অলিম্পিকে সোনা আর অধরা থাকল না নোভাক জোকোভিচের। টানা ৫ বারের চেষ্টায় নিজের শেষ অলিম্পিকে এসে জয় করলেন অলিম্পিকের সোনা। উন্মুক্ত যুগে টেনিসের সফলতম তারকা তিনি। নামের পাশে আছে ২৪ গ্র্যান্ডস্স্ন্যাম। কিন্তু অধরা ছিল অলিম্পিকের সর্বোচ্চ পদক। স্পেনের কার্লোস আলকারাজকে হারিয়ে সেই কীর্তিতেও নাম তুলেছেন জোকোভিচ।
রোববার টেনিসের ফাইনালে স্পেনের কার্লোস আলকারাজকে হারিয়ে দিলেন তিনি। সার্বিয়ার খেলোয়াড় জিতেছেন ৭-৬, ৭-৬ গেমে। দুটি সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। স্টেফি গ্রাফ, আন্দ্রে আগাসি, রাফায়েল নাদাল এবং রজার ফেদেরারের পর বিশ্বের পঞ্চম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে 'গোল্ডেন স্স্ন্যাম', অর্থাৎ চারটি গ্র্যান্ড স্স্ন্যামই একবার করে জেতার পাশাপাশি অলিম্পিকে সোনা জিতলেন।
দ্বিতীয় রাউন্ডে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে পেয়েছিলেন। রোলা গ্যারোতে নাদাল কিংবদন্তি। তাকেই হারিয়েছিলেন দাপট দেখিয়ে। কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে পড়েছিলেন গ্রিসের স্টেফানোস চিচিপাস। তাকেও খুব একটা পাত্তা দিলেন না জোকার।
জোকোভিচের সামনে ছিল শুধু একটাই বাধা। কার্লোস আলকারাজ। উইম্বলডনের ফাইনালে স্ট্রেট সেটে এই স্প্যানিশ তরুণের কাছেই হেরেছিলেন জোকো। সেই হারের এক মাসও পার হয়নি। তবে এবার আলকারাজ হার মানলেন। দুইবারই টাইব্রেকারে গিয়ে হারতে হলো জোকারের কাছে।
রোলাঁ গ্যারোর ফাইনালের মতোই ফাইনাল হয়েছে। হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রথম সেট গড়ায় ৯৪ মিনিট। প্রথম সেটে জোকোভিচ পাঁচটি এবং আলকারাজ আটটি ব্রেক পয়েন্ট পেয়েছিলেন। টাইব্রেকারে ৩-৩ অবস্থা থেকে টানা চারটি পয়েন্ট পেয়ে সেট নিজের করে নেন জোকোভিচ।
প্রথম সেটের তুলনায় দ্বিতীয় সেটে দুই খেলোয়াড়ের কাছে খুব বেশি সুযোগ আসেনি। তা সত্ত্বেও দুইজনের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতোই। টাইব্রেকারে প্রথম সেটের মতো একই দৃশ্য দেখা গেল দ্বিতীয় সেটেও। ২-২ থেকে ৬-২ করে দিলেন জোকোভিচ। ম্যাচ এবং অলিম্পিকের অধরা সোনাও এতে নিশ্চিত হলো তার। সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে জোকোভিচ বলেন, 'তর্কাতীতভাবে এটাই আমার অন্যতম সেরা সাফল্য। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে যা রয়েছে, প্রায় সবই জিতেছি। ডেভিস কাপও জিতেছি। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সে সার্বিয়ার হয়ে অলিম্পিকে খেলতে এসে সোনা জেতা আমার কাছে বিশেষ অনুভূতি। এখনো সেভাবে উচ্ছ্বাস শুরুই করিনি। পরের ৪৮ ঘণ্টায় আমার সামনে কী আসতে চলেছে, সেটা ভেবেই উত্তেজিত।'
সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্স্ন্যামের পর অলিম্পিকেও সোনা। তিনিই কি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়? জোকোভিচ উত্তরে বলেছেন, 'আমি জানি না। যা পেয়েছি এর জন্য গর্বিত। অসাধারণ লাগছে। আবেগ বাধ মানছে না। অত্যন্ত গর্বিত এবং খুশি। দেশের হয়ে প্রথম সোনার পদক জিততে পেরে খুশি।'
তার সংযোজন, 'সার্বিয়ার হয়ে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। আমি জানি, কার্লোস (আলকারাজ) আর রাফা (নাদাল) স্পেনের হয়ে খেলার জন্য গর্ববোধ করে। অ্যান্ডি (মারে) গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে খেলতে পেরে গর্বিত। ঠিক তেমনই সুইজারল্যান্ডের হয়ে রজার ফেদেরার। সোনা জেতার পর ওদের প্রত্যেকের আবেগ আপনারা দেখেছেন। আসলে এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।'
হেরেও স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বিত আলকারাজ। তিনি বলেন, 'যেভাবে হেরেছি, তা যন্ত্রণার তো বটেই। সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। নোভাক দারুণ খেলেছে। আমি হতাশ, তবে কোর্ট থেকে মাথা উঁচু করেই বেরোতে পারব। কারণ, স্পেনের হয়ে নিজের সেরাটা দিয়েছি।'