বয়স ৩৯ ছাড়িয়ে গেলেও এখনো খেলে যাচ্ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আরও একটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নে পর্তুগালের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই তারকা। তবে সময় যে ফুরিয়ে আসছে তা টের পাচ্ছেন তিনি। এবারের আসরকেই নিজের শেষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন বলে জানালেন পাঁচবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী এই ফরোয়ার্ড।
জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুর্ট অ্যারেনায় শেষ ষোলোর ম্যাচে স্স্নোভেনিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে পর্তুগাল। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য ড্র ছিল। তবে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল রোনালদোর সামনে। অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি পেয়েছিল দলটি। কিন্তু লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন তিনি।
ম্যাচ শেষে তাই স্বাভাবিকভাবেই অনুভূতিটা মিশ্র রোনালদোর। এর মধ্যেই ইউরোপীয় এই প্রতিযোগিতায় নিজের শেষ আসর জানিয়ে বলেন, 'এটি অবশ্যই আমার শেষ ইউরো। তবে আমি এতে অনুপ্রাণিত নই, আমি ফুটবলের সঙ্গে জড়িত সবকিছু দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি। খেলাটির জন্য আমার যে উৎসাহ আছে, আমার ভক্তদের এবং আমার পরিবারকে দেখার উত্তেজনা, আমার প্রতি মানুষের যে স্নেহ রয়েছে।'
তবে ইউরোতে শেষবারের মতো খেললেও এখনই ফুটবল ছাড়ছেন না আল-নাসর তারকা, 'এমন নয় যে আমি ফুটবল ছেড়ে দিচ্ছি, কারণ আমি যদি করি, তাহলে আমার জন্য আর কী করার বা জেতার থাকে? এটা আরও এক পয়েন্ট বা এক কম পয়েন্টে নামবে না। মানুষকে খুশি করাই আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে।'
'আমাকে আবার পেনাল্টিটা দেখতে হবে। আমি জানিনা শট ভালোভাবে নিয়েছিলাম কি না। পুরো বছরে আমি একটা পেনাল্টিও মিস করিনি। কিন্তু যখন সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, তখনই অবাক সেটা ঠেকিয়ে দিল।' স্স্নোভেনিয়ার বিপক্ষে রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচ শেষে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানান দিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে পেনাল্টিটা মিস করেছিলেন রোনালদো। এমন মিসের পর পর্তুগিজ এই মহাতারকাও ধরে রাখতে পারেননি নিজেকে। ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়। যদিও ১২০ মিনিটের ম্যাচ শেষে শুটআউটে দলের হয়ে প্রথম পেনাল্টি নিয়েছিলেন তিনিই। তাতে লক্ষ্যভেদ করে উপস্থিত দর্শকদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন এই স্ট্রাইকার।
কান্নায় ভেঙে পড়া রোনালদোকে শুটআউটে সবার আগে দেখা যাবে এমনটা ভাবেননি অনেকেই। তবে এদিন সবার আগেই এলেন রোনালদো। আগেরবারের ভুল করলেন না। জোরালো শটে বল পাঠালেন জালে। সবার আগে পেনাল্টিতে আসার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ম্যাচের পরেই, 'আপনারা দেখেছেন যে আমি পেনাল্টি মিস করেছি কিন্তু তারপরেও ট্রাইবেকারে আমি প্রথম গোল করার জন্যে পেনাল্টি নিয়েছি। দলের যখন প্রয়োজন তখন আমাকে সবার আগে দায়িত্ব নিতে হবে!
রোনালদোর সহজ উক্তি, 'এখানে ভয় পেলে চলবে না। আমি এসব চাপের মুখোমুখি হতে কখনো ভয় পাই না। কখনো হয়তো ঠিকমতো সবকিছু করতে পারি, কখনো হয়তো ভুল করি। কিন্তু 'হাল ছেড়ে দেওয়া' কথাটা আমার নামের সঙ্গে যায় না।'
স্স্নোভেনিয়ার বিপক্ষে কঠিন এক ম্যাচের পর রোনালদো অবশ্য প্রতিপক্ষের সমালোচনা করতেও ছাড়লেন না। তাদের লো বস্নক ডিফেন্সের সমালোচনাও করলেন প্রকাশ্যে, 'আমি মনে করি পর্তুগালের এই জয় প্রাপ্য, কারণ আমাদেরই ম্যাচে আধিপত্য ছিল বেশি। স্স্নোভেনিয়া বলতে গেলে পুরো ম্যাচেই ডিফেন্স করে গিয়েছে। এটা খুবই কঠিন। পুরো দলকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। বিশেষ করে আমাদের গোলরক্ষককে, যে তিনটা দারুণ সেইভ করেছে।'
পেনাল্টি মিস করলেও দলের কোচ রবার্তো মার্টিনেজকেও পাশেই পাচ্ছেন রোনালদো। কোচের মুখেও ম্যাচের শেষে শুধুই রোনালদো বন্দনা, 'সে আমাদের জন্য একটা উদাহরণ। পেনাল্টি মিসের পর ওই আবেগ অসামান্য। তার ক্যারিয়ারে সে যা অর্জন করেছে তার বিপরীতে এমন পেনাল্টি হাতছাড়া করায় তার খুব বেশি ভাবার দরকার ছিল না।'
রোনালদো প্রথম পেনাল্টি নেবেন শুটআউটে এমন আত্মবিশ্বাসটাও ছিল কোচ মার্টিনেজের, 'ওই পেনাল্টি মিসের পর সেই শুটআউটে প্রথম পেনাল্টি টেকার ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম সেইই সবার আগে যাবে আর আমাদের জয়ের পথ দেখাবে। যেভাবে সে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটা আমাদের জন্য উদাহরণ আর আমরাও খুব গর্বিত।'