তিন জয় ও তিন হার- এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এটাই বাংলাদেশের জয়-পরাজয়ের খতিয়ান। জয়ের সংখ্যায় এটিই বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ। জায়গা করে নিয়েছে সুপার এইটেও। তবে জয়-পরাজয়কে এক পাশে সরিয়ে ব্যাটে-বলে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিচারে বসলে হতাশই হতে হয়। বোলিংয়ে তাও রিশাদ হোসেন-তানজিম সাকিব ঔজ্জ্বল্য ছড়ালেও, ব্যাটিং উইকেটেও ব্যর্থ টাইগার ব্যাটাররা। সুপার এইটে দুই ম্যাচেই লজ্জাজনক হার দেখতে হয়েছে টাইগারদের।
চলমান টি২০ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। কাগজে-কলমে এখনো টিকে থাকলেও ভারতের বিপক্ষে হারের পর টাইগারদের সেমিফাইনালের আশা তেমন একটা নেই বললেই চলে। ভারতের বিপক্ষে দলের বাজে পারফরম্যান্সের পর চটেছেন সাবেক ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। তাই ক্রিকেটপাড়ায় এখন আলোচনার মূল বিষয়, এই দুই ক্রিকেটারের অবসর। তবে সাকিব ও রিয়াদকে মোটামুটি ফর্ম থাকতেই অবসর নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাদের বিকেএসপির গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটা বাদ দিলে কোনো ম্যাচেই বাংলাদেশ দেড়শ' রানের পুঁজিও সংগ্রহ করতে পারেনি। অ্যান্টিগায় বাকি দল যেখানে অনায়াসেই রান করেছে, বাংলাদেশের ব্যাটারদের সেখানেও করতে হয়েছে সংগ্রাম। ৬ ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের একমাত্র অর্ধশতক হয়ে আছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সাকিবের ইনিংসটি। ওই ইনিংস বাদ দিলে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি কোনো ব্যাটারই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪০ রান করা বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে করেছে ১৪৬ রান। ৯টি বিশ্বকাপ খেলা বাংলাদেশ এখনো পড়ে আছে সেই ২০১০ সালের ক্রিকেটেই।
বাংলাদেশের এখন জুনিয়রদের নিয়েই সামনের দিকে তাকানো উচিত বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী এই উইকেটকিপার জানান, তরুণ খেলোয়াড়দের এখন টানা সুযোগ দেওয়া উচিত এবং তারা কয়েকটা খারাপ পারফরম্যান্স করলেই যেন ছুড়ে ফেলা না হয়।
গিলক্রিস্টের ভাষায়, 'বাংলাদেশের উচিত কিছু তরুণ খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়া। তাদেরকে টানা খেলার সুযোগও দিতে হবে। কয়েকটা খারাপ পারফরম্যান্স গেলেই দল থেকে ছুঁড়ে ফেলা যাবে না।'
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে আছেন টি২০ ক্রিকেটেরই সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার। এখন পর্যন্ত হওয়া ৯টি বিশ্বকাপেই খেলেছেন সাকিব আল হাসান। আর মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ খেলেছেন ৮টি বিশ্বকাপ। অথচ এই বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অর্ধশতকটা বাদ দিলে ব্যর্থই বলা যায় সাকিবকে। আর শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে ফিনিশিং দেওয়ার ব্যাপারটা বাদ দিলে ব্যর্থ রিয়াদও। দলের প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি দুই সিনিয়রই। তাই গিলক্রিস্টের পরামর্শ, বাংলাদেশকে এখন সাকিব ও রিয়াদকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ দলে কারা ভিত্তি হবে সেটি তাদের ঠিক করতে হবে। দলের নেতা কে হবে, কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে এসব ভাবার সময় এখন। মাহমুদউলস্নাহ ও সাকিব তাদের ক্যারিয়ারের শেষ দিকে চলে এসেছে। তাদেরকে ছাড়াই এখন এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে বাংলাদেশের।'
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও হেরেছে বাংলাদেশ। এটা আত্মবিশ্বাসের জন্য ভালো নয় বলে মত গিলির, 'তারা সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে হেরেছে সেটি দলের আত্মবিশ্বাসের জন্য ভালো নয়। হঁ্যা, এটির জন্য তারা সুপার এইটে উঠতে পারেনি এমন নয়। কিন্তু এসব ম্যাচে জয় মানসিকতায় অনেক প্রভাব ফেলতে পারে।'
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব-রিয়াদের অবসর প্রসঙ্গে ফাহিম বলেন, 'এটা ওরা বুঝবে (কখন অবসর নিতে হবে)। সিদ্ধান্তটা ওদের নেওয়া উচিত। ওদেরও বোঝা উচিত একটা সময় আসে কিন্তু যখন সবারই চোখে পড়ে কে ভালো খেলে, কে খারাপ খেলে। দলে কার অবদান রাখার সুযোগ আছে কার নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'এখানে কিন্তু একটা দায়বদ্ধতার ব্যাপারও আছে। ওরা যেই মাপের ক্রিকেট খেলেছে; ওদেরই উচিত মোটামুটি ফর্ম থাকতে অবসরে যাওয়া, যেন ওরা বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। সাকিব নিজেও বলেছে, যেদিন সে ড্রাইভিং সিটে থাকবে না সেদিন থেকে আর খেলবে না। জাজমেন্টটা এখন নিজের থেকে আসা উচিত।'
সুপার এইটে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পরে নিজের অবসর নিয়ে কথা বলেছেন সাকিব। শেষ বিশ্বকাপ কি না প্রসঙ্গে টাইগার এই অলরাউন্ডার বলেন, 'শেষ কি না জানি না। পৃথিবীতে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হওয়া সম্ভব। এটা তো সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড, আমারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। এগুলো এখানে আলোচনার বিষয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।'