বাংলাদেশে বাস্তবতায় কোনো অর্জনে সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলতে পারা মানে দারুণ কিছু। মুশফিকুর রহিম তেমন কিছুই করলেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচসেরা হওয়ার রেকর্ড এখন মুশফিকের। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে এই তালিকায় সবার ওপরে ওঠেন মুশফিক। সাদা পোশাকে ম্যাচসেরা হলেন তিনি সপ্তমবার। ম্যাচ যদিও অনেক বেশি খেলেছেন তিনি। ৮৯ ম্যাচ খেলেছেন দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সাকিব ছয়বার ম্যাচসেরা হয়েছেন ৬৮ টেস্টে। ৬২ টেস্টে চারবার সেরা হয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল, তিনবার করে মোহাম্মদ আশরাফুল ও তামিম ইকবাল। দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশিবার সেরা হওয়ার ক্ষেত্রেও এখন এককভাবে শীর্ষে মুশফিক। তৃতীয়বার ম্যাচসেরা হলেন তিনি বিদেশের টেস্টে। তামিম ইকবাল হয়েছেন দুইবার, একবার করে সাকিব, আশরাফুল ইবাদত হোসেন চৌধুরি, জাভেদ ওমর বেলিম ও মাহমুদউলস্নাহ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে সেরায় অবশ্য সাকিবের ধারেকাছে নেই কেউ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৫ বার সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। তামিম সেরা হয়েছেন ২২ বার, মুশফিক ২১ বার, মাশরাফি বিন মর্তুজা ১২ বার। টেস্টে ২৩ বার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার বিশ্বরেকর্ড কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রেকর্ডটি শচীন টেন্ডুলকারের (৭৬ বার)। ম্যাচসেরার প্রাইজমানি বন্যার্তদের দিলেন মুশফিক স্মরণকালের নজিরবিহীন বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। ১১ জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার্তদের সহায়তায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছেন। সেই তালিকায় যুক্ত হলেন মুশফিকুর রহিম। পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ দলের ঐতিহাসিক জয়ে ম্যাচসেরা হিসেবে পাওয়া পুরস্কারের অর্থ বন্যাদুর্গতদের দেওয়ার ঘোষণা দিলেন তিনি। রোববার রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ দিনে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস ১৪৬ রানেই আটকে দেন নাজমুল ইসলাম শান্তর নেতৃত্বাধীন দল। প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের বড় লিড থাকায় টাইগারদের জন্য জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় স্রেফ ৩০ রানের। সেটা তাড়ায় নেমে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে অনায়াসে খেলা শেষ করেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পুঁজি ৫৬৫ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন অভিজ্ঞ মুশফিক। টেস্ট ক্যারিয়ারের একাদশ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ১৯১ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলেন তিনি। অল্পের জন্য পাননি ডাবল সেঞ্চুরি। প্রায় ৯ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ৩৪১ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ২২ চার ও ১ ছক্কা। মূলত তার অবদানে ভালো লিড পাওয়া নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। তাই সফরকারীদের স্মরণীয় জয়ের পর অনুমিতভাবে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি। পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুশফিক দেন ম্যাচসেরার প্রাইজমানি বন্যার্তদের দেওয়ার ঘোষণা, 'আপনারা জানেন যে বাংলাদেশে বন্যা চলছে। আমি এই পুরস্কারের অর্থ দিতে চাই দেশের বন্যাদুর্গতদের জন্য। আমি দেশে থাকা সব মানুষকে অনুরোধ করতে চাই, তারা যেন আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য কাজে সাহায্য করেন।' পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪ টেস্টে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে সব মিলিয়ে ২১ আন্তর্জাতিক ম্যাচেও এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে নিজেদের মাটিতে এই প্রথম কোনো ম্যাচে ১০ উইকেটে হারল পাকিস্তান। ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেও আক্ষেপ নেই মুশফিকের মুশফিকুর রহিম ততক্ষণে দেড়শ পেরিয়ে হাঁটছেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরির পথে। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজ। সতর্ক চোখে খুব যত্ন নিয়ে একেকটি বল মোকাবিলা করছেন মুশফিক। সবাই তখন অপেক্ষায় মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির। তখনই ভুলটা করলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৯ রান দূরে মোহাম্মদ আলির বলে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে থামলেন মুশফিক। থামল ৫২২ মিনিট ও ৩৪১ বলের লড়াই। দিনশেষে মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি মিস করায় তার ভক্তরা আক্ষেপে পুড়লেও তিনি অবশ্য তৃপ্ত। নিজের ইনিংস নিয়ে ৩৭ বছর বয়সি এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'ভালো লাগছে। দলের জন্য অবদান রাখতে পারাটা দারুণ। সত্যি বলতে, মাইলফলক আমার জন্য কেবল একটি সংখ্যা। যতক্ষণ পর্যন্ত দলে অবদান রাখতে পারছি, বিশেষ করে সেঞ্চুরি করতে পারছি এবং সেটাকে বড় সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারছি, ম্যাচ শেষে সেটিই ম্যাচ জেতানো ইনিংস হতে পারে। আমার লক্ষ্য সব সময় এটিই থাকে।' মুশফিক আরও বলেন, '২০০-২৫০ এসব স্রেফ সংখ্যা। ক্রিজে লম্বা সময় কাটাতে পেরে ও সতীর্থ কয়েকজনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়তে পেরেই আমি খুশি।' নিজের সাফল্যের রহস্য নিয়ে মুশফিক বলেন, 'নিজের সঙ্গে সৎ থাকার চেষ্টা করি ও প্রতিটি দিন উন্নতির চেষ্টা করি। নিজের সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করি। এটিই এখনো পর্যন্ত আমার রহস্য। সত্যি বলতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় টিকতে হলে বা দেশের হয়ে ধারাবাহিকভাবে খেলতে হলে মাঠের ভেতরে ও বাইরে অনেক কাজ করতে হয়। খাদ্যাভ্যাসও এটার অংশ, জিমে ও মাঠে বাড়তি কাজ করতে হয়। কেউ সেটা দেখতে পারবে না। তবে নিজের কাজ করে যেতে হয়।'