গত বছরের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সময় ইনজুরিতে পড়েছিলেন এবাদত হোসেন। এরপর থেকেই মাঠে বাইরে রয়েছেন সিলেটের এই ডানহাতি পেসার। হাঁটুতে অপারেশন হওয়ার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে মাঠে ফিরেছেন, রানিং অনুশীলনও চালিয়ে যাচ্ছেন। বোলিং করতেও দেখা যাচ্ছে এই পেসারকে।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন এবাদত। জানালেন, 'এটা সত্যি কথা অনেক কষ্টের সময় ছিল। এটা মনে করতে চাইও না এখন। ওই সময়টা এমন ছিল, সবসময় একা একা লাগত। কারণ আমি খেলোয়াড় হিসেবে সবসময় মাঠে থাকব, খেলব; এক তো হচ্ছে এই কষ্ট। দ্বিতীয়ত আমি হাঁটতেই পারছি না। আমি একটু বাইরে যাব, কারও সঙ্গে দেখা করব কোনো সুযোগই ছিল না ওই সময়টাতে। এটা আসলে অনেক কষ্ট, সত্যি কথা এটা মনে করতে চাই না।'
বোলিংয়ের সময় আম্পায়ারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এবাদত হোসেনের ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে গেছে এক বছরের বেশি সময়। মাঠে ফেরার অপেক্ষা আর দীর্ঘ হতে দিতে চান না বাংলাদেশের গতিময় এই পেসার। আগামী মাসে ভারত সফরের টেস্ট সিরিজে খেলতে চান তিনি।
গত বছরের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আম্পায়ারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পিচের ওপর পড়ে যান এবাদত। প্রাথমিকভাবে বোঝা যায়নি তার চোটের তীব্রতা। মনে হচ্ছিল, কিছুদিন পরই ফিরতে পারবেন মাঠে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চোটের অবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরে গত বছর আগস্টে লন্ডনে হাঁটুর অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্টে (এসিএল) অস্ত্রোপচার হয় এবাদতের। ফলে গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি তিনি। বাইরে বসে দেখতে হয় চলতি বছরের টি২০ বিশ্বকাপও।
আশার কথা, গত মাসের শুরুর দিক থেকে বোলিংয়ে ফিরেছেন এবাদত। এখনো অবশ্য পুরোদমে ও পূর্ণ ছন্দে বোলিংয়ের অনুমতি পাননি। তবে সামনের সপ্তাহগুলোতে উন্নতির আশা ৩০ বছর বয়সি পেসারের। বুধবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে নিজের সবশেষ অবস্থা জানান এবাদত, 'আজকে একটু রানিং করলাম, ফিটনেসের কাজ করলাম। ব্যাটিং করেছি, বোলিং করে এলাম এখন। প্রায় এক-দেড় মাস ধরে বোলিং শুরু করেছি। বোলিংয়ের মাত্রা ৭০-৮০ ভাগ ছিল। এখনো তেমনই আছে। ট্রেইনার আমাকে একটা পরিকল্পনা দিয়েছেন, শেষ পর্যায়ে কী রকম বোলিং করতে হয়, কেমন ফিটনেস রাখতে হয়। সেটাই অনুসরণ করছি। বোলিংয়ের মাত্র এখনও ৮০ ভাগে আছে। আশা করছি, আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে যেন পুরো মাত্রায় বোলিং করতে পারি।'
আপাতত দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তান সফরে গেছে বাংলাদেশ। এরপর দেশে ফিরে দুই টেস্ট ও তিন টি২০ খেলতে ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে তাদের। পাকিস্তান সফর মিস করার পর ভারত সিরিজের দিকেই তাকিয়ে এবাদত, 'আমার লক্ষ্য হলো, যেন ভারতের সঙ্গে খেলতে পারি। ভারত সফরে যেহেতু দুটি টেস্ট ম্যাচ আছে। এটা আসলে নির্ভর করবে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে ফেরা (আমার জন্য) কেমন হবে। কতটুকু ইতিবাচক হবে। চেষ্টা করছি। এর আগে যদি টেস্ট ফিটনেসটা পেয়ে যাই... আমার মনে হয়, নিজেদের মধ্যে একটা চার দিনের ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে। ওখানে খেলার সুযোগ হলে, নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারব যে কতটুকু ফিট আছি টেস্ট খেলার জন্য। দেখা যাক, আশা আছে।'
২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপের পর আর ওই সংস্করণে খেলেননি ইবাদত। তাই ভারত সফরের টি২০ তার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম বলাই যায়। এ কারণেই হয়তো টেস্ট সিরিজ দিয়ে ফেরার কথা ভাবছেন গতিময় পেসার। টিম ম্যানেজমেন্টেরও ভাবনায় ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে ফেরানোর কথা। এমনটাই জানালেন এবাদত, 'এটা (টেস্ট দিয়ে ফেরার চ্যালেঞ্জ) নিয়েই ম্যানেজমেন্ট চিন্তা করছে যে, কোন সংস্করণ দিয়ে ফেরাটা আমার জন্য ভালো হবে। সেটাই বললাম, ভারত সফরের আগে যদি নিজেদের মধ্যে ৪ দিনের ম্যাচ খেলতে পারি, তাহলে আমি মূল্যায়ন করতে পারব কতটুকু ফিট আছি টেস্ট খেলার জন্য।'
চোটের ছিটকে যাওয়ার আগে পেস বিভাগে বাংলাদেশের বড় নির্ভরতা ছিলেন ইবাদত। বিশেষ করে ওয়ানডেতে মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিতই উইকেট এনে দেওয়ার কাজ করছিলেন তিনি। ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১২ ম্যাচে তিনি নেন ২১ উইকেট। একই সময়ে ১০ টেস্টে তার শিকার ৩১টি।
দীর্ঘ সময় পর মাঠে ফিরে সেই পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যেতে চান তিনি, 'স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু এক বছর ধরে বাইরে, আমার বোলিং ছন্দটা একটা বড় বিষয়। চেষ্টা করছি যেন, ছন্দটা... যেই মাত্রায় বোলিং করছি এখন, আমার খুব ভালো লাগছে, ছন্দটা খুঁজে পাচ্ছি। এটাই ইতিবাচক দিক। এই সময়ে আমি ব্যাটিং, ফিল্ডিং নিয়েও কাজ করছি। খুব ভালো লাগছে।'