আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে মাঠের ক্রিকেটে ফিরবে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে দেশ ছাড়বেন শান্ত-লিটনরা। আগামী ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর সেখানে ২১ আগস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে শুরু হবে প্রথম টেস্ট, পরে করাচিতে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৩০ আগস্ট।
পাকিস্তানের মাটিতে লাল বলের লড়াইয়ে বেশ চ্যালেঞ্জ দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, 'পাকিস্তান সিরিজ অবশ্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে, তারা খুবই ভালো দল। তবে আমার মনে হয়, এই ফরম্যাটে আমাদেরও বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছেন। মুশফিক ভাই, মুমিনুল ভাইসহ আরও বেশ কয়েকজন। আমরা যদি আমাদের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগিয়ে শক্তি অনুযায়ী খেলতে পারি, সিরিজটা অবশ্যই ভালো হবে।'
বিসিবির হাইপারফরম্যান্স এইচপি ইউনিটের একটি দল অস্ট্রেলিয়া সফরে গেছে। ছায়া জাতীয় দল বাংলাদেশ টাইগার্স ও এইচপির আরেকটি দল চট্টগ্রামে প্রস্তুতিমূলক সিরিজ খেলছে। আপাতত ক্যাম্প না করে সামনের সিরিজের জন্য এভাবেই প্রস্তুত হচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। পাকিস্তান সিরিজের প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, 'সিরিজের আগে সবাই প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পাচ্ছে। আশা করি, ভালোই হবে। সব পরিকল্পনাই করা আছে। প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে এবং যাওয়ার আগে প্র্যাকটিস সেশনও থাকবে। এগুলো করে যতটা সম্ভব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যেতে চাই। এখানে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আসবেন, যারা টি২০তে ছিলেন না। পাকিস্তান সিরিজের জন্য তারা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।'
টি২০ বিশ্বকাপ শেষে ফরম্যাট বদলে টাইগারদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ লাল বলের ক্রিকেট। আর সেই সিরিজের ব্যাটিং পস্ন্যান নিয়ে এখনই কিছু বলতে চান না অধিনায়ক শান্ত। শান্ত বলেন, 'ব্যাটিং পস্ন্যানিংটা না বলি, ব্যাটিং পস্ন্যানিংটা আমাদের মধ্যেই থাক।'
এমনিতে দেশের মাঠে আগস্ট মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে না পাকিস্তান। এই সময়টায় প্রচন্ড গরম থাকে, তাপমাত্রাও থাকেও অনেক বেশি। অনেক সময় আবার বৃষ্টিও প্রচুর। তবে এই মৌসুমে পাকিস্তান ক্রিকেটের ব্যস্ততা অনেক, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও আয়োজন করবে তারা। আগস্ট থেকেই তাই শুরু হচ্ছে তাদের যাত্রা। নিজেদের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে দেশের মাঠে আগস্ট মাসে তারা আগে স্রেফ দুটি টেস্ট খেলেছে। দুটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৩ সালে।
২০২০ সালে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরে কোভিডের কারণে করাচিতে দ্বিতীয় টেস্ট আর হয়নি। এবার এই সিরিজ দিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের তুমুল ব্যস্ত সময়ও শুরু হবে। পাকিস্তান থেকে ফেরার কয়েকদিন পরই ভারত সফরে যাবে দল। সেখানে দুই টেস্টের সঙ্গে তিনটি টি২০ও আছে। ভারত থেকে ফেরার পর দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ হবে অক্টোবর-নভেম্বরে। এরপর নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। পূর্ণাঙ্গ সেই সফরে দুটি টেস্টের পাশাপাশি তিনটি করে ওয়ানডে ও টি২০ আছে।
দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজটি ছাড়া অন্যান্য সিরিজগুলোর সূচি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। পাকিস্তানে এখনো পর্যন্ত ৫ টেস্ট খেলে সবকটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চক্রে এখনো পর্যন্ত চার টেস্ট খেলে এক জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ১২। ৯ দলের আসরে বাংলাদেশ এখন আছে পয়েন্ট তালিকার আট নম্বরে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজ দিয়ে পাকিস্তানের টেস্ট ক্রিকেটে গিলেস্পি অধ্যায় শুরু হবে। গত এপ্রিলে বাবর আজমদের টেস্ট দলের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক এই অজি ক্রিকেটার। আসন্ন এই সিরিজের আগে পাকিস্তানের নতুন টেস্ট কোচ হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার জেসন গিলেস্পি। কোচ হিসেবে তার প্রথম আন্তর্জাতিক এসাইনমেন্ট হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। আর দায়িত্ব গ্রহণ করে জানিয়েছেন নিজের লক্ষ্যের কথা। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে, এবার সেই টাইগারদের বিপক্ষে শুরু হচ্ছে তার পাকিস্তানের কোচিং ক্যারিয়ার।
গিলেস্পি বলেন, 'আমার সব মনোযোগ এখন পাকিস্তান দলের ওপর। আমি কীভাবে পাকিস্তানের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারি, সে চেষ্টা করব। বাংলাদেশ খুব ভালো দল। প্রতিপক্ষ নিয়ে যেভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার, আমরা তা করব। চেষ্টা করব, তাদের বিপক্ষে যেন প্রভাব বিস্তার করতে পারি। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার প্রথম টেস্ট ম্যাচ হবে এটি। আমি সে জন্য মুখিয়ে আছি।'
বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্টে নাইটওয়াচম্যান হয়ে ২০১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, যা এখনো রেকর্ড। সেই ইনিংস নিয়ে গিলেস্পি বলেন, 'দেখুন, সেই ইনিংসটা হয়ে গেছে আরকি। আমি খুবই ভাগ্যবান আমার ক্যারিয়ার নিয়ে। ১০ বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলেছি। আমার জন্য বিরাট অর্জন।'
জেসন গিলেস্পির পরিচিতি মূল ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে। কিন্তু ক্যারিয়ার শেষ টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নেমেই গড়েছিলেন একটি ইতিহাস। ১৮ বছর আগে চট্টগ্রাম টেস্টে অবিশ্বাস্যভাবে ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি।
সেই ইনিংস বরাবরই জেসন গিলেস্পির কাছে সুখস্মৃতি। কিছুটা আক্ষেপেরও বটে। কেননা, এই ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আর টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি তিনি। খেলা ছেড়ে অনেকদিন হলো কোচিংয়ে নাম লিখিয়েছেন সাবেক এই পেসার।
তিনি বলেন, 'এখন আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা। আমার মনোযোগ থাকবে পাকিস্তান যেন ভালো খেলে, সেদিকে। আমি অবশ্যই আমার শেষ টেস্ট ম্যাচ নিয়ে পড়ে থাকব না। তবে দারুণ স্মৃতি, এতে কোনো সন্দেহ নেই।'