কলম্বিয়াকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় ও ১৬তম বারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। শতবর্ষী এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ শিরোপাধারী দল আলবিসেলেস্তেরা। একই সঙ্গে নিজেদের এক চক্রপূরণ সম্পন্ন করল মেসি-ডি মারিয়ারা। ২০২১ কোপা আমেরিকা, ২০২২ বিশ্বকাপ আর ২০২৪ কোপা আমেরিকা। টানা তিন আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের এক বিরল রেকর্ড গড়ল তারা। যে কীর্তি এতদিন ছিল কেবল স্পেনের।
কোপা আমেরিকার গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হলেও আসল ট্রফির রেপিস্নকা পেয়েছিল তারা। যা দেখতে হুবহু আসল ট্রফির মতোই। এবার আর রেপিস্নকা নয়, আসল ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছে আর্জেন্টিনা দল। ২৩ বছর পর এবার কোপা আমেরিকার আসল ট্রফি চ্যাম্পিয়ন দলকে দিয়েছে লাতিন আমেরিকার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই আসল ট্রফি দেওয়া হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কনমেবল। এর আগে সবশেষ আসল ট্রফি দেওয়া হয়েছিল ২০০১ সালের কোপা আমেরিকার জয়ী দলকে। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কলম্বিয়া। যেটা কোপা আমেরিকায় তাদের একমাত্র সাফল্য। এবারও তাদের আসল ট্রফি জিতে নেওয়ার সুযোগ ছিল। নির্ধারিত সময়ে তারা জমাট লড়াই করলেও অতিরিক্ত সময়ে লাউতারো মার্টিনেজের গোলে ম্যাচ জিতে নেয় আর্জেন্টিনাই।
কোপা জয়ী আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে রাজসিক সংবর্ধনায় বরণ করে নিল দেশটির সমর্থকরা। ফাইনাল শেষে দেশে ফিরে এ সংবর্ধনা পেয়েছেন গঞ্জালেজ-ডি মারিয়ারা। তাদের বরণে এজেইজা বিমানবন্দরে রাতভর অপেক্ষা করেন সমর্থকরা। এসময় আকাশী নীল জার্সি পড়ে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে হিরোদের স্বাগত জানান তারা। পরে বিমানবন্দর থেকে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় খেলোয়াড়দের। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানো আনহেল ডি মারিয়ার নেতৃত্বে দলটি বিমানবন্দরে পা রাখে। তাদের সঙ্গে ছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি এবং দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ক্লাদিও তাপিয়া। বিমানের গায়ে লেখা ছিল, 'আমরা চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে এসেছি।'
রেকর্ড ১৬তম কোপা জিতে দেশে ফিরেছেন মারিয়ারা। তাদের বরণে তাই ছিল না কোনো কমতি। বুয়েন্স আয়ার্সের এইজাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফুটবল ফেডারেশন কার্যালয় যেন মানুষের সমুদ্র। চারদিকে হর্ষধ্বনি, দুনিয়ার কাছে নিজেদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আরও একবার জানান দেওয়া।
বিমানবন্দর থেকে এফএ কার্যালয়ে যাওয়ার পথটুকু কম নয়। তবে গণমানুষের জোয়ারে ভেসে তা যেন মেসিদের কেটে গেল চোখের পলকে। আকাশী নীল পতাকা আর মশালের আগুনে রাতেই নেমে এলো দিনের ঔজ্জ্বল্যতা। যাদের অনেকে যেমন ছিলেন মেসিদের বরণে, তেমনি অনেকে এসেছিলেন তাদের ভালোবাসার ফিদেকেও বিদায় জানাতে।
এদিকে রাত শেষে ভোর হলেও কোপা চ্যাম্পিয়নদের ভালোবাসা জানাতে ভুলেননি আর্জেন্টাইন সাধারণ মানুষ। পত্রিকার প্রথমপাতাগুলো ভরে আছে মেসিদের নায়োকোচিত পারফরম্যান্সের প্রশংসা বাণিতে। জনসাধারণের দাবি, দেশের এই আর্থিক সংকটে যখন মানুষ বেঁচে থাকার শেষ আশাটাও ভুলে যাচ্ছিল, তখন কোপার এই শিরোপা তাদের নতুন করে বাঁচতে শেখাবে।
মেসিদের বরণ করতে আসা এক সমর্থক বলেন, 'এ দলটাও আমাদের দেশের মানুষের মতো অনেক লড়াই করেছে। এখন তারা ফল পেতে শুরু করেছে। আমরা খুবই খুশি। আশা করব দেশের সাধারণ মানুষ এখান থেকে নিজেদের উজ্জীবিত করবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।'
এদিকে আরও এক ভক্ত বলেন, 'আপনি ডি মারিয়া আর মেসিকে দেখুন, এরা দুজন কত কটূক্তি, কত সমালোচনা সহ্য করেছে। কিন্তু আজ তারাই আমাদের নায়ক। এটাই জীবন, এখানে কোনো কিছুই শেষ নয়। আপনি নতুন করে শুরু করুন, কেউ না কেউ আপনার পাশে এসে দাঁড়াবেই।'
তবে দলের সঙ্গে দেশে ফেরেনি বেশকিছু ফুটবলার। তাদের মধ্যে রয়েছেন মেসি, এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, জুলিয়ান আলভারেজ, নিকোলাস ওতামেন্ডি এবং জেরোনিমো রুলিস্ন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে গেছে।