টি২০ বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবগুলো আসরে অংশ নিয়েছে মোট ৯টি দল। যাদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ কখনো সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। চলমান টি২০ বিশ্বকাপের নবম আসরে ব্যাটারদের হতশ্রী পারফম্যান্স সত্ত্বেও নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালের বেশ কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে নিজেদের বিভীষিকাময় ব্যাটিংয়ে সেমির টিকিট কাটতে ব্যর্থ হয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। শেষ পর্যন্ত সাত ম্যাচে তিন জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছে হাথুরুর শিষ্যরা।
টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হাহাকার নতুন নয়। কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। সবশেষ সমীকরণ মিলিয়ে আফগানিস্তানের কাছে জেতার বদলে হারের স্বাদে আরও একবার দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়েছে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের দৈন্যদশা।
ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়ার হারের পর হিসেবের বাইরে অবস্থান করা বাংলাদেশের সামনেও অর্ধ উন্মুক্ত হয়ে যায় সেমিফাইনালের দ্বার। রশিদ খানদের দেওয়া মাত্র ১১৬ রানের লক্ষ্য ১২.১ ওভারে টপকাতে পারলেই হয়ে যেত ইতিহাস। প্রথমবারের মতো সেই দুয়ার পেরোতে পারলেই টি২০ তথা আইসিসির কোনো বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ পা রেখে ফেলতো শেষ চারে। যদিও সেই রূপকথা আর বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়নি ৮ রানের পরাজয়ে। সুপার এইটে খেলতে পেরেছে এতেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন অধিনায়ক, কোচ ও বিসিবির শীর্ষ কর্তারা।
দলের এমন ব্যর্থতার দিনেও বাংলাদেশের সুপার এইটে ওঠা নিয়ে গর্ব করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এবং ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। সম্প্রতি একটি জনসমাবেশে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বলা কয়েকটি কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সে বক্তব্যে বাংলাদেশ দলের কজন খেলোয়াড়কে বাচ্চা বলতেও শোনা গেছে পাপনের কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, 'এই যে প্রথমবারের মতো বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলো খেলতে গেছে, ক্রিকেট খেলতে গেছে, এই যে আমরা সুপার এইটে উঠলাম, এর আগে তো কখনো পারিনি।'
অথচ ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই সুপার এইটে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে গ্রম্নপে থেকে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় টাইগাররা।
আফগানিস্তান ম্যাচ শেষে শান্ত বলেছিলেন 'তিন উইকেট হারানোর পর আমরা সেমিফাইনালের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছিলাম।'
কিন্তু পাপন বলেন, 'আমরা হারতে পারি কিন্তু কাউকে ভয় পাই না। লড়াই করে জিতব আমরা। এটা একমাত্র সম্ভব এই নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে।'
জনসমাবেশের শেষ মুহূর্তে দলের তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে তিনি আরও বলেন, 'এই যে তানজিদ তামিম, বাচ্চা ছেলে, কি সব বাঘা বাঘা বোলার, ভয় পায় না কিন্তু, এক ফোটাও ভয় পায় না। তানজিম সাকিব, এটাও একটা বাচ্চা ছেলে, জীবনে প্রথম খেলতেছে (বিশ্বকাপ), এসব (বিপক্ষ) দলের পেস্নয়ারদের দেখেই নাই, নামই শুনছে খালি। কিন্তু সে যখন বল করে একটুও ভয় পায় না। বড় বড় পেস্নয়াররা থমকে গেছে, যে এ কে? কই থেকে আসল। রিশাদ হোসেন বাচ্চা ছেলে, ওর বলই বুঝতে পারে না।'
নাজমুল হাসান পাপন লড়াইয়ের কথা উলেস্নখ করলেও এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল আসলে কতটা লড়াই করার প্রবণতা দেখিয়েছে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
পাপনের এমন বক্তব্য বেশ হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে ক্রিকেট পাড়ায়। যেখানে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পরে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করা যুদ্ববিদ্ধস্ত আফগানিস্তান বাংলাদেশকে ডিএলএস মেথডে ৮ রানের হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে, সেখানে সুপার এইট নিয়েই খুশি বিসিবি।
সাত ম্যাচে মাত্র তিন জয়ে অনেকটা সন্তষ্ট ও নির্ভার থাকার প্রতিচ্ছবি ফুঠে ওঠেছে পাপনের কন্ঠে, যা এদেশের ক্রিকেটের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। যে কারণে শুধু খেলোয়াড়দেরকেই নয়, কোচ, ক্রিকেট বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই ব্যর্থতার কাঠগড়ায় আসামি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক।