আগামী ২৬ জুলাই প্যারিসে শুরু হতে যাচ্ছে অলিম্পিক। 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' খ্যাত এই মহাক্রীড়াজজ্ঞে চার ইভেন্টে বাংলাদেশের ৫ ক্রীড়াবিদ অংশ নেবেন। এর হলেন- আরচার সাগর ইসলাম, সাতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া খাতুন, স্পিন্টার ইমরানুর রহমান ও শুটার রবিউল ইসলাম। বরাবরের মতো এবারও অলিম্পিকে পদকে চোখ না রেখে অংশগ্রহণটাই বড় করে দেখছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য অলিম্পিক অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ। বাস্তবতা অজানা নয় বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদেরও। অন্যদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্যটাও জানা। তাই সুযোগ পাওয়া ৫ ক্রীড়াবিদের লক্ষ্য এবারের আসরে নিজেদের পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
পাঁচ ক্রীড়াবিদের মধ্যে আরচার সাগর ইসলাম নিজ যোগ্যতা বলে সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন। বাকি চার ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে যাচ্ছেন ওয়াইর্ল্ড কার্ড পেয়ে। এবারও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কেবলই অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে। কারণ অলিম্পিকে লড়াই করা ও সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক মানের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো। যার কোনোটাই বাংলাদেশের নেই বললেই চলে। তবে সাগর-সোনিয়া-রাফিরা অলিম্পিকের এই আসরে পারফরম্যান্সে উন্নতি দেখাতে চান। আরচারি ইভেন্টে ৬১ জন প্রতিযোগী। যার মধ্যে বাংলাদেশের সাগর ইসলাম একজন। তিনি জানান, অলিম্পিকে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান তিনি। লক্ষ্য থাকবে ভালো কিছু করার। বাংলাদেশের দ্রম্নততম মানব ইমরানুর রহমান দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছেন অলিম্পিকে। তিনি জানালেন অলিম্পিকে ভালো কিছু করার লক্ষ্যই তার। তবে হঠাৎ করে বিরাট কিছু করে দেখানো সম্ভব নয় বলেও জানালেন তিনি।
থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নেওয়া সাতারু সামিয়ুল ইসলাম জানিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিংটাই এবারের অলিম্পিকে করে দেখাতে চান তিনি। এ লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন। তবে সামিয়ুলের সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে নারী সাতারু সোনিয়া আক্তারের। দুই মাস ধরে বাংলাদেশ সাতার ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি। সোনিয়াও মনে করেন অলিম্পিকে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। বিশ্বসেরা সাঁতারুদের সঙ্গে লড়াই করাটাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। তার কথায়, 'অলিম্পিকের মতো এত বড় একটা আসরে খেলার সুযোগ পাওয়া মানে বড় একটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো। আমার লক্ষ্য থাকবে সেখানে নিজের সেরাটা দেওয়া। নিজের ইভেন্টে সেরা টাইমিং করা। মানসিকভাবে ব্যাপারটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। অলিম্পিক কিংবা এশিয়ান গেমসে পদকজয়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সাঁতারুদের তুলনা করার সুযোগ নেই। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সেটা সব কিছুতেই।'
অন্যদিকে শুটার রবিউল এবারই প্রথম অংশ নিতে যাচ্ছেন অলিম্পিকের মতো বড় আসরে। প্রথমবার সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত এই শুটার, 'আমার লক্ষ্য ছিল নিজ যোগ্যতায় অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার। চেষ্টা করেছিলাম, ভাগ্য সহায় হয়নি। তাই সেটি সম্ভব হয়নি। এখন ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে অলিম্পিকে অংশ নিতে যাচ্ছি। প্রত্যাশা সেখানে নিজের সেরাটাই দেওয়ার। আমার লক্ষ্য সেরা আটে খেলা। তবে অলিম্পিকের মতো বড় আসরে সেরা আটে খেলাটা সহজ কিছু নয়। যদি সেটি করতে পারি আর সেদিন যদি ভাগ্য অনুকূলে থাকে পদকও আসতে পারে। তবে এখনই পদকের আশা করছি না। আমার প্রত্যাশা হলো সেরা আট।'
১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের আসর থেকে অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এত বছরেও জোটেনি কোনো পদক। প্রতি আসরেই 'অংশগ্রহণই বড় কথা' এমন মূল মন্ত্র নিয়ে অংশ নেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। আগামী ২৬ জুলাই শুরু হবে প্যারিস অলিম্পিক। তবে তার দু'দিন আগে শুরু হবে ফুটবল।