শিরোপা জিততে এসে ব্রাজিলের এমন হার হয়তো মেনে নিতে পারছেন না দলের সমর্থকরা। গ্রম্নপ পর্বের তিন ম্যাচে জয় পেয়েছিল মাত্র একটিতে। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিতলেও কোস্টারিকা ও কলম্বিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছে ব্রাজিল। ৫ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে তারা। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের থামিয়ে দিল উরুগুয়ে।
কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও একইভাবে হেরেছিল সেলেসাওরা। সেবারও বিশ্বকাপের শেষ আটের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল ব্রাজিল। তবে উরুগুয়ের বিপক্ষে কেন এমন হার!
বর্তমানে ব্রাজিল দলের সবচেয়ে বড় তারকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে তিনি ছিলেন না। কার্ডজনিত কারণে এই ম্যাচে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে তার প্রভাব হারে হারে টের পেয়েছে ব্রাজিলিয়ানরা। তাদের এমন হারের প্রথম কারণ হতে পারে ভিনিসিউসের দলে না থাকা। চোটের কারণে আরেক তারকা নেইমার না থাকায় একমাত্র ভরসা ছিল ভিনিসিউস। তবে পরপর দুই ম্যাচে কার্ড দেখায় কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারেননি তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের তারকা ভিনিসিউসের না থাকা বেশ ভুগিয়েছে দলকে। বিশেষ করে বাঁ প্রান্তে ভিনিসিউসকে বেশ প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে বেশ ছন্দে আছেন এই খেলোয়াড়। তিনি দলে থাকলে হয়তো কিছু একটা করতে পারতেন। অন্তত প্রতিপক্ষকে এতটুকু হলেও চাপে রাখতে পারতেন তিনি। তবে দর্শকদের সারিতে বসে ব্রাজিলের এমন হার দেখতে হলো তাকে।
ব্রাজিলের আরও একটি হারের কারণ হলো স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে না পারা। নিজেদের চেনা ছন্দে খেলতে পারেনি ব্রাজিল। বারবার তাদের খেলা নষ্ট করে দিচ্ছিল উরুগুয়ে। হয়তো এটা উরুগুয়ের একটা কৌশল ছিল। তবে এর চেয়ে কঠিন অবস্থা থেকেও ম্যাচ বের করে আনার ক্ষমতা রয়েছে ব্রাজিল দলের। কিন্তু গতকালের ম্যাচ বের করে আনার মতো একজন নেইমার কিংবা ভিনিসিয়াস তাদের দলে ছিল না বলেই হয়তো ব্রাজিলের এমন দশা হয়েছে।
পরিস্থিতি যেমনই হোক, যত কঠিন অবস্থায় তৈরি হোক না কেন, সেখান থেকে ম্যাচ জেতার অনেক প্রমাণ রয়েছে ব্রাজিলের। এমন অহরহ ম্যাচ জিতেছে তারা। পিছিয়ে পড়েও কীভাবে ম্যাচ জিততে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে সেলেসাওদের। মোট কথা বলতে গেলে, স্নায়ুচাপ ধরে রাখার আধ্যাত্মিক একে ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে উরুগুয়ের বিপক্ষে এইটুকু চাপেই তারা শেষ! গত দুই বছরে পেনাল্টিতে কোনো উন্নতি করতে পারেনি দলটি। এবারও পেনাল্টিতে স্নায়ুচাপ সামলাতে পারলো না দলটি! শেষ পর্যন্ত স্নায়ুচাপের পরীক্ষায় ব্যর্থ; ম্যাচটাও হেরে গেলেন।
অনেকেই বলে থাকেন, আগের ব্রাজিল এখন আর নেই। ব্রাজিলের খেলায় যে শৈল্পিকতা ছিল, তা আর এখন নেই। দলের মধ্যে নেই কোনো সমন্বয়। উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের সমন্বয়হীতা বোঝা গেছে স্পষ্ট। আগের ম্যাচেও ঠিক সময়ে ঠিকঠাক পাস দিতে পারেনি দলের খেলোয়াড়রা। উরুগুয়ের বিপক্ষেও এমন চিত্র দেখা গেছে। বারবার বলের দখল হারিয়েছে তারা। আগের ম্যাচের থেকে এই ম্যাচে অনেক কম পাস দিয়েছে ব্রাজিল। যা এই ম্যাচে ভুগিয়েছে সেলেসাওদের। পুরো ম্যাচে তারা দুটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। তবে দুটিই তারা মিস করেছে। সবমিলিয়ে উরুগুয়েকে কোনো চাপে ফেলতে পারেনি ব্রাজিল। উল্টো স্নায়ুচাপ ধরে না রাখতে পেরে টাইব্রেকারে ম্যাচ হেরেছে তারা।