ক্রীড়ার যেকোনো বড় আসরই কোনো না কোনো নতুন তারকার জন্ম দেয়। এবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দানি ওলমো যেমন। দল শিরোপা জিতেছে, আর ওলমো নিজে গোল্ডেন বুট জয়ীদের একজন। বলতেই হয়, আপন আলোয় উদ্ভাসিত এক নাম ওলমো।
অথচ আসর শুরুর আগে ওলমো নিজেও কি এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন? বদলি হিসেবে বড়জোড় মিনিট কয়েক করে খেলা, এই ২৬ বছর বয়সির জন্য এবারের ইউরো তো এমনই হওয়ার কথা ছিল। অথচ আরবি লাইপজিগের এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার নিজের ভাগ্যকে অন্যভাবে লিখলেন। কুড়িয়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের শিরোপা জয়ের কারিগরদের অন্যতম হয়ে থাকলেন।
৬ ম্যাচ খেলে ৩ গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট ওলমোর। এবারের ইউরোতে ৬ জন ফুটবলার সর্বোচ্চ ৩টি করে গোল করেছেন। এবার প্রথমবারের মতো ৬ জনকেই দেওয়া হয়েছে 'গোল্ডেন বুট'। এর আগে একাধিক খেলোয়াড়ের গোল সমান হলে কখনো যিনি কম সময় খেলেছেন তাকে, বা কখনো যিনি বেশি গোলে সহায়তা করেছেন তাকে গোল্ডেন বুট দেওয়া হয়েছে। তবে এবার উয়েফা জানিয়ে দিয়েছিল, একাধিক খেলোয়াড়ের গোল সমান হলে সবাইকেই দেওয়া হবে গোল্ডেন বুট।
ওলমো ছাড়া গোল্ডেন বুট জয়ী অন্যরা হলেন- ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন, জার্মানির জামাল মুসিয়ালা, নেদারল্যান্ডসের কোডি গাকপো, স্স্নোভেনিয়ার ইভান শারাঞ্জ ও জর্জিয়ার জর্জেস মিকাউতাদজে। তবে বাকি পাঁচজনের কেউই তো আর চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। তাই, এটা নিশ্চিত যে ব্যক্তিগত এই সাফল্য ওলমোর কাছেই সবচেয়ে মধুর। ফাইনালে গোল করতে পারলে তো এককভাবেই গোল্ডেন বুটটা জিততে পারতেন তিনি। সেই সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইনের। কিন্তু দু'জনের কেউই সেটা পারেননি। কে জানে, প্রথম দিকে যদি শুরুর একাদশে খেলতে পারতেন, তাহলে হয়তো ঠিকই পারতেন ওলমো।
স্পেন এবার ইউরো অভিযান শুরু করে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। গ্রম্নপ পর্বের সেই ম্যাচটিতে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন ওলমো। ইতালির বিপক্ষে পরের ম্যাচে নামার সুযোগই হয়নি তার। আলবেনিয়ার বিপক্ষে গ্রম্নপের শেষ ম্যাচে বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেন স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে। তখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, আসরটা এভাবেই যাবে ওলমোর। শেষ ষোলোতে জর্জিয়ার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে আবারও বেঞ্চে জায়গা হয় তার। তবে বদলি হিসেবে নেমে গোল করেন। এরপর জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ও ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে রীতিমতো নায়ক তিনি।
সেটাও কীভাবে? জার্মানির বিপক্ষেও শুরুর একাদশে জায়গা হয়নি তার। ফুটবলীয় পরিভাষায় 'ফোর্সড সাবস্টিটিউশন' বলে একটা টার্ম আছে। মানে খেলোয়াড় পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছে নেই, কিন্তু কোচকে সেটা করতে হচ্ছে। জার্মানির পক্ষে টনি ক্রুজের কড়া ট্যাকলে মাত্র ৮ মিনিটে মাঠ ছাড়তে হয় পেদ্রিকে। কোচ বাধ্য হয়ে ওলমোকে মাঠে নামান। স্পেনের ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচে ওলমোই প্রথম গোলটা করেন। দ্বিতীয় গোলটা হয় তার অ্যাসিস্ট থেকে।
এ রকম সুযোগ খুব কমই আসে। কালেভদ্রে আসা সেই সব সুযোগকে কাজে লাগাতে হয়। ওলমো সেটাই করেছেন। তাই তো সেমিফাইনাল ও ফাইনালে তার জায়গা হয়েছে প্রথম একাদশেই। ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন ওলমো। ফাইনালে যদিও গোল পাননি, কিন্তু স্পেনের সাফল্যে একজন ওলমোর কথা স্মরণীয় হয়েই থাকবে।