সেই জয়।
এবারের অর্জনের ওজন যে কত বেশি, সেটি ফুটে উঠল শান্তর কথায়, 'আমার কাছে তো মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা অর্জনগুলোর একটি।'
আরও সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাওয়ার পর অধিনায়কের উত্তর, 'বেস্ট, বেস্ট, আমার মনে হয়, সবচেয়ে বড় অর্জন এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের। এটা শুধু আমার একার ব্যক্তিগত কথা নয়, দলের সবাই এটা বিশ্বাস করে। খুবই ভালো লাগছে।'
সিরিজ জয়ের পর উদযাপন কেমন হয়েছে, সেটিও কিছুটা শোনালেন অধিনায়ক, 'এরকম জয়ের পর তো উদযাপন বিশেষ কিছুই থাকে। ড্রেসিং রুমে সবাই উদযাপন করেছে। সবাই হাসিখুশি ছিল। হোটেলে যাওয়ার পরও আমরা উদযাপন করেছি। পুরো সময়টাই অনেক উপভোগ করেছি।'
প্রথম টেস্ট জয়ের পর ও পরে সিরিজ জয়ের পর শান্তসহ দলের সবাই বলেছেন, এবারের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল দারুণ প্রস্তুতির। টি-২০ বিশ্বকাপে যখন ব্যস্ত ছিল দল, তখন অন্য ক্রিকেটারদের নিয়ে স্থানীয় কোচরা নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন বিশেষায়িত ক্যাম্পে। মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুমিনুল হক, নাহিদ রানাদের পারফরম্যান্সে সেটির প্রতিফলন পড়েছে। সিরিজ শুরুর আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যখন দেশে অনুশীলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল বারবার, তখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশ দলকে সুযোগ করে দেয় আগেভাগেই সেখানে গিয়ে বাড়তি অনুশীলন করার।
দেশে ফিরেও শান্ত বললেন, প্রস্তুতির পথ ধরেই এমন সাফল্যের ঠিকানায় তারা পৌঁছতে পেরেছেন, 'এই সিরিজটি খুবই ভালো গিয়েছে। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, সফরে যাওয়ার আগে এবং ওখানে যাওয়ার পর, দলের প্রত্যেকের মানসিকতা, স্কিল নিয়ে চিন্তাভাবনা, সব মিলিয়ে খুব ভালো প্রস্তুতি
ছিল এবং প্রত্যেকের ইচ্ছা ছিল যেন আমরা
খেলায় জিততে পারি। আমরা পাকিস্তানে তিন
\হদিন আগে গিয়েছিলাম, এটা আমাদেরকে
বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।'
'টেস্ট ক্রিকেটে জেতার জন্য প্রতিটি সেশন ভালো খেলা প্রয়োজন। যদিও অনেক সময় একটি-দুটি সেশন এদিক-সেদিক হলে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে। তবে কাজটা কঠিন। দলের সবাই অনেক কষ্ট করেছে। কোচিং স্টাফ অনেক কষ্ট করেছেন, সঠিক পরিকল্পনা আমাদের দিয়েছেন। সবাই দলের জন্য খেলেছে ও পরিকল্পনার বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে।'
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রসঙ্গও এলো। বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ একাধিকবার বলেছেন, হাথুরুসিংহেকে কোচের দায়িত্বে রেখে দেওয়ার কোনো কারণ তিনি দেখেন না। যদিও সিদ্ধান্ত বোর্ডের সবাই মিলেই নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে কোচের অবস্থান বেশ নড়বড়ে বলে মনে হচ্ছিল কদিন আগেও।
তার কোচিংয়ে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থ বাংলাদেশ এ বছর টি২০ বিশ্বকাপেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। বিশেষ করে, শেষ ম্যাচে সেমিফাইনালের হাতছানি থাকলেও সেই চেষ্টা না করার জন্য কোচ-অধিনায়কের কৌশল প্রবল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তখন। বিশ্বকাপের আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে দেশের মাঠে টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশড হয়েছিলেন শান্তরা। তবে পাকিস্তান সফরের অভাবনীয় সাফল্যের পর হাওয়া আবার কোচের অনুকূলে বইছে খানিকটা।
পাকিস্তানে সিরিজ জয়ের পেছনে কোচের বড় কৃতিত্ব দেখছেন অধিনায়ক শান্তও। ড্রেসিং রুমের আবহ দারুণ ছিল বলে জানালেন তিনি, 'খুবই ভালো (বোঝাপড়া), কোচের সঙ্গে ক্রিকেটাররা খুবই পরিষ্কার এবং খুবই সাপোর্টিভ ছিলেন উনি। প্রতিটি ক্রিকেটারকে উপযুক্ত পরিকল্পনা দিয়েছেন এবং ড্রেসিং রুমের পরিবেশ খুবই দারুণ ছিল। যে ক্রিকেটার পারফর্ম করেছে, যে করেনি, সবাই সবার পাশে ছিল। বিশেষ করে, প্রতিটি কোচই ক্রিকেটারদের পাশে ছিল ভালো সময়ে ও খারাপ সময়ে। ড্রেসিং রুমে কোচের ভূমিকাটা দারুণ
\হছিল এই সময়ে।'
এই জয়ের সাফল্যে খুব বেশি দিন বুঁদ হয়ে থাকার সুযোগ নেই। ভারত সফর কড়া নাড়ছে দুয়ারে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাই টেস্ট দিয়ে শুরু হবে দুই টেস্ট ও তিন টি২০'র সফর।
ভারতের বিপক্ষেও কখনও টেস্ট জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তানজ সফরের সাফল্যকে সঙ্গী করে ভারতেও ভালো কিছুর আশায় অধিনায়ক, 'অবশ?্যই (ভারতে জয় পাওয়া সম্ভব কিনা)। এ রকম সিরিজ জিতলে আত্মবিশ্বাস প্রতে?্যকটা খেলোয়াড়ের মধ্যে থাকবে। দলের আত্মবিশ্বাসও ওপরের দিকে থাকবে। ভারত সিরিজ অবশ?্যই কঠিন একটি সিরিজ। এটার জন?্য আমাদের নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন যে দলের অবস্থা আছে। আমরা যদি আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি ভালো করা সম্ভব।'