টি-২০ বিশ্বকাপে সুপার এইটে টানা দুই ম্যাচে হেরেও সেমিফাইনালে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে ১২.১ ওভারে ১১৬ রান করতে পারলেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলতে পারত নাজমুল হোসেন শান্তর দল। কিন্তু কঠিন সমীকরণ মাথায় রেখে যেভাবে ব্যাটিং করার প্রয়োজন ছিল, সেটা করেনি তারা। সমীকরণ মেলানো তো দূরে থাক, শেষ পর্যন্ত ম্যাচটিই হেরে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। অধিনায়ক শান্ত ম্যাচ শেষে জানিয়েছিলেন, দ্রম্নত ৩ উইকেট হারানোর পর সেমিফাইনালের ভাবনা থেকে সরে আসেন তারা। শান্তর এই বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটাররা দলের এই পরিকল্পনা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
ওইদিনের ম্যাচের দ্রম্নত ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে সেমিফাইনালের আশা বাদ দিয়ে কেবল জয়ের চেষ্টা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা বিফলে গেছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক শান্ত বলেছিলেন, 'পরিকল্পনা ছিল প্রথম ৬ ওভারে জোরালোভাবে চেষ্টা করা। যদি আমরা শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ফেলি, তাহলে স্বাভাবিকভাবে ব্যাট করে ম্যাচ জয়ের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু তা হয়নি এবং মিডল অর্ডার ভালো করতে পারেনি।'
সংবাদ সম্মেলনে শান্তর বক্তব্যের ব্যাপারে বোর্ড সভাপতিকে অবহিত করা হয়। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) বোর্ড মিটিং শেষে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন অধিনায়কের ওই বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, 'আমরা প্রথম থেকেই বলছি, ওর (শান্তর) এই কথার সঙ্গে আমরা একমত না। তার এই বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ১২ ওভার পর্যন্ত (আফগানিস্তানের বিপক্ষে) আমাদের লড়াই করা উচিত ছিল। দেখলাম যে যখন রক্ষণাত্মক খেলার দরকার ছিল তখন মেরে খেলেছে। আর যখন মেরে খেলার দরকার ছিল তখন রক্ষণাত্মক খেলেছে।'
পরে বিসিবি সভাপতি পাপন জানালেন, অধিনায়ক শান্ত তাকে নাকি ভিন্ন কথাই বলেছেন। তার বর্তমান বক্তব্যের সাথে আগের বক্তব্যের কোনও মিল নেই। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের পাপন বলেছেন, 'ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি ক্যাপ্টেনের কথা বলেন, সে ঠিক উল্টোটা বলেছে। একদম এরকম কোনো কথাই হয়নি। সে বলেছে একদম কোনো সমস্যা নাই। আপনারা যা বলছেন (সেমির চেষ্টা করেনি দল) এটার সঙ্গে কোনও মিল নেই। দিস ইজ নাম্বার ওয়ান। কাজেই আপনারা কীসের ভিত্তিতে বলছেন আমি জানি না।'
বিশ্বকাপে আফগানদের বিপক্ষে শান্তদের এমন পরিকল্পনায় হতবাক হয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অনেকেই। বাংলাদেশের সাবেক দুই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তামিম ইকবালও দলের এমন পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করলেন। ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরাফি লিখেছেন, 'আজকের হিসাবটা ছিল শুধুই ১২.১। এর বাইরে কিছুই ভাবার সুযোগ ছিল না। তাতে যদি ৫০ রানেও দল অলআউট হতো, অন্তত সবাই সেটা সহজভাবে নিতো।'
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর টাইমড আউট অনুষ্ঠানে তামিম বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার জন্য রান তাড়া করা উচিত ছিল। এতে যদি ৬০-৭০ রানে আউট হয়ে যেতে হয়, তারপরও। আজকে সুযোগ ছিল খুব বিশেষ কিছু করার। আর এমন সুযোগ সবসময় আসে না।'
এদিকে টি২০ বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আর টিম ম্যানেজারের রিপোর্ট পেয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেখানেও সেমিফাইনালকে গুরুত্ব না দেওয়ার মতো কিছু পাননি বোর্ড প্রধান, 'এরকম কোনো কথাই বলেনি। এখন পর্যন্ত আমি যে কয়টা রিপোর্ট পেয়েছি কোথাও এরকম কিছু জানি না। সবগুলো পড়া হয়নি এখনও আমার। দুটো রিপোর্ট এসেছে। এইটা আপনাদেরকে আশা করি ২-১ দিনের মধ্যে পড়া শেষ করে আগে বোর্ডেও সঙ্গে বসবো আমি।'