শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল স্পেন। ১০ মিনিটের মধ্যে তিন গোল করে চালকের আসনে বসে গেল তারা। তবে হাল ছাড়ল না স্বাগতিক ফ্রান্স। শেষ দিকে সমতা টেনে ম্যাচ টেনে নিল অতিরিক্ত সময়ে, সেখানে অবশ্য পেরে উঠল না তারা। শুক্রবার রাতে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ফরাসিদের ৫-৩ গোলে হারিয়ে প্যারিস অলিম্পিকে ছেলেদের ফুটবল ডিসিপিস্ননের সোনা জিতল স্প্যানিশরা। পূর্ণাঙ্গ সময়ের খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে বাজিমাত করে স্পেন। ১৯৯২ সালের পর অলিম্পিকের স্বর্ণ জিতল তারা। আগের দিন রাতে মিশরকে ৬-০ গোলে হারিয়ে ছেলেদের ফুটবলের এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছে মরক্কো।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অলিম্পিকে ছেলেদের ফুটবলে সোনা জিতল স্পেন। প্রথমবার জিতেছিল ১৯৯২ সালে। ২০২০ আসরসহ তিনবার ফাইনালে হেরে রুপা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। ফ্রান্সের দ্বিতীয় সোনা জয়ের অপেক্ষা বাড়ল আরও অন্তত চার বছর। তাদের একমাত্র সোনা এসেছিল ১৯৮৪ সালে। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে দুটি বড় সাফল্য পেল স্পেন। গত মাসে তারা ঘরে তোলে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। অলিম্পিকসে অবশ্য অংশ নেয় অনূর্ধ্ব-২৩ দল, বেশি বয়সি তিনজন খেলার সুযোগ পান। ফাইনালের প্রথমার্ধে স্পেনের হয়ে জোড়া গোল করেন বার্সেলোনার ২১ বছর বয়সি মিডফিল্ডার ফার্মিন লোপেস। অতিরিক্ত সময়ের দুটি গোলই করেন সের্হিও কামেয়ো। ৬ ম্যাচে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ গোলের পাশাপাশি একটি অ্যাসিস্ট করে দলের সাফল্যে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ফার্মিন।
ম্যাচের ১১ মিনিটে মিলোট স্বাগতিক ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন। বক্সের মধ্যে এক স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের দুর্বল ক্লিয়ারেন্সের সুযোগ নিয়ে ভুল করেননি তিনি। স্পেনের কিপার বলে হাত লাগালেও থামাতে পারেননি। পরের মিনিটে ওলিসে বক্সের মধ্যে খুঁজে পান মিলৈাটকে। ফরাসি গোলদাতা দ্রম্নত বল বাড়ান। সময়মতো বলে পা লাগাতে না পারায় স্বাগতিকরা এগিয়ে যেতে পারেনি। ফার্মিন লোপেস স্পেনকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখান। ১৮ মিনিটে বায়েনার চতুর পাশে বক্সের মধ্যে থেকে নিচু কোনাকোনি শটে জাল কাঁপান তিনি। সাত মিনিট পর নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান লোপেস।
ম্যাচের ২৮ মিনিটে বায়েনা চোখ-ধাঁধানো গোল করেন। ফ্রি কিক থেকে তার বাঁকানো শট ফরাসি কিপারকে অসহায় বানিয়ে জালে জড়ায়। ৪২ মিনিটে রেস্তেস পা বাড়িয়ে মিরান্দার শট ঠেকিয়ে স্পেনের ব্যবধান বাড়তে দেননি প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে স্পেন কিপার তেনাস ফিরিয়ে দেন মাতেতার হেড। তাতে ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্প্যানিশরা।
ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে যেন ছন্দ হারায় স্পেন। ৭৩ মিনিটে টেনাসের দারুণ সেভে রক্ষা পায় তারা। ছয় মিনিট পর ওলিসের ফ্রি কিকে বল পেয়ে গোল শোধ দেন আকলিওচে। নিস্তব্ধ ফরাসি দর্শকরা গর্জে ওঠে। ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিট পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। মিরান্ডার রাগবির মতো ট্যাকলে ফরাসি ফরোয়ার্ড কালিমুয়েন্দো বক্সের মধ্যে পড়ে যান। মাতেতা দায়িত্ব নেন এবং বাঁ দিক দিয়ে নিচু শটে জাল কাঁপান। ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও ৩-৩ এ সমতা, ফ্রান্সের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। বদলি খেলোয়াড় কামেলেস্না ১০০ মিনিটে স্পেনকে লিড এনে দেন। গোমেজের পাসে বক্সের মধ্যে থেকে গোলকিপারকে পরাস্ত করেন তিনি। নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে পার্ক দে প্রিন্সেসের দর্শকরা। কামেলেস্না আরেকবার জালে বল জড়িয়ে স্পেনের জয় সুনিশ্চিত করেন। শেষ অর্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে কিপার তেনাস বল থ্রো করেন। কামেলেস্না তার মার্কারকে ছাপিয়ে গোলকিপারকে পরাস্ত করেন।