বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক
পরিচালকদের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল বিসিবি
ওয়াদা করছি, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে ক্রিকেট বোর্ড, ফেডারেশনে কোথাও রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ করা হবে না। আমরা গত ১৭ বছরে যে শিক্ষা পেয়েছি, স্বৈরাচারী আচরণ দেখেছি, বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচার আসুক সেটা আমরা চাই না। এটার অন্যতম কারণ হলো, স্পোর্টস সাধারণ আপামর মানুষের একটি জায়গা। সেখানে দলমতের ভিত্তি আমি দেখি না।
প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপন করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এলোমেলো অবস্থা দেশের ক্রিকেটে। এবার বিসিবি সভাপতির পদত্যাগ এবং বোর্ডের সংস্কার চেয়ে মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের সামনে মানববন্ধন করেছে ওয়েলফেয়ার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপনের। কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশও বিসিবি কার্যালয়ে আসছেন না। এই সুযোগে গত কয়েকদিন ধরেই বিসিবিতে আসছেন বিএনপিপন্থি সংগঠক ও তাদের অনুসারীরা।
নাজমুল হাসান পাপনসহ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকদের পদত্যাগের দাবি নিয়ে মঙ্গলবার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে হাজির হন হাজারখানেক মানুষ। প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন শুরুর আগেই স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক। দুইদিনের মধ্যে সব পরিচালকের পদত্যাগ চান তিনি।
বিসিবির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু ও কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বক্তব্য রাখেন। নাজমুল হাসান পাপন, খালেদ মাহমুদ সুজন, জালাল ইউনুস, বিপিএল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ইসমাইল হায়দার মলিস্নক, বিসিবির পরিচালক ওবেদ রশীদ নিজাম বেশ কয়েকজন পরিচালকের ছবি হাতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চলছে পদত্যাগের হিড়িক। কেউ নিজে থেকেই পদত্যাগ করছেন, কেউ চাপের মুখে পদ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এবার ক্রিকেট বোর্ডের সব পরিচালকদের পদত্যাগ চাইলেন আমিনুলরা।
বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক আমিনুল হক তার দল ক্ষমতায় আসলে বিসিবিকে রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ না করার অঙ্গীকার করেন।
ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এসব নেতিবাচক কান্ড বন্ধ হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাব দেন আমিনুল। তিনি বলেন, 'ওয়াদা করছি, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে ক্রিকেট বোর্ড, ফেডারেশনে কোথাও রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ করা হবে না। আমরা গত ১৭ বছরে যে শিক্ষা পেয়েছি, স্বৈরাচারী আচরণ দেখেছি, বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচার আসুক সেটা আমরা চাই না। এটার অন্যতম কারণ হলো, স্পোর্টস সাধারণ আপামর মানুষের একটি জায়গা। সেখানে দলমতের ভিত্তি আমি দেখি না।'
'আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতিমুক্ত করতে পারি, দলীয়করণমুক্ত করতে পারি, বাংলাদেশের মাঠে যারা ক্রীড়া সংগঠক, তাদের নিয়ে প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশন, ক্রিকেট বোর্ড সাজাতে চাই। কোনো বিশেষ দলের কাউকে প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ আর হবে না। দেওয়া যাবে না। এটা আমি আজকে ওয়াদা করে গেলাম।'
ক্রিকেটসহ ক্রীড়াঙ্গনকে অতীতের দলীয়করণ থেকে বেরিয়ে আসতে আমিনুল তাগিদ দেন। তিনি বলেন, 'গত ১৭ বছর ধরে স্বৈরাচার সরকার স্পোর্টসে দলীয়করণ এবং রাজনীতিকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্পোর্টসকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আজকে বাংলাদেশের ছাত্র এবং জনতা গণঅভু্যত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা ও চাওয়া সারাদেশের স্পোর্টসে প্রত্যেকটি সেক্টরে পরিবর্তন অনতিবিলম্বে দরকার।'
'আমাদের দাবি হচ্ছে, ক্রিকেট বোর্ডে যারা পরিচালক রয়েছেন, অনতিবিলম্বে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যিনি ক্রীড়া উপদেষ্টা রয়েছেন, তার সঙ্গে বসে আলোচনা করে নতুন ভাবে একটি ফরমেট বানিয়ে আইসিসির যে নিয়ম রয়েছে, সেই নিয়মমাফিক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন গভর্নিং বডির দাবি করছি। সেই বডির মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।'
আমিনুল জানান, বিসিবি কার্যালয়ের ভেতরে তারা দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাউকে পাননি। ম্যানেজার পদে থাকা রাসেল নামের এক ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি গ্রাউন্ডস কমিটিতে ছিলেন। উত্তরা এলাকায় আর্মির কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা একজন ছিলেন।
আমিনুল আরও বলেন, 'আওয়ামী সরকারের যে উন্নয়নমূলক কাজগুলো হয়েছে সেখানে তারা ব্যাপক দুর্নীতির আঁকড়া তৈরি করে ফেলেছে এবং লুটপাট হচ্ছে। এগুলো এখন করা যাবে না, সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে এসব চলছে সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা যিনি আছেন, তার সঙ্গে আলোচনা করে পরিচালনা কমিটি পদত্যাগ করার পর নতুন ভাবে যে কমিটি দায়িত্ব নেবে, তাদের মাধ্যমে পরবর্তী উন্নয়নমূলক যে কাজগুলো আছে, সেগুলো পরিচালিত হবে।'