শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে নেপালকে পেল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সাফ অনূর্ধ্ব২০ টুর্নামেন্টের সেমি ফাইনালে সোমবার নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপেস্নক্সে ভারতের বিপক্ষে গোল করার পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস -বাফুফে

সাফ অনূর্ধ্ব ২০ টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রাথমিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে বাংলাদেশ। সোমবার নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপেস্নক্সে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লাল-সবুজরা। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র ছিল। আগামী ২৮ আগস্ট ফাইনাল। শিরোপা লড়াইয়ে যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। টুর্নামেন্টে এটি দ্বিতীয় দেখা বাংলাদেশ-নেপালের। গ্রম্নপ পর্বে নেপালের কাছে হার মেনেছিল বাংলাদেশ। ঢাকা ছাড়ার আগে বাংলাদেশের কোচ মারুফুল হক জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য ফাইনালে নাম লেখানো এরপর শিরোপা জেতা।

খেলার ধারার বিপরীতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের টানা আক্রমণের মুখে জমাট রক্ষণের সঙ্গে গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণও গড়লেন প্রবল প্রতিরোধ। কিন্তু চোট পেয়ে শ্রাবণ মাঠ ছাড়ার পরই গোল হজম করল বাংলাদেশ। ম্যাচের ভাগ্য গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে বদলি গোলরক্ষক আসিফ হোসেনের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। টাইব্রেকারের শুরুতেই আলো ছড়ান আসিফ; থাংলাংসুন গাঙ্গতের প্রথম শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আটকে দেন। এরপর চার শটে বাংলাদেশের পিয়াস আহমেদ নোভা, মইনুল ইসলাম মইন, শাকিল আহাদ তপু ও আশরাফুল হক আসিফ লক্ষ্যভেদ করেন। ভারতের তিনজন জালের দেখা পাওয়ার পর আকাশ তিরকে আসেন পঞ্চম ও শেষ শট নিতে। আসিফ তা ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।

বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতাটি এ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৮, ১৯ ও ২০ এই তিন ক্যাটাগরিতে হয়েছে। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-২০ ক্যাটাগরিতে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার তাদের হারিয়েই ফাইনালে উঠল দল।

শুরু থেকে রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণের ছকে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ভারত মেলে ধরে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা; তবে তাদের সব প্রচেষ্টাই মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশের রক্ষণে। পোস্টের নিচেও মেহেদী হাসান শ্রাবন ছিলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসী। ত্রয়োদশ মিনিটে সতীর্থের থ্রম্ন পাস ধরে গগমসার গয়ারির জোরালো শট কোনোমতে পা বাড়িয়ে আটকে দেন নেপাল ম্যাচে অভাবনীয় ভুলে গোল হজম করা শ্রাবণ।

ষোড়শ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া গয়ারির শট নেওয়ার আগেই নিখুঁত স্স্নাইডে ক্লিয়ার করেন কামাচাই মারমা। একটু পর আরেকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন শ্রাবণ। ২৫ মিনিটের পর থেকে বাংলাদেশ একটু উপরে উঠে খেলার চেষ্টা করতে থাকে। ৩৫তম মিনিটে পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এগিয়েও যায় দল। বাম দিক থেকে রাব্বি হোসেন রাহুলের জোরালো আড়াআড়ি ক্রস গোলরক্ষকের গস্নাভস ছুঁয়ে চলে যায় আসাদুল মোলস্নার পায়ে। নিখুঁত টোকায় জাল খুঁজে নেন এই তরুণ (১-০)।

দ্বিতীয়ার্ধে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে খেলার চেষ্টা করতে থাকে বাংলাদেশ। ৫০তম মিনিটে কয়েক সতীর্থের পা ঘুরে বল পান পিয়াস আহমেদ নোভা। এই ফরোয়ার্ডের শট ফেরান ভারত গোলরক্ষক। এরপরই একের পর এক আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় ভারত। মাংলেনথাং কিপজেনের বাঁ পায়ের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়ার পর ৫৪তম মিনিটে ভারতের হতাশা আরও বাড়ে। সতীর্থের লম্বা পাস ধরে শ্রাবণকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন করু সিং থিংগুজাম, কিন্তু তার দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা বেরিয়ে যায় বাইরে দিয়ে। এরপর কেলভিন সিংয়ের শটও যায় অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৬১তম মিনিটে থাংলাংসুন গাঙ্গতের দূরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট পোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়। চার মিনিট পর গোললাইন সেভে বাংলাদেশের ত্রাতা কামাচাই মারমা। গয়ারির চিপ পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা শ্রাবণকে ফাঁকি দিয়ে ছুটছিল জালের দিকে; গোলমুখ থেকে শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টায় ফেরান কামাচাই। গয়ারিকে আটকাতে এসেই তার সঙ্গে সংঘর্ষে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন শ্রাবন। বদলি নামেন আসিফ হোসেন। একটু পরই গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। বক্সের ভেতর থেকে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন রিকি মিতে হোবাম (১-১)। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কামাচাই মারমা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আসিফ বীরত্বে সেমি-ফাইনালের বৈতরণী পেরিয়ে ফাইনালের

মঞ্চে ওঠে বাংলাদেশ।

আগামী বুধবার শিরোপা লড়াইয়ে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। গ্রম্নপ পর্বের দেখায় শ্রীলংকার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের পর নেপালের কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল মারুফুল হকের দল। সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগও এখন নোভা-আসিফদের সামনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে