প্যারিস অলিম্পিকে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেল আর্জেন্টিনার। উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিল তারা। তবে শেষ বাঁশি বাজার পর পরিস্থিতি হয়ে উঠল ভীষণ উত্তপ্ত। দুই দলের ফুটবলাররা প্রথমে বাগ্বিতন্ডা ও পরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন। আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স মুখোমুখি মানেই বাড়তি উত্তেজনা, উত্তাপ। ম্যাচ শেষে হলো ধাক্কাধাক্কি-ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি। প্যারিস অলিম্পিকের কোয়ার্টার-ফাইনালেও সেই একই দৃশ্যের মঞ্চায়ন। কেবল ফলটাই এবার আলাদা।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পুরোনো ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে ফুটবল ডিসিপিস্ননের পুরুষ বিভাগের সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। শুক্রবার রাতে বোর্দোয় অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছে ফ্রান্স। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন জ্যাঁ-ফিলিপে মাতেতা। আর্জেন্টিনার একের পর এক আক্রমণের মুখে ওই গোলটি যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখে কাঙিক্ষত জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
অলিম্পিকে অনূর্ধ্ব-২৩ দল অংশ নিলেও এই ম্যাচকে ঘিরে ভক্ত-সমর্থকদের ছিল বাড়তি উন্মাদনা। কারণ, ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের পর মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের দ্বৈরথ ভিন্ন মোড় নিয়েছে। হাইভোল্টেজ ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে একদম শুরুর দিকে। প্রথমার্ধের পঞ্চম মিনিটে মাইকেল ওলিসের ক্রসে হেড করে বল জালে পাঠান জঁ্যা-ফিলিপ মাতেতা। তার লক্ষ্যভেদই ফ্রান্সকে সেমিফাইনালের টিকিট পাইয়ে দিতে যথেষ্ট হয়। দ্বিতীয়ার্ধে আরেকবার অবশ্য জাল কাঁপায় থিয়েরি অঁরির শিষ্যরা। কিন্তু ম্যাচের ৮৩তম মিনিটে করা ওলিসের ওই গোল ফাউলের জন্য বাতিল করে দেয় ভিএআর।
বল দখল ও সুযোগ তৈরিতে যদিও আধিপত্য ছিল আর্জেন্টিনার। হাভিয়ের মাসচেরানোর শিষ্যরা ম্যাচের ৭০ শতাংশ সময় বল রাখে পায়ে। গোলমুখে তাদের নেওয়া ১৬টি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল চারটি। অন্যদিকে, ফ্রান্স ১০টি শট নিয়ে দুটি লক্ষ্যে রাখে। কাতার বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর মাঠের বাইরের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত কান্ডে দুই দলের মধ্যে বেশ তিক্ততা তৈরি হয়েছে। মূল দল না খেললেও সেই ধারায় এদিন গ্যালারিও ছিল তেতে। এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই দলের দর্শকদের মাঝে পুলিশকে অবস্থান করতে হয়।
দুই দলই এবার মুকুট ফিরে পাবার মিশনে। ফরাসিরা প্রথম এবং সবশেষ অলিম্পিকসের সোনা জিতেছিল ১৯৮৪ সালের আসরে। দুটি সোনার সবশেষটি আর্জেন্টিনা পেয়েছিল ২০০৮ সালে, বেইজিংয়ের আসরে। সেরা আটের মঞ্চেই তা ফিরে পাওয়ার আশা গুড়িয়ে গেল হাভিয়ের মাসচেরানোর দলের। পঞ্চম মিনিটে ওলিসের কর্নারে বক্সের ভেতর থেকে মাতেতা দারুণ হেডে জাল খুঁজে নিলে এগিয়ে যায় ফরাসিরা। এরপর একের পর এক আক্রমণ শাণাতে থাকে আর্জেন্টিনা, কিন্তু মেলেনি গোল। ম্যাচে ৭০ শতাংশ সময় বল নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলা আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধেও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে আক্রমণ শাণাতে থাকে। এরই মধ্যে ৮৩তম মিনিটে ওলিস জালে বল জড়ালে ব্যবধান দ্বিগুণের উৎসবে মেতে ওঠে ফ্রান্স।
কিন্তু ভিএআরে তার আগে বক্সে ফাউলের ঘটনা ধরা পড়ায় হয়নি গোল। তাতে আর্জেন্টিনার ম্যাচে ফেরার আশা বেঁচে থাকে। আর যোগ করা ১০ মিনিটে ফ্রান্সের রক্ষণে প্রচন্ড চাপ দেয় আর্জেন্টিনা; কিন্তু এচেভেরির দূরপালস্নার শট যায় বাইরে, একটু পর গন্দুর দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট আটকান ফরাসি গোলরক্ষক। আর অন্তিম সময়ে ফরাসি অধিনায়ক মাতেতার শট ক্রসবার কাঁপিয়ে ফিরলেও জয়ের আনন্দে ভাটা পড়েনি স্বাগতিকদের।