রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার বাধা নেদারল্যান্ডস

ক্রীড়া ডেস্ক
  ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার বাধা নেদারল্যান্ডস

১৯৬৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপের পর আর কোনো বড় শিরোপা জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। অন্যদিকে ১৯৮৮ সালে ইউরো শিরোপা পাওয়া নেদারল্যান্ডস ৩৬ বছর ধরে শিরোপা খরায় ভুগছে। তাই তো দুই দলের মধ্যকার আজ বুধবার সেমিফাইনাল সে কারণেই হয়ে উঠেছে এক মর্যাদার লড়াই। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের মোকাবিলা করবে ইংল্যান্ড। তার ওপর আবার প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে হলে ইংলিশদের লড়াকু ডাচ বাধা পেরুতে হবে।

ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচটি আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় অনুষ্ঠিত হবে। আর এই ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি টেন ২ ও ৩। ইংল্যান্ড টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনালে খেলার সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইবে না। তার ওপর ওয়েম্বলিতে তিন বছর আগে ইতালির কাছে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়ে হারের সেই হতাশা থেকেও তারা বেরিয়ে আসতে চাইছে। এর আগে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে একবারই ঘরের মাটিতে ফাইনালে খেলে শিরোপা জিতেছিল ইংলিশরা।

কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের দলের সামনে এখন ৫৮ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর বড় এক সুযোগ। সাউথগেটের অধীনে সাম্প্র্রতিক সময়ে নিজেদের দারুণভাবে প্রমাণ করার কারণেই জার্মানিতে আসার আগে তাদের গায়ে ফেবারিটের তকমা লেগে গিয়েছিল। শেষ চারে পৌঁছাতে অবশ্য তাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। স্স্নোভাকিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নক আউট পর্বের আগের দুই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে বিদায়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে তারা ফিরে এসেছিল। জুড বেলিংহাম ও বুকায়ো সাকার একক কৃতিত্বে দুইবার ইংল্যান্ড রক্ষা পায়। কিন্তু দল হিসেবে এখনো সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি সাউথগেটের শিষ্যরা। স্স্নোভাকিয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত সময় ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টিতে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়।

কিন্তু ওই ম্যাচগুলোতে ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের সুবাদে জয় পাওয়া ইংল্যান্ডকে ফাইনালে যেতে হলে অবশ্যই একতাবদ্ধ হয়ে খেলতে হবে। এখনো পর্যন্ত আসরের কোনো ম্যাচেই ইংল্যান্ড তাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেনি। যদিও ইংলিশ বস বড় আসরে তার জয়ের রেকর্ড ঠিকই ধরে রেখেছেন। সাউথগেটের অধীনে এনিয়ে ইংল্যান্ড চারটি বড় টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আট বছর আগে এই দলটির দায়িত্ব নেওয়ার পর সাউথগেট এভাবে নিজের ভবিষ্যৎ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যদিও ৫৩ বছর বয়সি সাউথগেটকে এই দীর্ঘ যাত্রায় সমালোচনাও কম শুনতে হয়নি। এবারের আসরেও স্স্নোভেনিয়ার সঙ্গে গ্রম্নপ পর্বে গোলশূন্য ড্র করার পর সমর্থকদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে ইংলিশ বসকে। অসম্ভব প্রতিভাবান একটি দলকে পেয়েও নেতিবাচক কৌশলের কারণেই সাউথগেট বারবার সমালোচিত হয়েছেন।

আর এই বিষয়টি সম্পর্কে সাউথগেট বলেন, 'বিষয়গুলো যখন ব্যক্তিগতভাবে আসে তখন অবশ্যই খারাপ লাগে। আমি এগুলো অস্বীকার করছি না। ম্যাচের ফলাফল মনঃপুত না হলেও এমন হতে পারে। যদিও অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। এটাও মনে রাখতে হবে চারটি বড় আসরের তৃতীয় সেমিফাইনাল খেলছি আমরা। আমি বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে আমরা সমর্থকদের দারুণ কিছু স্মৃতি উপহার দিয়ে যাচ্ছি। এভাবেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব, একইসঙ্গে এই মুহূর্তগুলো উপভোগও করব।'

সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্রয়ের ম্যাচটিতে সাউথগেট ফর্মেশনে পরিবর্তন এনেছিলেন। বিশ্বর্ যাংকিংয়ের ৪৫তম স্থানে থাকা স্স্নোভাকিয়ার বিপক্ষে নাটকীয় জয়ের পর যে কারণে সুইসদের বিপক্ষে ইংল্যান্ড তুলনামূলক ভালো ফুটবল খেলেছে। সাউথগেট আশা করছেন তিনি তার ৩-৪-২-১ ফর্মেশনেই আজ বুধবারের ম্যাচেও স্থির থাকবেন। মধ্যমাঠে এজরি কোনসার স্থানে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরছেন মার্ক গুয়েহি। সাউথগেট স্বীকার করেছেন তার দল ড্রয়ের অন্যদিকে থাকা ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি ও পর্তুগালের না পড়াটা সৌভাগ্যের। নেদারল্যান্ডস ডি-গ্রম্নপে অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের পরে তৃতীয় স্থান নিয়ে নক আউট পর্বে ওঠায় ফাইনালে ওঠার পথে ইংল্যান্ড তাদের পেয়ে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করতেই পারে।

অন্যদিকে কোচ রোনাল্ড কোম্যানের দল নেদারল্যান্ডস শেষ ষোলোতে রোমানিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। বার্লিনে অবশ্য তুরষ্কের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে পিছিয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয় পায়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের তারকাদের বিপক্ষে মাঠে নেমে নেদারল্যান্ডসকে কিছুটা হলেও নার্ভাস মনে হতে পারে। ডাচ যে খেলোয়াড়রা ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে খেলে থাকে তারা স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে মেতে উঠবে। টটেনহ্যামের ডাচ ডিফেন্ডার মিকি ফন ডি ভেন বলেছেন, 'উভয় দলের খেলোয়াড়দের মান দেখতে গেলে এই ম্যাচটি ছন্দ ও প্রতিভার দিকে থেকে দারুণ একটি ম্যাচ হতে যাচ্ছে।'

এবারের আসরে যে কয়জন ফরোয়ার্ড নিজেদের প্রমাণ করেছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম লিভারপুলের ডাচ তারকা কোডি গাকপো। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিন গোল করা একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে গাকপো টুর্নামেন্টে টিকে রয়েছেন। বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ে ডাচরা ৩৬ বছরের খরা কাটাতে মুখিয়ে আছে। সর্বশেষ জয় করা ওই ইউরো আসরটিও জার্মানিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই একবারই নেদারল্যান্ডস ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেছে।

সেমিফাইনালে ফলাফলের ওপর দুই কোচের খেলোয়াড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত একটি প্রভাব ফেলতে পারে। শেষ আটের নিজ নিজ ম্যাচে যা প্রমাণ হয়েছে।

সাউথগেট লুক শ'কে মাঠে নামিয়ে সুইসদের বিপক্ষে ১০ মিনিটের মধ্যে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান। এছাড়া ইভান টনি, ট্রেন্ট আলেক্সান্দার আর্নল্ড ও কোল পালরমারকে বদলি বেঞ্চ থেকে একসঙ্গে উঠিয়ে আনেন, যাদের গোলে ইংল্যান্ড পেনাল্টিতে ৫-৩ গোলের জয় পায়। অন্যদিকে ১৯৮৮ ইউরো জয়ী নেদারল্যান্ডস দলের কোচ কোম্যান তুরষ্কের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর ওট উইগর্স্টকে মাঠে নামিয়ে ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে