ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে শনিবার শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে। গ্রম্নপ পর্বে কোনোমতে রক্ষা পেয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করা আজ্জুরিদের জন্য সুইস পরীক্ষা যে মোটেই সহজ হবে না তা অনুমেয়। গ্রম্নপের শেষ ম্যাচে ৯৮ মিনিটে অনেকটাই অপরিচিত মাত্তিয়া জাকাগনির গোল ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ড্র করে গ্রম্নপ বি'র দ্বিতীয় স্থান লাভ করে ইতালি। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল স্পেনের থেকে তারা গ্রম্নপ পর্বে পাঁচ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল।
কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি বলেছেন তার দল এগিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু গ্রম্নপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্রোয়েটদের বিপক্ষে খেলোয়াড়দের মান নিয়ে সমালোচনাকে তিনি মানতে পারছেন না। ৬৫ বছর বয়সি স্পালেত্তি গণমাধ্যমের মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে যারা তার দলকে চাপে রাখতে চায় তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এমন কিছু না করতে যাতে দলকে বাড়তি মানসিক চাপে পড়তে হয়। দুইবারের বিজয়ীদের কাছ থেকে এখনো তেমন কোনো পারফরমেন্স দেখেনি ফুটবলপ্রেমীরা, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে তিন বছর আগের উড়ন্ত ইতালিকে এবার
\হখুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিন্তু নিজেকে সামনে নিয়ে এসে স্পালেত্তি বলেছেন, তার দল ধীরে ধীরে টুর্নামেন্টে উন্নতি করছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটাই বলব আগে দল যা করেছে তা অতীত। এই দলটিরও ভালো করার সম্ভাবনা আছে।'
যদিও খালি চোখে স্পালেত্তির নতুন চেহারা ইতালিকে নিয়ে এখনো গর্ব করার মতো কিছু দেখছে না সমর্থকরা। ইউরো ২০২০'এ শিরোপা জয়ে গ্রম্নপ পর্বে এই সুইজারল্যান্ডকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ইতালি। ওই ম্যাচে ম্যানুয়েল লোকাত্তেলি দুই গোল করেছিলেন। বাকি গোলটি এসেছিল আরেক তারকা সিরো ইমোবিলের কাছ থেকে। দু'জনই এবার স্পালেত্তির দল থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের সঙ্গে আরও বিবেচনা করা হয়নি মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তিকে। এ ছাড়া দলের দীর্ঘদিনের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার লিওনার্দো বনুচ্চি ও গিওর্গিও চিয়েলিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন। জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড ফেডেরিকো চিয়েসা ফর্মহীনতা ভুগছেন।
ল্যাজিও ফরোয়ার্ড ২৯ বছর বয়সি জাকাগনি বলেছেন নকআউট পর্বে তার দল ঠিকই জ্বলে উঠবে। উয়েফার ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে জাকাগনি বলেন, 'আমরা এখন শুধু সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটির প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তা করছি। আমরা প্রায়ই দেখে থাকি জাতীয় দল কখনো কখনো এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে। এরপর আবারও সময়মতো ঘুরে দাঁড়াই। এখন আমরাও এটাই নিজেদের নিয়ে প্রত্যাশা করছি। আমরা ইতোমধ্যে সুইজারল্যান্ডের অনেক ভিডিও দেখেছি। তারা খুবই সংঘবদ্ধ দল। তারা একে অন্যের জন্য খেলে। এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা কঠিন হবে।'
এদিকে সুইজারল্যান্ডের কোচ মুরাত ইয়াকিন বেশকিছু সিরি-এ খেলোয়াড় দলে রেখে দারুণ আত্মবিশ্বাসী মনোভাব পোষণ করেছেন। বিশেষ করে ইন্টার মিলানের তারকা গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের সঙ্গে বোলোনিয়ার তিন খেলোয়াড় ড্যান এনডোয়ে, রেমো ফ্রুলার ও মাইকেল এই বিশার নিজেদের প্রমাণ করেছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ডিফেন্ডার রিকাডো কালাফিওরিকে পাচ্ছে না ইতালি। কিন্তু জাকাগনি বলেছেন গোলের পর খেলোয়াড়দের অতি উদযাপনের কারণে বুকের পাঁজরে কিছুটা আঘাত পেলেও আগামী ম্যাচের জন্য তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত।
তবে প্রশ্ন উঠেছে ইতালির সেরা সেট-আপ নিয়ে, বিশেষ করে তারকা মিডফিল্ডার জর্জিনহো কিছুটা ফর্মহীনতায় ভুগছেন। ক্রোয়েটদের বিপক্ষে স্ট্রাইকার মাতেও রেটেগুই কিছুটা কঠিন সময় পার করেছে। আলবেনিয়ার সঙ্গে ২-১ গোলের জয় ও স্পেনের বিপক্ষে ১-০ গোলের পরাজয়ের ম্যাচে যেভাবে গিয়ানলুকা সামাক্কা খেলতে পারেননি।
সর্বশেষ বিশ্বকাপ বাছাইবপর্বে সুইসদের বিপক্ষে পেরে ওঠেনি ইতালি। জার্মানির বিপক্ষে এবারের ইউরোর গ্রম্নপ পর্বের শেষ ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ১-১ গোলে ড্রয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা যে কোনো দলের বিপক্ষে হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গ্রম্নপ এ'তে অপরাজিত থেকে সুইজারল্যান্ড নকআউট পর্বে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে জার্মানিকে এক পয়েন্ট আদায় করতে ৯২ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এই ফলাফলে সুইজারল্যান্ড গ্রম্নপের দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের রাউন্ডের টিকিট পেয়েছে। যদিও এটা তাদের জন্য একদিক থেকে ভালোই হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। কারণ সামনে এগিয়ে যেতে হলে তাদের জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স কিংবা বেলজিয়ামের মতো দলগুলোর
\হবিপক্ষে খেলতে হবে না।
ইউরো ২০২০'এও সুইজারল্যান্ড প্রমাণ করেছে তারা বড় দলগুলোকে যে কোনো সময়ই বিপদে ফেলতে পারে। শেষ ষোলোতে তারা কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্সকে পেনাল্টিতে পরাজিত করে বিদায় করেছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য স্পেনের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জয় তাদের দারুণ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।
ফ্রুলার উয়েফার ওয়েবসাইটে বলেছেন, 'শেষ ১৬'তে কিভাবে জিততে হয় আমরা জানি। গ্রম্নপ পর্বের তিন ম্যাচে আমরা যা খেলেছি তার থেকে ভালো করার বিকল্প নেই। জার্মানির বিপক্ষে আমরা সাম্প্রতিক সময়ের সেরা খেলা খেলেছি।' এই ম্যাচের বিজয়ী দল কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড ও স্স্নোভাকিয়ার মধ্যে বিজয়ী দলের মুখোমুখি হবে।
