রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের দুই যুগের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ হারিয়েছে পাকিস্তানকে। সেটিও ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। বাংলাদেশের চোখ এখন দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে। যেটি শুরু হবে আজ শুক্রবার থেকে।
প্রথম টেস্টে দারুণ জয়ে সিরিজ জয়ের জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে টাইগারদের সামনে। কোনো মতে হার এড়াতে পারলেই বাজিমাত। কিন্তু রক্ষণাত্মক কোনো পরিকল্পনা করতে চায় না তারা। আক্রমণাত্মক পরিকল্পনায় দ্বিতীয় টেস্ট জিতে নেওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামার ইঙ্গিত দিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের খুব কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বাংলাদেশ দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে চমৎকার মানসিকতা। শেষ টেস্টেও তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ম্যাচের আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
ঘরের মাঠে খেললেও প্রথম টেস্টে নিজেদের কোনো পরিকল্পনাই কাজে লাগেনি পাকিস্তানের। উল্টো বাংলাদেশই যেন কন্ডিশনের পুরো ফায়দা তুলে নিয়েছে। দ্বিতীয় টেস্ট একই মাঠে হওয়ায় টাইগারদের আত্মবিশ্বাস এখন আরও উঁচুতে। এই টেস্টে কেমন মানসিকতায় খেলবেন তা জানতে চাইলে কোচ হাথুরুসিংহে বলেন, 'আসলে আমরা সবসময় আক্রমণাত্মক পরিকল্পনায়ই যাব।'
এরপর নিজেদের এমন পরিকল্পনার কারণ ব্যাখ্যা করে আরও বলেন, 'কন্ডিশনের ওপর অনেক সময় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসে। প্রথম ম্যাচ থেকে আমাদের প্রস্তুতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা নিজেদের শক্তির জায়গা, সীমাবদ্ধতা জানি। প্রতিপক্ষের শক্তি এবং সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলোও জানা আছে আমাদের। পিচ, কন্ডিশন সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা আমাদের কৌশলের ব্যাপারে চিন্তা করে থাকি।'
এর মধ্যেই নিজেদের একাদশে পরিবর্তন আনবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। স্পিনার আবরার আহমেদকে দলে নেওয়া হয়েছে। বিশ্রামে গেছেন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। অন্যদিকে প্রথম টেস্ট জিতে নিলেও নিজেদের একাদশে পরিবর্তন আনার সম্ভাবনার কথা জানান টাইগার কোচ।
মূলত আবহাওয়ার কারণেই এই পরিবর্তন আসতে পারে জানিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, 'দলের মোরাল অনেক উঁচুতে আছে। কারণ অবশ্যই পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়া সহজ কোনো কাজ নয়। তারা অনেক ভালো দল। এখনও আমরা দ্বিতীয় ম্যাচে অনেক লড়াই আশা করছি। কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে, পিচ দেখে আমরা দলে পরিবর্তন আনতেও পারি। কারণ আমরা এখনও পিচ দেখতে পারিনি। আবহাওয়ায় কিছুটা তফাত আছে আগের ম্যাচ থেকে।'
দ্বিতীয় টেস্টেও ব্যাটারদের কাছ থেকে বিশেষ
করে ওপেনারদের কাছ থেকে ভালো কিছু
প্রত্যাশা করছেন এই কোচ, 'গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, শুরুতে ভালো জুটি গড়া। (প্রথম ইনিংসের প্রথম) ১২ ওভারে আমাদের ওপেনাররা অল্প সময় হলেও ভালো ব্যাটিং করেছে। যা তৃতীয় দিন সকালে আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। এরপর মুমিনুল ও সাদমান ভালো একটি জুটি গড়ল ৯০ রানের। মুশফিক, লিটন, মিরাজরা সেটি
ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে।'
'হাথুরুসিংহেকে কোচ হিসেবে রাখার কারণ দেখি না।' বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হওয়ার ঠিক আগেই এক সাক্ষাৎকারে এমনটা বলেছিলেন ফারুক আহমেদ। সভাপতি হয়েও আগের অবস্থানেই অনড় থাকার কথাও জানান। ফলে পাকিস্তান সিরিজই হতে পারে এই লঙ্কান কোচের শেষ সিরিজ। তবে এর আগে বিসিবি কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চান চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
মাঠে প্রথম টেস্ট ১০ উইকেটে জিতে সিরিজে এগিয়ে আছে টাইগাররা। যার কৃতিত্ব অনেকটাই কোচ হাথুরুসিংহের। তবে এই সাফল্যের পরও বিদায় নিতে হতে পারে তাকে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে বিষয়টি। এই সিরিজই যে তার শেষ হতে পারে, বিসিবির দেওয়া ইঙ্গিতের বিষয়টি তুলে ধরলে হাথুরুসিংহে বলেন, 'আমি বুঝতে পারছি যে, নেতৃত্বে কিছু নতুন মুখ এসেছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারছি। তবে আমি (বাংলাদেশে গিয়ে) তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগের অপেক্ষায় আছি।'
আপাতত দলের প্রস্তুতিতেই নিজের ফোকাস রাখছেন বলে জানান এই লঙ্কান কোচ, 'আমার কাজ হলো, দলকে সর্বোচ্চ ভালোভাবে প্রস্তুত করা। গত কয়েক মাসে আমরা যে কঠোর পরিশ্রম করেছি, সামনের ম্যাচের জন্যও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা একই রকম মনোযোগ রেখেছি।'
হাথুরুর বিপক্ষে অনেক অভিযোগই রয়েছে। সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনের ছত্রছায়ায় দলে প্রায় একক কর্তৃত্ব চালিয়েছেন। অনেক সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঝামেলায় তাদের অবসর নিতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির কারণও মানা হয় তাকেই।
আর এই সব কিছুর সাক্ষীও বর্তমান সভাপতি ফারুক। বিসিবিতে একসময় প্রধান নির্বাচক
হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের জুনে বিতর্কিত দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নির্বাচক-প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে পদত্যাগ করেছিলেন সাবেক
এই অধিনায়ক। অভিযোগ ছিল এই প্রক্রিয়ার জনকই ছিলেন হাথুরু।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুই দলের কেউই অনুশীলন করতে পারেনি। প্রথম ম্যাচেও বৃষ্টির
জন্য প্রথম দিনের খেলা বেশি হয়নি। যদিও বাকি চার দিন বৃষ্টি কোনো বাধা দেয়নি। তবে এবারও দ্বিতীয় টেস্টের আগে বৃষ্টির শঙ্কা। দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামার আগে শেষবারের মতো ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল দুই দলেরই। তবে বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার জন্য শেষ দিনের অনুশীলন ভেসে গেছে।
গত বুধবার অবশ্য দুই দলই অনুশীলন করেছে। নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে দুই দলের ব্যাটসম্যান ও বোলাররা। আলাদা করে কোচিং স্টাফের সদস্যদের সঙ্গে কাজ করেছে পুরো বোলিং ইউনিট।
শরিফুল-নাহিদ রানারা ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। সঙ্গে নিজের লাইন-লেংথ ঝালাই করেছেন হাসান মাহমুদও। স্পিনে সাকিবের সঙ্গে দেখা গেছে তাইজুল ইসলামকে। যদিও তার একাদশে থাকা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।