'এই জয় জুলাইয়ে শহীদ ও বন্যার্তদের জন্য'

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বুধবার আনফা কমপেস্নক্সে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোল করায় ১০ নম্বর জার্সিধারী মিরাজুল ইসলামকে ঘিরে বাংলাদেশের ফুটবলারদের উচ্ছ্বাস -বাফুফে
শেষের বাঁশি বাজতেই একপ্রান্তে শুরু হলো নোভা-আসিফদের বিজয়োৎসব। অন্যপ্রান্তে দেখা গেল হেরে কান্নায় ভেঙে পড়া নেপালের খেলোয়াড়দের সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত মিরাজুল ইসলাম। এরপর শিরোপা জয়ের প্রতিক্রিয়ায় কোচ, খেলোয়াড়দের মুখে উঠে এলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের কথা, চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মানুষের প্রসঙ্গও। ললিতপুরের আনফা কমপেস্নক্সে বুধবার সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিকদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বয়সভিত্তিক এই ক্যাটাগরিতে সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভাসল দল। তারা সবাই এই আনন্দ, অর্জন উৎসর্গ করলেন গত জুলাই ও অগাস্টের গণআন্দোলনে শহীদদের উদ্দেশ্যে। দুই গোল করে ও রাব্বী হোসেন রাহুলের গোলে অবদান রাখা মিরাজুল যেমন বললেন, তারা নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য খেলেছেন। এই তরুণ ফরোয়ার্ড হেরে যাওয়া নেপালের প্রশংসাও করতে ভোলেননি। 'আলহামদুলিলস্নাহ, সবকিছুর জন্য আলস্নাহ সাহায্য করেছেন, নইলে পারতাম না। নেপাল ভালো খেলেছে, নেপাল দলেও অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে, কিন্তু ভাগ্য ওদের পক্ষে ছিল না। আমাদের পক্ষে ছিল। সত্য কথা বলতে, এখানে আমাদের প্রথম থেকে লক্ষ্য ছিল ফাইনালে খেলা। আমাদের দেশে এখন খারাপ অবস্থা, অনেক কিছু হয়েছে, বন্যা চলছে, এই পুরো খেলাটা আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য খেলেছি। নিজের জন্য আমরা খেলিনি। দেশের মানুষের জন্য খেলেছি। ফুটবল যেন এগিয়ে যায় এজন্য খেলেছি।' রাব্বীর কণ্ঠে থাকল গ্রম্নপপর্বে নেপালের বিপক্ষে হারের মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার তৃপ্তি। উঠে এলো দেশের সাম্প্রতিক প্রসঙ্গও। 'নেপালের কাছে গ্রম্নপ পর্বে আমরা ২-১ গোলে হেরেছিলাম। এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক ফাইনালে জিততে হবে। সেই নিবেদন ও মনোযোগ আমাদের ছিল। স্টেডিয়ামে পরিবেশ, সমর্থক সবকিছুই দারুণ ছিল। আমরা খুব উপভোগ করেছি। এই উপভোগ্য পরিবেশের মধ্যে সেরাটা দিতে পেরেছি, এ কারণে জিততে পেরেছি। আমাদের দেশের অবস্থা এখন ভালো নয়। বন্যার্ত যারা আছেন এবং গত জুলাই মাসে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদেরকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করি এবং তাদের জন্য এই ট্রফিটা উৎসর্গ করলাম।' কোচ মারুফুল হকের কণ্ঠে ম্যাচ পরিকল্পনার পাশাপাশি উঠে এলো আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের কথা। বন্যায় ক্ষুধা, তৃষ্ণায় দুঃসময় দিন কাটানো দেশবাসীর কথাও। এই শিরোপা নতুন বাংলাদেশ গড়তে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেও মনে করেন বাংলাদেশ কোচ। 'আজকের ম্যাচের আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ধীরলয়ে খেলার। কেননা, গত পরশুই আমরা একটা ম্যাচ খেলেছিলাম (ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল), নেপাল দুই দিন সময় পেয়েছিল বিশ্রামের জন্য। ভেবেছিলাম, শুরুতে তেড়েফুঁড়ে খেলতে যাওয়াটা ছেলেদের জন্য চাপের হয়ে যাবে। নেপাল আসলেই ভালো দল, মেধাবী খেলোয়াড় আছে, কিন্তু দেখলাম তারা চাপ অনুভব করছে। তখন ছেলেদের বললাম, যদি তোমরা সহজাত খেলতে পার, পাস-মুভ ধারাবাহিকভাবে করে যাও (ফল আসবে)।' 'প্রথমত আমি এই ট্রফি উৎসর্গ করছি গত মাস এবং এ মাসে নতুন বাংলাদেশের জন্য যে নায়কেরা জীবন দিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যে। গত মাসে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে) আমরা অনেক নায়ককে হারিয়েছি। এরপর গত কিছুদিন ধরে ভীষণ বন্যা চলছে। অনেক পরিবার খাবার, পানির জন্য ভুগছে। সরকার চেষ্টা করছে (পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের)। আমি মনে করি, এই জয় নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।' শিরোপা জেতায় যুব ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ফাইনালের পর নিজের ফেসবুকে তিনি এ অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন। তরুণ এই ক্রীড়া উপদেষ্টা অভিনন্দন বার্তায় লিখেছেন,'সাফ অনূর্ধ্ব-২০ মেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪ এর শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ, ভবিষ্যৎ কান্ডারীদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।' বুধবার কাঠমান্ডুর আনফা কমপেস্নক্সে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ ৪-১ গোলে হারিয়েছে নেপালকে। এই প্রথম বাংলাদেশ জিতলো এই টুর্নামেন্টের শিরোপা। গ্রম্নপপর্বে বাংলাদেশ ২-১ গোলে হেরেছিল নেপালের কাছে। ফাইনালে জয়ের মাধ্যমে হিমালয়ের দেশটির বিপক্ষে এই টুর্নামেন্টে কখনো জিততে না পারার আক্ষেপও দূর হয়েছে লাল-সবুজদের।