শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বললেন সুয়ারেজ

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
লুইস সুয়ারেজ

আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উরুগুয়ের ফুটবল আইকন লুইস সুয়ারেজ। জানিয়েছেন, শুক্রবার প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলেই বুটজোড়া তুলে রাখবেন তিনি। এ সময় ছলছল করছিল চোখজোড়া। ধরে এলো গলা। আবেগময় কণ্ঠে সুয়ারেজ বললেন, 'আমার দেশের জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলব শুক্রবার।'

খুব অপ্রত্যাশিত কিছু অবশ্য নয়। বরং যে কোনো সময় এরকম সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। সেই ঘোষণা সোমবার জানিয়েই দিলেন ৩৭ বছর বয়সি তারকা। কোপা আমেরিকার বাছাইয়ে শুক্রবার প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচেই দেশের জার্সিতে শেষবার মাঠে নামবেন তিনি।

দেশের জার্সি তুলে রাখার হাহাকার তার আছে। তবে বিদায়বেলায় মানসিক প্রশান্তিত্মও সঙ্গী সুয়ারেজের, 'অবসরের সঠিক সময় কোনটি, এটি জেনে বিদায় নেওয়ার চেয়ে গর্বের কিছু আর নেই এবং সৌভাগ্যবশত, আমার বিশ্বাস, জাতীয় দল থেকে এমন সময়ে অবসর নিচ্ছি, যখন আমি জানি যে, সরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। ৩৭ বছর বয়স হয়ে গেছে, পরের বিশ্বকাপ খেলা কঠিন আমার। এটা ভেবে স্বস্তি পাচ্ছি যে, চোটের কারণে বা পারফরম্যান্সের কারণে আমাকে অবসর নিতে হচ্ছে না।'

উরুগুয়ের ফুটবল আইকন আরও যোগ করেন, 'ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এটা শান্তির অনুভূতি যে, নিজে থেকেই সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত। সিদ্ধান্তটি অবশ্যই কঠিন। বিদায় বেলা কখনোই সহজ নয়। তবে এই মানসিক শান্তি আমার সঙ্গী যে, শেষ ম্যাচ পর্যন্ত নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি এবং ভেতরের বারুদ আস্তে আস্তে মিইয়ে আসেনি। এজন্যই আমার মনে হয়েছে, এখনই সময়।'

২০০৭ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল সুয়ারেজের উরুগুয়ে অধ্যায়। প্রায় দেড় যুগের পথচলায় দেশের হয়ে ১৪২ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। উরুগুয়ের সর্বোচ্চ ৬৯ গোলের রেকর্ড তার। অভিষেকের পর জাতীয় দলে নিয়মিত হতে খুব একটা সময় তার লাগেনি। ২০১০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের সেমিফাইনালে ওঠায় এই ফরোয়ার্ডের ছিল বড় অবদান। টুর্নামেন্টে তিনটি গোল করেছিলেন তিনি।

তবে এর চেয়েও বেশি সাড়া জাগিয়েছিলেন ঘানার বিপক্ষে গোল বাঁচিয়ে। কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচের শেষ সময়ে গোল লাইন থেকে হাত দিয়ে বল ফেরান তিনি। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সেই হ্যান্ডবল থেকে পাওয়া পেনাল্টি কাজে লাগাতে পারেনি ঘানা। পরে টাইব্রেকারে জিতে শেষ চারে পা রাখে উরুগুয়ে। সেই কান্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেক হলেও সুয়ারেস নিজে সবসময়ই বলে এসেছেন, দেশের জন্য তিনি সঠিক কাজটিই করেছেন। এখনো তিনি পেছন ফিরে তাকিয়ে বলেন, 'সেটি ছিল টুর্নামেন্টের সেরা সেভ।'

গৌরবময় ক্যারিয়ারে সবমিলিয়ে চারটি বিশ্বকাপ ও পাঁচটি কোপা আমেরিকা খেলেছেন সুয়ারেজ। ২০১০ বিশ্বকাপের সাফল্যের পথ ধরে ২০১১ কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। চার গোল করে ও দুটি গোলে সহায়তা করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান সুয়ারেজ। লিভারপুল, বার্সেলোনা, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো দলের হয়ে ক্লাব ফুটবল মাতানো সুয়ারেজের কাছে ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন ২০১১ কোপা আমেরিকা জয়।

২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির কিয়েলিনিকে কামড় বসিয়ে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সুয়ারেজের অভিষেক ২০০৭ সালে। তার পর নানা কারণে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার অবদানে উরুগুয়ে ২০১১ সালে কোপা আমেরিকা ঘরে তুলেছে। তিনি বলেন, 'ক্যারিয়ারে অনেক শিরোপা জিততে পেরে আমি সৌভাগ্যবান। তবে কোপা আমেরিকার শিরোপার সঙ্গে দুনিয়ার কিছু বদল করতে রাজি নই। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমার ক্যারিয়ারের সুন্দরতম মুহূর্ত ছিল ২০১১ কোপা আমেরিকার ট্রফি জয় করা। অনেক কিছুই জিতেছি, কিন্তু এটা কোনো কিছুর বিনিময়েই বদল করব না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে