সময় ছিল খুবই কম। কিন্তু কখনো কখনো নিজেকে মেলে ধরতে তো একটি মুহূর্তই যথেষ্ট! এন্দ্রিক দেখালেন সেটিই। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অভিষেকে শেষ সময়ে মাঠে নেমেও দারুণ এক গোল করে ঝলক দেখালেন নিজের প্রতিভার। ব্রাজিলের আলোচিত এই তরুণ প্রতিভার পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত রিয়াল মাদ্রিদ কোচ।
লা লিগায় রোববার রিয়াল ভাইয়াদলিদের বিপক্ষে ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে মাঠে নামেন এন্দ্রিক। বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারা কিলিয়ান এমবাপেকে তুলে নিয়ে ব্রাজিলিয়ান বিস্ময় বালককে নামান কোচ কার্লো আনচেলত্তি। রিয়াল মাদ্রিদ তখন ম্যাচে ১-০তে এগিয়ে। বিবর্ণ প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে গোল করে দলকে এগিয়ে নন ফেদে ভালভের্দে। এন্দ্রিক মাঠে নামার একটু পর নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করে রিয়ালের জয় একরকম নিশ্চিত করে দেন বদলি নামা ব্রাহিম দিয়াস।
তবে স্রেফ দিয়াসের গোলে দলের উদযাপনে সঙ্গী হয়েই থেমে থাকেনি এন্দ্রিকের অভিষেক। নিজেও এনে দেন উলস্নাসের উপলক্ষ। যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে গোলটি করেন তিনি। বক্সের একটু বাইরে দিয়াসের পাস থেকে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারের মাঝগলে ঢুকে যান বক্সের ভেতর। এরপর সামনে আসা ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে আচমকা জোরাল শটে পরাস্ত করেন গোলকিপারকে। যে জায়গা থেকে তিনি শট নেন, ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে লক্ষ্যভেদের জায়গা খুব একটা ছিল না তার। কিন্তু ছোট্ট সেই ফাঁক কাজে লাগান ১৮ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড। তার প্রতিভা নিয়ে আলোচনা তো আগেই হয়েছে অনেক। ম্যাচ শেষে আনচেলত্তি বললেন, এই গোলেই নিজের সামর্থ্য মেলে ধরেছেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ।
'তাকে খুবই ভালো মনে হচ্ছে। তার সম্ভাবনা তো অফুরান। আজকের গোলটিতেই সে নিজের মান সবটুকু তুলে ধরেছে। তার নিয়ন্ত্রণ দারুণ। খুব ভালো শট নিতে পারে। পেনাল্টি-বক্স ফরোয়ার্ড সে। ছোট জায়গাতে সে খুব, খুবই বিপজ্জনক।'
বেশ কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে লড়াই করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর এন্দ্রিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় রিয়াল মাদ্রিদ। তার বয়স ১৮ পূর্ণ হওয়ার পর গত মাসে ছয় বছরের চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার যাত্রা শুরু হয় ইউরোপের সফলতম ক্লাবে। রিয়াল মাদ্রিদের আকাশ এমনিতেই তারা ঝলমলে। এবার এমবাপে ও এন্দ্রিকরা যোগ হওয়ায় সেই ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে আরও। তারকায় ঠাসা একটি দলের একাদশ বাছাই করা যে কতটা কঠিন, সেটা উঠে এলো কোচ আনচেলত্তির কথায়।
'একাদশ সাজানো সবসময়ই জটিল ব্যাপার। এটা আমাকে বিচলিত করে বটে, বেশ ঝামেলায় পড়তে হয় প্রায়ই। তবে এটাই আমার দায়িত্ব। ম্যাচ শুরুর একাদশ তো আমাকেই বাছাই করতে হয়।'
বদলি নেমে এই ম্যাচে দারুণ খেলেছেন দিয়াস ও এন্দ্রিক। গত মৌসুমেও বেশির ভাগ ম্যাচে বদলি নেমে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন দিয়াস। জুড বেলিংহ্যাম চোটে থাকায় এই ম্যাচে শুরুর একাদশে জায়গা পান আর্দা গিলের। তবে এমনিতে তিনিও মূলত বদলি হিসেবেই নামেন। রিয়ালের স্কোয়াডে এরকম তরুণ ও অভিজ্ঞ, সব ধরনের ফুটবলারই আছে যথেষ্ট। কোচ তাদের কাজে লাগাতে চান। বিশেষ করে মাদ্রিদে এখন আবহাওয়া যতটা কঠিন, তাতে ফুটবলারদের
কাছ থেকে আরও বেশি সাড়া আশা করছেন আনচেলত্তি।
'মৌসুমের এই সময়টায় যতটা প্রচন্ড গরম থাকে, ফুটবলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়তে বাধ্য। কোনো ফুটবলার ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাই তার উচিত, নিজে থেকেই হাত তোলা এবং মাঠ ছাড়তে চাওয়া। কিন্তু আমার ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে এমন কিছু দেখিনি। নিজে থেকে কেউ মাঠ ছাড়তে চায় না।'
'কাজেই কোচ হিসেবে আমারই দায়িত্ব ক্লান্ত ফুটবলারদের বের করা। কিন্তু ফুটবলারদেরই দায়িত্ব বেশি নেওয়া উচিত এখানে। এটা আমি প্রকাশ্যে বলছি, কারণ ওদের আলাদা করেও এটা বলেছি আমি। আমার স্কোয়াডে তো রসদের
অভাব নেই।'