ক্লান্তি নিয়ে সেমিফাইনালে মাঠে নেমেছিল আফগান ক্রিকেটাররা
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া ডেস্ক
সুপার এইটের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান। উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা পরই আবারও মাঠে নেমেছে রশিদ খানের দল। আশানুরূপ প্রস্তুতি ছাড়াই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে আফগানিস্তান। আর যার প্রভাব পড়েছে মাঠের পারফরমেন্সে।
বিশ্বকাপজুড়ে দারুণ পারফরম করা আফগানিস্তানের এমন বাজে পরিস্থিতি দেখার জন্য অনেকেই প্রস্তুত ছিলেন না। প্রথমবার সেমিফাইনালে খেলার চাপ নিতে না পারা নাকি ক্লান্তির কারণে এমন বিপর্যয়, সেটি নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
ইতিহাস গড়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল আফগানিস্তান। তবে সেমিফাইনালে লজ্জার ইতিহাস গড়ে বিদায় নিয়েছে তারা। কিন্তু সুপার এইটের শেষ ম্যাচ খেলে আবারও সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচ খেলা কোনো দলের জন্যই যে আদর্শ নয় তা বলেছেন আফগানিস্তানের কোচ ট্রট।
ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, 'গ্রম্নপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলে প্রথম সেমিফাইনাল খেলতে নামা অবশ্যই আদর্শ নয়। গতকাল এখানে এলাম, আজ খেললাম, কোনো বিরতিও পেলাম না। তবে যেহেতু সূচি সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম, অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই।'
আফগান কোচ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ঘুমানোরও সুযোগ পাননি আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা। ট্রট বলেন, 'আমরা রাত ৩টায় হোটেলে যাই, সকাল ৮টায় হোটেল ছাড়ি। মাত্র ৫ ঘণ্টা পরেই। ফলে ছেলেরা ভালো ঘুমের দেখা পায়নি। যার কারণে অনেক ক্লান্ত ছিল। সেমিফাইনাল খেলেছেও এই প্রথম। আশা করব ছেলেরা এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবে।'
এদিকে আফগানিস্তান সেমিফাইনাল খেলার আগে কেমন সময় পার করেছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ করা এক পোস্টে বলেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন। তিনি বলেন, 'সেন্ট ভিনসেন্টে সোমবার রাতে জিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে আফগানিস্তান। মঙ্গলবার চার ঘণ্টা ফ্লাইট দেরির পর ত্রিনিদাদে পৌঁছে অনুশীলনের সময় পায়নি কিংবা নতুন ভেনু্যর সঙ্গে মানিয়েও নিতে পারেনি। খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মানের প্রকট অভাব।'
মাত্র ৫৬ রানে অলআউট হলো আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এত কম রানে আউট হওয়ার নজির নেই। এমন ভরাডুবির পর কোচ জোনাথন ট্রটের চিন্তায় দলের মিডল অর্ডার। পুরো আসরেই গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরানের ওপেনিং জুটিই মান বাঁচিয়েছিল আফগানদের। সেমিফাইনালে গুরবাজ ফিরলেন শূন্য রানে আর জাদরানের ব্যাট থেকে এলো মোটে ২ রান।
আর তাতেই বেরিয়ে এলো আফগান ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা। কোচ ট্রট জানালেন মিডল অর্ডারের ব্যাটার খুঁজতে চান তিনি, 'সম্ভবত আমরা গুরবাজ আর ইব্রাহিমের রানের ওপর একটু বেশিই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। আর কেউই রান করতে পারেনি। আমাদের এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের আরও কিছু ব্যাটার দরকার যারা রান করবে এবং ওপেনারদের মতোই ধারাবাহিক হবে। যেটা ম্যাচেও আমাদের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। তাই সামনের দিনে এটাই আমাদের প্রজেক্ট।'
এমন ম্যাচের পর অবশ্য কিছুটা দায় দিলেন পিচের দিকেও, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে আফগান কোচ জোনাথন ট্রটের বক্তব্য, 'কিছু বলে আমি নিজেকে সমস্যায় ফেলতে চাই না। এটা এমন পিচ ছিল না যেটাতে সেমিফাইনালের মতো ম্যাচ আপনি চাইবেন। এটাই সোজাসাপ্টা ব্যাপার। এটা ফেয়ার প্রতিযোগিতা থাকা উচিত বল-ব্যাটের। আমি বলছি না একদম ফ্ল্যাট হবে যেখানে স্পিন হবে না, সিম মুভমেন্ট হবে না। বলছি ব্যাটারদের ভীতির কারণ হয় এমন হওয়াও উচিত না। ফুট মুভমেন্ট যাতে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করতে পারে এমন হওয়া উচিত। দক্ষতা কাজে লাগানোর পরিস্থিতি থাকা উচিত।'
তবে বিশ্বকাপের এমন এক ম্যাচে আগে বোলিং না করার আক্ষেপ নেই জোনাথন ট্রটের। বরং এবারের আসরের ক্রিকেটীয় চেতনা ধরে রেখেই সামনে এগুনোর লক্ষ্য তার।
এবারের বিশ্বকাপ থেকে অনেক কিছু অর্জন করেছে আফগানিস্তান। গ্রম্নপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারানোর পর শেষ আটে তারা হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপটা বেশ উপভোগ করেছেন আফগান অধিনায়ক। রশিদ খান বলেন, 'আমরা এই টুর্নামেন্ট উপভোগ করেছি। টুর্নামেন্টের আগে যদি কেউ আমাদের বলত, তোমরা সেমিফাইনাল খেলবে, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শীর্ষ কোনো দলের বিপক্ষে হেরে যাবে। আমরা তা ভালোভাবেই গ্রহণ করতাম। এটা মাত্র শুরু, যেকোনো দলকে হারানোর বিশ্বাস আমাদের আছে। আমাদের শুধু প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে হবে। এটা আমাদের জন্য দারুণ শেখার অভিজ্ঞতা ছিল। এই টুর্নামেন্ট থেকে আমরা বিশ্বাস পেয়েছি। আমরা জানি, আমাদের সামর্থ্য আছে। এখন শুধু কঠিন পরিস্থিতি, চাপের মুহূর্তগুলো সামলাতে হবে।'