বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্পোর্টস ইনস্টিটিউট তৈরির ঘোষণা উপদেষ্টা আসিফের

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে রোববার গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া। পাশে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দীন আহমেদ -সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রথম দিনে অফিসে এসে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এবার দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য আরও এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই ক্রীড়া উপদেষ্টা।

'সেন্টার অব এক্সিলেন্স' প্রতিপাদ্যে তৈরি হতে যাচ্ছে 'বাংলাদেশ স্পোর্টস ইনস্টিটিউট'। রোববার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই ঘোষণা দেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ বলেন, 'বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে আছি আমরা। যা এই দেশে প্রথম। খেলোয়াড়, কোচ এবং ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত সবার জন্য তা হবে এক বিশেষায়িত এক স্থান। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপলক্ষ্য এবং লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম।'

ক্রীড়া উপদেষ্টা আরও বলেন, 'জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রীড়াবিদদের হাইপারফরম্যান্স, ক্রীড়ায় সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জন, ক্রীড়াবিদদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্রীড়া কৌশল ও নেতৃত্বগুণের মানউন্নয়ন তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় গৌরব অর্জনের লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে 'সেন্টার অব এক্সিলেন্স' স্স্নোগানে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত হতে যাচ্ছে 'বাংলাদেশ স্পোর্টস ইনস্টিটিউট।'

এই স্পোর্টস ইনস্টিটিউট ক্রীড়াবিদ তৈরির চেয়ে তাদের মানোন্নয়নের জন্য কাজ করবে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্রীড়াবিদদের মান উন্নয়ন করা হবে। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাও থাকবে প্রতিষ্ঠানটিতে।

এই নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও উচ্চ ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্পোর্টস ইনস্টিটিউট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতনামা স্পোর্টস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে বিশেষায়িত স্পোর্টস সেবা ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে।'

স্পোর্টস ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেন, 'ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স ও চীনসহ উন্নত রাষ্ট্র স্পোর্টস ও সায়েন্সের মেলবন্ধনে যে ফলাফল ও সাফল্য তারা অর্জন করেছে তা দেশের মাটিতেও নিশ্চিত করাই হবে আমাদের এই ইনস্টিটিউটের অন্যতম লক্ষ্য।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ স্পোর্টস ইনস্টিটিউটের মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তিযোগ্য সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে- খেলোয়াড় ও অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স উন্নয়নে স্পোর্টস বায়োমেকানিক ইউনিট, স্পোর্টস সাইকোলোজিক্যাল ইউনিট, পারফরম্যান্স নিউট্রিশন ইউনিট, স্পোর্টস লিডারশিপ ইউনিটসহ স্পোর্টস ইনোভেশন ইউনিট।' 'হাই ইন্টেনসিটিভ গেমের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ও টিম পারফরম্যন্স উন্নয়নে স্পোর্টস পারফরম্যান্স ডাটা ইউনিট, স্পোর্টস মেডিসিন ইউনিট, হাই পারফরম্যান্স কেয়ার ইউনিট। ফিজিক্যাল কন্ডিশনাল ইউনিট, স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি ইউনিট এবং টিসু্য থেরাপি ইউনিট।'

ফেডারেশন ঢেলে সাজাতে সার্চ কমিটির ঘোষণা

বেশ কঠিন এক সময়েই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এসেছেন আসিফ মাহমুদ সজীব। এসেই তার সামনে ক্রীড়াঙ্গন পুনর্গঠনের বড় চ্যালেঞ্জ। ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন ফেডারেশনের শীর্ষ পদগুলোতে এতদিন ছিলেন রাজনৈতিক সব মুখ। ৫ আগস্টের পর থেকে এদের প্রায় সবাই আছেন আড়ালে। ফেডারেশন পুনর্গঠনের এই সময়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতির খবর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি নিয়েই বিগত কয়েকদিন বিসিবি প্রাঙ্গণে সরব ছিলেন সংগঠকরা। সেদিকে ইঙ্গিত করে ক্রীড়া উপদেষ্টার মন্তব্য, 'অবশ্যই আমরা এরই মধ্যে ক্রীড়াক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও অন্যায়ের অভিযোগগুলো রয়েছে এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনারা সেগুলো খুঁজে বের করে মিডিয়ায় প্রকাশ করছেন। আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়গুলোতে আমরা তদন্ত করব এবং যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আমি এরই মধ্যে বিসিবির সংশ্লিষ্ট এবং ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি।'

আসিফ মাহমুদের ভাষ্য, 'আমাদের প্রত্যেক ফেডারেশনের যে গঠনতন্ত্র আছে, সেগুলো (গঠনতন্ত্র) যেন গণতান্ত্রিক হয়, একনায়কতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে, সেগুলোও প্রভাবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।'

খেলাধুলাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার এজেন্ডা আছে উলেস্নখ করে আসিফ মাহমুদের মন্তব্য, 'আমরা একটা সার্চ কমিটি গঠন করে দেব, যারা প্রতিটি ফেডারেশনের বর্তমান অবস্থা দেখবে। যারা কাজ করছেন, যারা দায়িত্বশীল আছেন, তারা আছেন কি না (দায়িত্বে) এবং তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী, কিসের ওপর ভিত্তি করে সেখানে আছেন, সেগুলো নিয়ে তারা (সার্চ কমিটি) প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন।'

'যে খেলার সঙ্গে যিনি সংযুক্ত এবং কাজ করে আসছেন, তাদের দিয়েই ফেডারেশনগুলো ঢেলে সাজাব। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সর্বোচ্চ কমিয়ে আনার চেষ্টা করব।', যোগ করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।

নারী টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন মাইলফলক

বাংলাদেশের মাটিতে নারী টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে দোলাচল কাটছেই না। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) দেওয়া আইসিসির সময় শেষ হচ্ছে ২০ আগস্ট। ইতোমধ্যে একাধিক দেশ নারী ক্রিকেটের এই মেগা ইভেন্ট আয়োজনে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখন বিসিবির সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে কথা বলেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

আসিফ মাহমুদ বলেন, 'নারী টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারা আমাদের জন্য ভালো মাইলফলক হবে। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ একটা সংকটকালীন সময় পার করছে, আবার একই সঙ্গে যারা আমাদের মেহমান হয়ে আসবেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব। সবকিছু বিবেচনায় এটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই, এখন এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার।'

বিষয়টি নিয়ে আইসিসির সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকার কথা জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা আরও বলেন, 'ড. মুহাম্মদ ইউনূস (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) স্যার আছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। আইসিসির সঙ্গেও আমাদের আলোচনা চলমান আছে। তারপর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।'

সূচি অনুযায়ী আগামী ৩-২০ অক্টোবর বাংলাদেশের মাটিতে টি২০ বিশ্বকাপের আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যার জন্য আয়োজকদের হাতে আর মাত্র দেড় মাস বাকি। সে হিসেবে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে জটিলতার অবসান চায় আইসিসি। সংস্থাটি এমন কোনো দেশকে আয়োজক হিসেবে চায়, যাদের টাইম জোন বাংলাদেশের সঙ্গে মিল আছে এবং আবহাওয়া থাকবে খেলার উপযোগী। সেই বিবেচনায় প্রথমেই আরব আমিরাতের নাম আসে। আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) অধীনে রয়েছে বিশ্বমানের অবকাঠামো। তারা নিজেরাও এ ধরনের ইভেন্ট আয়োজনে বেশ আগ্রহী। এছাড়া জিম্বাবুয়ে এবং শ্রীলংকাও বিশ্বকাপ আয়োজনে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

বেশ কয়েকটি এজেন্ডা নিয়ে আগামী ২০ আগস্ট ক্রিকেট বোর্ডগুলোর সঙ্গে অনলাইন বৈঠকে বসবে আইসিসি। তারা চাচ্ছে সেই সময়ের মধ্যে যেন বিসিবি নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নতুন সরকার আগমনের পর নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে দাঁড়াতে শুরু করলেও, আলোচনা চলছে বিশ্বকাপ চলাকালে যেকোনো ঝুঁকি বিবেচনায় ভিন্ন দেশে আয়োজনের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে