টেস্টে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে ভারত সিরিজের আশা দেখালেন শান্ত
প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রথম টেস্টই এনে দিয়েছে ইতিহাসগড়া জয়। কিন্তু এবার যা হলো তা হয়তো অনেকেই ভাবেননি। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকেই ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ। যার ফলে আরও একটি সফলতা যোগ হলো অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর। ব্যাট হাতে যদিও সিরিজটা ভালো যায়নি তার। কিন্তু নেতৃত্বে দেখিয়েছেন নিপুণতা। যা মুগ্ধ করেছে প্রতিপক্ষের সমর্থকদেরও।
পাকিস্তান মিশন সফল হওয়ার পর শান্ত এখন চোখ রাখছেন ভারত সিরিজের দিকে। চলতি মাসেই দুটি টেস্ট ও তিনটি টি২০ খেলতে ভারত সফর করবে টাইগাররা। সেখানেও অবিশ্বাস্য কিছু করার আশা দেখালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে শান্ত বলেন, 'পরবর্তী সিরিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই জয় আমাদের প্রচুর আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। মুশফিক ও সাকিবের কাছে প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে এবং সেটা ভারত সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ। এমন কন্ডিশনে মিরাজ যেভাবে বল করে ৫ উইকেট নিল তা খুবই অসাধারণ। আশা করি ভারতের বিপক্ষেও সে একই কাজ করবে।'
পাকিস্তান সিরিজে দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন পেসাররা। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সবগুলো উইকেটই গিয়েছে পেসারদের দখলে। তাদের প্রশংসায় শান্ত বলেন, 'এই জয়ের মানেটা বিশাল। এর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি সত্যিই খুশি। আমরা এখানে জয়ের খোঁজে ছিলাম এবং যেভাবে সবাই নিজেদের কাজ করল তাতে আমি খুবই খুশি। আমাদের পেসারদের বোলিং নীতি খুবই অসাধারণ ছিল এবং এই কারণেই আমরা এই ফল পেয়েছি। সবাই নিজেদের প্রতি সৎ থেকেছে এবং তারা জিততে চেয়েছে। আমি আশা করি, এটা বজায় থাকবে। সাদমান প্রথম টেস্টে যেভাবে ব্যাটিং করেছে তা দুর্দান্ত। এমনকি জাকিরও ইতিবাচকতা নিয়ে ব্যাট করেছে এবং আমাদের মোমেন্টাম এনে দিয়েছে। সবাই অবদান রেখেছে এই জয়ে, বিশেষ করে একাদশে না থাকা সেই চার খেলোয়াড় যারা সুযোগ পায়নি। ফিল্ডিংয়ে দলকে খুবই দারুণ সহায়তা করেছে তারা। আশা করি, এই সংস্কৃতিটা বজায় থাকবে।'
ব্যর্থতার পথ ধরেই একসময় সাফল্যের ঠিকানা ধরা দেয়। পরাজয়ের ধারা একসময় বদলে যায় জয়ের প্রবাহে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে কখনোই কোনো টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে এটা শুনে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, এই ধারা এবার বদলে দিতে চান তারা। কথা রেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কথা রেখেছে তার দল। শুধু টেস্ট জয় নয়, ইতিহাস গড়েছেন তারা সিরিজ জিতে।
সিরিজ শুরু হওয়ার আগে সিরিজ জয়ের কথা বললে, শান্ত নিজেও বিশ্বাস করতেন কি না, কে জানে! জয়ের পর তার খুশিরও তাই যেন সীমা নেই। মনের অবস্থা বোঝানোর মতো কোনো উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এবারের সিরিজের আগে ১৩ টেস্টে বাংলাদেশের সম্বল ছিল স্রেফ একটি ড্র। হারতে হয়েছিল বাকি ১২ টেস্টেই। পাকিস্তানের মাঠের তাদের বিপক্ষে জয় ছিল কোনো সংস্করণেই। এবার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে জিতেই তাই একটা ইতিহাস গড়া হয়ে যায় শান্তদের। এরপর চ্যালেঞ্জে ছিল ইতিহাসের নতুন সীমানায় পা রাখার। দেশে-বিদেশে আগেও এমন হয়েছে, প্রথম টেস্টে স্মরণীয় জয়ের পর প্রত্যাশায় টইটম্বুর বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে পরের টেস্টে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে স্মরণীয় সেই জয়ের পর ক্রাইস্টচার্চে হারতে হয়েছে বাজেভাবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই গত বছর সিলেটে জয়ের পর হারতে হয়েছে মিরপুরে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৭ সালে মিরপুরে জয়ের পর পরাজয় এসেছে চট্টগ্রামে।
তবে এবার ভেনু্য যেমন রয়ে গেছে একই, ফলও রয়ে গেছে তেমনই। বাংলাদেশের আরও একটি জয় এবং ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা।
ম্যাচের পর সেই উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল শান্তর কণ্ঠে। দলের সবাইকে জয়ের কৃতিত্ব দিলেন অধিনায়ক, 'এটি আমাদের কাছে অনেক কিছু, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সত্যিই খুব খুশি আমরা। এখানে আসার আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল জয়। সবাই যেভাবে নিজেদের কাজটা করেছে, তাতে খুবই খুশি আমি। সবাই অবদান রেখেছে এই সিরিজে। দলীয় পারফরম্যান্সে এই সাফল্য এসেছে। যারা খেলার সুযোগ পায়নি, তারাও মাঠের বাইরে অনেক পরিশ্রম করেছে। আমরা সবসময় তাদের কথাই বলি যারা রান করে বা উইকেট নেয়। কিন্তু সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জয় এসেছে।'
ম্যাচের চতুর্থ দিনে সোমবার তরুণ দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদের আগুনে বোলিংয়ে উজ্জ্বল হয় বাংলাদেশের স্বপ্ন। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা দুই পেসার গুঁড়িয়ে দেন পাকিস্তানের ব্যাটিং। তাদের প্রশংসা করতে গিয়ে অধিনায়ক তুলে ধরলেন মাঠের বাইরে তাদের পরিশ্রমের কথা, শানালেন গোটা দলের জয়ের তাড়নার কথা, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের 'ওয়ার্ক এথিক।' সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে কাজ করেছে তারা, সেটির ফল পেয়েছে। সবাই নিজের প্রতি সৎ থেকে কাজ করেছে। জিততে মরিয়া ছিল সবাই। সেটিই দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আশা করি এটা ধরে রাখতে পারব আমরা।'
সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেয়েছিল মাহমুদুল হাসান জয়ের চোটে। কিন্তু সুযোগ পেয়ে প্রথম টেস্টে দারুণ ব্যাট করে জয়ের ভিত গড়ে দেন সাদমান ইসলাম। আরেক ওপেনার জাকির হাসান গোটা সিরিজে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও শেষ ইনিংসে তার ক্যামিও দলকে জোগায় রান তাড়ার সাহস। তাদের কথাও আলাদা করে বললেন শান্ত, 'জয়ের খানিকটা চোট ছিল বলে খেলতে পারেনি। কিন্তু সাদমান যেভাবে ব্যাট করেছে, বিশেষ করে প্রথম টেস্টে ৯৩ রানের ইনিংসটি ছিল দুর্দান্ত। জাকির সোমবার যেভাবে ৬-৭ ওভারে ব্যাট করেছে, মোমেন্টাম আমাদের পক্ষে চলে এসেছে। ওদের কাছ থেকে আমরা এমন কিছুই চাই।'