কণ্ঠরোধে কাউন্সিলরশিপ পাস বাফুফের স্বার্থ হাসিল

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাফুফের এজিএম শেষে শনিবার গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। পাশে বাফুফের অন্য কর্মকর্তারা -ওয়েবসাইট
রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শনিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর্থিক অনটনে থাকা বাফুফে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সভা আয়োজন করে। সভার উদ্দেশ্যই ছিল নারী ফুটবল লিগে শীর্ষ চার দলের কাউন্সিলরকে আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ করে দেওয়া। শনিবার বার্ষিক সাধারণ সভায় সেটারই অনুমোদন হয়েছে। জেলা, ক্লাব ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে মনোনীত প্রতিনিধিরা এই সভায় উপস্থিত হন। ঘণ্টা দু'য়েক চলা বার্ষিক সভা শেষে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নির্বাহী কমিটির বেশ কয়েকজনকে নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আসেন। প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আমাদের নিয়মিত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রুটিন কিছু বিষয়ের সঙ্গে শুধু নারী লিগের ৪টি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ অনুমোদিত হয়েছে।' শনিবার সভায় সিদ্ধান্ত হলেও এই সভার কার্যবিবরণী পরবর্তী সাধারণ সভায় অনুমোদন হওয়ার পর কি কাউন্সিলরশিপ সক্রিয় হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। পাশে দাঁড়ানো সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, 'আজকের (শনিবার) সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ায় এখন থেকেই কার্যকর। পরবর্তী সভায় কার্যবিবরণী অনুমোদন আনুষ্ঠানিকতা।'  বাফুফের কর্তারাই বছর দেড়-দুই আগে ফিফার বরাত দিয়ে বলেছিলেন নির্বাহী কমিটির আকার ও কাউন্সিলর কমাতে। বাফুফে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটিও করেছিল। সেই বাফুফে দুই বছর পর ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে কাউন্সিলর বৃদ্ধি করল। ফিফার নির্দেশনা এক রকম, বাফুফের কর্মকান্ড আরেক রকম। বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, 'ফিফা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিল, আমরা বলেছি কমালে ফিফাকেই কমাতে হবে। সাধারণ সভা ছাড়া কমানো-বাড়ানো সম্ভব না। সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এখন ফিফাকে জানাব।' কাউন্সিলরশিপ পাওয়া চারটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফুটবল দল ছাড়া বাকি তিন দলই বাফুফে কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট। চ্যাম্পিয়ন হওয়া নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির সঙ্গে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের সম্পৃক্ততার কথা শোনা যায় ফুটবলাঙ্গনে। আতাউর রহমান ভুইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব বাফুফে সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভুইয়া মানিকেরই। বাফুফে কর্তাদের ভোট বৃদ্ধি করতেই কি তিন মাস আগে এই সিদ্ধান্ত? সভাপতি সালাউদ্দিন ও সালাম মুর্শেদী এর সদুত্তর দিতে পারেননি। সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, 'আমাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ফুটবলেও সর্বশেষ লিগের শীর্ষ দলগুলো কাউন্সিলরশিপ পায়। সর্বশেষ লিগে যারা অবস্থান করে তারাই ভোটাধিকার পেয়ে থাকে। নারী লিগেও সেই নিয়ম হয়েছে। আগামীতেও যারা শীর্ষে থাকবে তারাই পাবে।' প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো চার বছরে ৭০-৮০ কোটি টাকার মতো খরচ করে। এরপর বাফুফের নির্বাচনে একটি ভোটাধিকার পায়। সেখানে নারী দল একটি লিগে মাত্র ৬-৭ ম্যাচ খেলেই ভোটাধিকার পেল। এ নিয়ে বাফুফে সভায় চরম মতবিরোধ ছিল। নানা উপেক্ষার পর এজিএমে শীর্ষ ৪ দলকে কাউন্সিলরশিপ প্রদানের জন্য প্রেরণ করা হয়। সাধারণ সভায় উপস্থিত হওয়া অনেক প্রতিনিধি সহসাই নারী লিগের ক্লাবগুলোর পক্ষে ছিলেন না। আলোচ্যসূচিতে কাউন্সিলরশিপ প্রসঙ্গে আসলে ভোটাভুটি হয়। এতে আপত্তি তুলে অনেকে মতামত রাখতে চাইলেও মন্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। নতুন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার কণ্ঠরোধ করেছেন বলে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর অভিযোগ তুলেছেন। তড়িঘড়ির ভোটাভুটিতে উপস্থিত অনেকেই নিশ্চুপ ছিলেন। কেউ সবুজ বোর্ডে হঁ্যা আবার কেউ লাল বোর্ডে নাও তুলেছিলেন। দুই-তিনজন জোরে পাস পাস বলায় নির্বাহী কমিটির মঞ্চ থেকে হঁ্যা জয়যুক্ত ধরে কাউন্সিলরশিপ অনুমোদন আসে। বাফুফের পদত্যাগ করা নির্বাহী সদস্য ও নীলফামারী জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফ হোসেন মুন। তিনিও উপস্থিত ছিলেন এই সভায়। নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করে আবার বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভায় আসার বিষয়টি অন্যরকম হলেও, এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন মুন, 'আমি এখানে জেলার (নীলফামারী) প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি। আমি তৃণমূলের লোক, অনেক জেলার অনেকেই এখানে এসেছেন। যারা আমার প্রিয় ও কাছের মানুষ। এই সাধারণ সভার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেই মূলত আসা।' বাফুফের সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মুন বলেন, 'এ রকমটা হবে প্রত্যাশিতই ছিল। সবকিছুই তাদের অনুকূলে ও সাজানো। কথা বলেও কোনো প্রতিকার বা পরিবর্তন হয় না। তাই অনেকেই কথা বলার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছে। এজিএম এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তাদের যদি বোধ হয় তাহলেই কেবল ফুটবল উন্নয়ন সম্ভব, না হলে নয়।' শরীয়তপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মোজাম্মেল হক চঞ্চল নারী ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ প্রদানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'অনেকেই না তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা পাস করিয়েছে।'