বাংলাদেশের আবারও হতাশার অলিম্পিক
প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
চার বছর পর পর আসে বিশ্ব অলিম্পিকের আসর। বাংলাদেশও অংশগ্রহণ করে। খরচ করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। কিন্তু পদক জেতা আর হয় না। ফিরে অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করে। ১৮ কোটি জনগণের দেশে একটি অলিম্পিক পদক জেতার মতো কোনো অ্যাথলেট এখনো জন্ম নিতে পারেনি। অথচ জনসংখ্যায় ও জিডিপিতে বাংলাদেশের থেকে অনেক পিছিয়ে থাকার পরও উগান্ডা অলিম্পিকে পদকশূন্য থাকেনি। বাংলাদেশের ১৮ কোটি আর উগান্ডার জনসংখ্যা ৫ কোটির মতো। বাংলাদেশের জিডিপি ১.৬২০ (উইকিপিডিয়া অনুযায়ী) ট্রিলিয়ন, সেখানে উগান্ডার জিডিপি ১৪৫.১৫৭ বিলিয়ন। উগান্ডা আগের চারটি স্বর্ণপদকের সঙ্গে এবার পেয়েছে একটি। এবার ১০ হাজার মিটার ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন জশুয়া চেপতেগেই। তিনি শুধু স্বর্ণ জিতেই থেমে থাকেননি। গড়েছেন নতুন অলিম্পিক রেকর্ডও। সময় নিয়েছেন ২৬.৪৩.১৪ সেকেন্ড। যেখানে আগের অলিম্পিক রেকর্ড ছিল ২৭ মিনিট ১.১৭ সেকেন্ড। এই ইভেন্টে বিশ্বরেকর্ডও তার। যেখানে তিনি সময় নিয়েছিলেন ২৬ মিনিট ১১ সেকেন্ড। এই ইভেন্টে তিনি ৩ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
প্যারিস অলিম্পিকের আসর এখন মাঝপথে। টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, ফুটবল এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ডিসিপিস্ননের পদক নিষ্পত্তি হবে আগামী কয়েকদিনের ভেতর। পুরো বিশ্ব যখন ব্যস্ত পদক হিসেবের লড়াইয়ে, তখন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা গতকাল রোববার প্যারিসের স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকাল থেকে দেশের বিমান ধরেছেন।
প্রথম ধাপে প্যারিস ছেড়েছেন শুটার রবিউল ইসলাম, শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু ও বিওএ উপমহাসচিব নজীব আহমেদ। প্যারিস ছাড়ার আগে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু হতাশাই প্রকাশ করেছেন, 'শেফ দ্য মিশন হিসেবে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে আমি হতাশ। আমাদের ক্রীড়াবিদরা তাদের নিজস্ব সেরা স্কোরই করতে পারেননি। সবমিলিয়ে এই অলিম্পিক আমাদের জন্য হতাশার।'
প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের পাঁচজন ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছেন। শুটার রবিউল, স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান, সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া খাতুন ওয়াইল্ড কার্ডে। একমাত্র আরচ্যার সাগর ইসলাম নিজ যোগ্যতায় সরাসরি খেলেছেন। তাই তার ওপর প্রত্যাশা একুট বেশি ছিল। তিনিও সেটা পূরণ করতে পারেননি বলে মন্তব্য শেফ দ্য মিশনের, 'আরচ্যার সাগরের ওপর আমাদের একটু প্রত্যাশা বেশিই ছিল। সে অন্তত আরও দুই-এক রাউন্ড খেলবে এমনটাই ভাবনা ছিল।র্ যাঙ্কিং রাউন্ডে পিছিয়ে পড়ায় নক-আউটের প্রথম পর্বেই অনেক বড় আরচ্যারের সঙ্গে পড়ায় আর এগোতে পারেননি। আমাদের আশাও শেষ হয়।'
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনেরও সেক্রেটারি। শুটার রবিউলও নিজের সেরা স্কোরের চেয়ে অনেক কম করেছেন অলিম্পিকে। তাই যারপরনাই হতাশ শেফ দ্য মিশন, 'শুটিং, অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতারে আমাদের পদক জেতা সম্ভব নয়। টাইমিং ও স্কোরিং উন্নতিই ছিল লক্ষ্য। একমাত্র সাঁতারু রাফি ছাড়া আর কেউই টাইমিংয়ে ভালো করেনি। এটাই খুবই দুঃখজনক।'
সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৫৩.১০ সেকেন্ড টাইমিং করেছেন। তার ব্যক্তিগত সেরা টাইমিংয়ের চেয়ে মাত্র ০.০২ সেকেন্ড কমিয়েছেন। এরপরও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার সাঁতারুরা তার চেয়ে এগিয়ে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশের জন্য অশনিসঙ্কেত। তাই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
আরচ্যারি-শু্যটিং এই দুই ডিসিপিস্ননে বিদেশি কোচ এবং বছরে বেশ কয়েকবার বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলেন আরচ্যার-শুটাররা। এত বিনিয়োগের পরেও বিশেষ করে শুটিংয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেমন সাফল্য আসছে না। এই ব্যাপারে শুটিং ফেডারেশনের মহাসচিবের মন্তব্য, 'বড় গেমসের আগে খেলোয়াড়দের বিদেশে কয়েক মাস অনুশীলন প্রয়োজন। বাংলাদেশে আসলে অনেক খেলায় অবকাঠামো নেই, আবার সব ফেডারেশনের সামর্থ্যও নেই। অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক ছিল না কয়েক বছর, অ্যাথলেট দৌড়াবে কোথায়?'
বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক থেকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে। প্রথমবার ১টি মাত্র ইভেন্টে অংশ নিলেও এরপর থেকে প্রতিবারই একাধিক ইভেন্টে অংশ নিয়ে আসছে। সর্বোচ্চ ৭টি ইভেন্টে অংশ নিয়েছিল ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে। ১৯৮৮ সালে সিউল, ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা ও গতবার টোকিও অলিম্পিকে ৬টি করে ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছিল। ৫টি করে ইভেন্টে অংশ নিয়েছে দুবার: ২০০৮ সালে বেইজিং ও ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে। ৪টি করে ইভেন্টে অংশ নিয়েছিল যথাক্রমে ১৯৯৬ সালে আটলান্টা, ২০০৪ সালে অ্যাথেন্স অলিম্পিকে। এবার নিয়েছে ৫টি ইভেন্টে। কিন্তু ফলাফল অন্তঃসারশূন্য। পদক জয়তো দূরে থাক, নু্যনতম সম্ভাবনাও গড়তে পারেনি।