আরও একটি ফাইনাল খেলে আরও একটি অনন্য এক রেকর্ড গড়লেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ফাইনাল ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় এখন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। পেছনে ফেলে দেন সাবেক সতীর্থ হ্যাভিয়ের মাসচেরানোকে।
মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে কলম্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। এই ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে সবমিলিয়ে পাঁচটি ফাইনাল খেললেন মেসি।
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার গত আসরের ফাইনাল খেলেই ছুঁয়েছেন সাবেক সতীর্থ হ্যাভিয়ের মাসচেরানোকে। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ২০০৪, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপার ফাইনাল খেলে এই রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এবার ফাইনালে মাঠে নেমে সেই রেকর্ড ভাঙলেন মেসি।
সাদা-আকাশি নীল জার্সিতে সর্ব প্রথম ২০০৭ সালের ফাইনালের মাঠে নেমেছিলেন মেসি। সেই ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হারে তার দল। এরপর খেলেন ২০১৫ ও ২০১৬ সালের ফাইনাল। দুটি কোপাতেই ফাইনালে তারা হারে চিলির কাছে। এরপর ২০২১ সালের ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে প্রথমবার আন্তর্জাতিক শিরোপায় চুমু খান লা পুলগা।
তবে সব আসর মিলিয়ে টানা তিনটি মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছেন মেসি। কোপা আমেরিকার গত আসরের ফাইনাল খেলার পর কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচ খেলেন রেকর্ড আটবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী এই তারকা। এদিনের ফাইনাল জিতে নতুন ইতিহাস গড়ে তার দল আর্জেন্টিনা। প্রথম লাতিন দল হিসেবে টানা তিনটি মেজর শিরোপার স্বাদ পেয়ে যায় দলটি।
ট্রফি জেতায় আলভেজকে ছাড়িয়ে চূড়ায় উঠলেন মেসি : ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জয়ী দলে থাকার রেকর্ড ছিল ব্রাজিলের দানি আলভেজের। তাকে ছাড়িয়ে সব মিলিয়ে ৪৫তম শিরোপা জয়ে ভাসলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা শিরোপা ধরে রাখার মধ্য দিয়ে সেরার মুকুট পরলেন এই ফুটবল মহাতারকা।
গত বছর চারেক অনেক বড় বড় সাফল্য ধরা দিচ্ছে মেসির। এক সময় আন্তর্জাতিক ট্রফি না জেতা নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল তার। সেই সব সমালোচনা উড়িয়ে আর্জেন্টিনা এই সময়ে জিতছে চারটি শিরোপা। ২০২১ কোপা আমেরিকা জয় দিয়ে শুরুর পর ফিনালিসিয়ামা (কোপা ও ইউরো জয়ী দলের মধ্যকার ম্যাচ), বিশ্বকাপ ও আবারও কোপা জিতলেন তিনি।
২০০৫ সালে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতে শুরু মেসির। সেবার বার্সেলোনার হয়ে স্প্যানিশ লা লিগা জিতেও আনন্দে ভাসেন। এরপর থেকে ক্লাব ফুটবলে ধরা দিয়েছে অনেক সাফল্য। জাতীয় দলে সাফল্য এসেছে পরে। সেই সাফল্য ছাড়িয়ে গেছে সব কিছুকে।
বার্সেলোনার হয়ে ১০টি লা লিগা, ৭টি কোপা দেল রে, ৭টি স্প্যানিশ সুপার কাপ ও চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন মেসি। তার প্রিয় এই ক্লাবের হয়ে উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জেতেন তিনবার করে। বার্সার হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩৪টি ট্রফি জেতেন এই তারকা। বার্সা থেকে প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে (পিএসজি) গিয়েও সাফল্য পান। জেতেন দুটি ট্রফি। ইন্টার মায়ামির হয়ে জেতেন একটি লিগ কাপ। আর্জন্টিনার হয়ে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জেতার পর অলিম্পিকে গোল্ড, দুটি কোপা, একটি বিশ্বকাপ ও লা ফিনিলিসিয়াম জয়ের সঙ্গে ছিলেন মেসি।
চোট নিয়ে মাঠ ছেড়ে কান্নায় ভাসলেন মেসি : ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল ৩৬তম মিনিটেই। কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার সান্তিয়াগো আরিয়াসের বিপজ্জনক ট্যাকেলে ডান পায়ে আঘাত পান লিওনেল মেসি। যে পায়ে দীর্ঘদিন থেকে ইনজুরি বয়ে বেড়াচ্ছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। আর দ্বিতীয়ার্ধে পিছলে পড়লে তো মাঠই ছাড়তে হয় তাকে। মাঠ ছেড়ে অঝোরে কাঁদলেন রেকর্ড এই তারকা। রেকর্ডময় এই ফাইনালে পুরো ম্যাচ খেলা হলো না তার।
সান্তিয়াগো আরিয়াসের সেই আঘাতে প্রাথমিক শ্রশ্রূষা শেষে মাঠে থাকলেও বারবার পা মালিশ করতে দেখা গিয়েছে মেসিকে। কোনো কার্ড দেখানো তো দূরে থাক, ফাউলও ধরা হয়নি। এরপর কিছু মন্থরও হয়ে গিয়েছিলেন। তবে ৬৩তম মিনিটে একটি বল দখলে নিতে গিয়ে পিছলে পড়ে যান। রেফারি বাঁশি বাজালে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকরা মাঠে ঢুকে বদলের ইশারা দেন। তাতে চোট যে কিছুটা হলেও গুরুতর তা স্পষ্ট।
শিরোপা ধরে রাখার মিশনে তাই বড়সড় ধাক্কাই আর্জেন্টিনার জন্য। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন নিকোলাস গঞ্জালেস। আর আর্মব্যান্ড তুলে দেওয়া হয় আনহেল ডি মারিয়ার হাতে। এরপর সাইডবেঞ্চে বসেই এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার।