বিশ্বকাপে ১ রানে হারের আক্ষেপ

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
নেপালের আগে ২০১৬ বিশ্বকাপে ১ রানে হারের আক্ষেপে পুড়েছিল বাংলাদেশও -ওয়েবসাইট
ইতিহাস গড়ার খুব কাছে গিয়েও হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে নেপাল। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তির বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে ১ রানে হারের আক্ষেপে পুড়েছে আইসিসির সহযোগী দেশটি। টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে অবশ্য এমন আক্ষেপের গল্প প্রথম নয়। এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছে আরও পাঁচবার। ১ রানে হারের আক্ষেপে পুড়েছে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। হাতে ৮ উইকেট। ৪২ বলে প্রয়োজন মাত্র ৩৪ রান। নেপালের সমর্থকরা হয়তো তখনো ভাবতে পারেনি এ ম্যাচ তারা হারবে এবং সেটা ১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইতিহাস গড়া না হলেও নেপালের ক্রিকেটে সেন্ট ভিনসেন্টের শনিবার (১৫ জুন) দিনটি ইতিহাস হয়েই থাকবে। এদিন পরাশক্তি প্রোটিয়াদের ১১৪ রানে আটকে দেওয়ার পর ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৪ রানে থামে নেপাল। ইনিংসের শেষ বলে গুলশান ঝা রান আউট না হলে সুপার ওভার গড়াতে পারত ম্যাচ। আরেকবার সুযোগ পেত নেপাল। ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে ঠিক একইভাবে ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে রান নিতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তাতে ১ রানে হারের আক্ষেপে পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচটিতে শেষ ৩ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ২০তম ওভারের চতুর্থ বলে তুলে মারতে গিয়ে মুশফিকুর রহিম আর পঞ্চম বলে আউট হন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। আর শেষ বলে অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল ব্যাটে লাগাতে ব্যর্থ হন শুভাগত হোম। রান নিতে গেলেও নন-স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে মুস্তাফিজ পৌঁছানোর আগেই দৌড়ে এসে স্টাম্প ভেঙে দেন ভারতের সে সময়ের অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ১ রানে হারের আক্ষেপের গল্পের শুরুটা অবশ্য ২০০৯ বিশ্বকাপ থেকেই। লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ১২৯ রান তাড়া করতে নেমে ১৯ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান সংগ্রহ করেছিল নিউজিল্যান্ড। জয়ের জন্য ২০তম ওভারে প্রয়োজন ১৫ রান। এর মধ্যে প্রথম ৫ বলেই তারা ১১ রান তুলে নেয়। শেষ বলে একটি চার হাঁকালেই জয় নিশ্চিত। কিন্তু বোলার ওয়েন পার্নেলকে লংঅনে বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন জ্যাকব ওরাম। দ্রম্নত স্কট স্টাইরিসের সঙ্গে ২ রান তুলে নেন ওরাম। তবে তাদের তৃতীয় রানটি নেওয়ার সুযোগ দেয়নি প্রোটিয়া ফিল্ডাররা। ১ রানে হারের আক্ষেপে পোড়া বস্ন্যাকক্যাপরা ঠিক পরের আসরেই ১ রানে জয়ের আনন্দেও মেতেছিল। সেবার হতাশায় পুড়েছে পাকিস্তান। ২০১০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ১৩৪ রান তাড়া করতে নেমে ১৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান তোলে পাকিস্তান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। ক্রিজে অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৫৯ রান করা সালমান বাট। তার সঙ্গী আব্দুর রেহমান ২ বলে ২ রান করেছিলেন। ২০তম ওভারে আক্রমণে আসা ইয়ান বাটলারকে প্রথম চার বলে ২টি চার হাঁকান বাট। পঞ্চম বল ব্যাটে লাগাতে ব্যর্থ হলেও রেহমান ও বাট দৌড়ে এক রান আদায় করে নেন। শেষ বলে স্ট্রাইক পান রেহমান। জয়ের জন্য ১ বলে প্রয়োজন ২ রান। বাটলারকে ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে তুলে মারেন রেহমান। রানের জন্য দৌড়ান রেহমান ও বাট। কিন্তু তাদের সে দৌড় কোনো কাজে আসেনি। ফিল্ডার মার্টিন গাপটিল আকাশে ভাসা বল তালুবন্দি করে স্তব্ধ করে দেন পাকিস্তানকে। এক ?যুগ পর ফের বিশ্বকাপের মঞ্চে এমন আক্ষেপে পুড়তে হয় পাকিস্তানকে, তাও কিনা পুচকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ১৩১ রান তাড়া করতে নেমে ১৯.৩ ওভারে ১২৮ রান তুলে নিয়েছিল পাকিস্তান। শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। ব্রাড এভানসের করা চতুর্থ বলটি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ডট দেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচবন্দি হন। শেষ বলটি লংঅনের দিকে বাড়িয়ে দ্রম্নত দৌড়াচ্ছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম। তবে ফিল্ডার সিকান্দার রাজা তাদের চেয়েও দ্রম্নত দৌড়ে বল ছুড়ে মারেন। তাতে সহজে প্রথম রান তুলে নিলেও দ্বিতীয় রান সম্পূর্ণ করতে পারেনি শাহিন-ওয়াসিম। বিশ্বকাপের মঞ্চে ১ রানে হারের অন্য গল্পটি ২০১২ বিশ্বকাপের। নেপালকে ২০২৪ বিশ্বকাপে দেওয়া বেদনা ওই আসরে ভারতের বিপক্ষে টের পেয়েছিল প্রোটিয়ারা। সুপার এইটের ম্যাচে শেষ ওভারে ভারতকে ভড়কে দিয়েছিলেন দুই প্রোটিয়া ভাই। জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৪ রান। প্রথম বলেই লক্ষ্ণীপতি বালাজিকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন বড় ভাই অ্যালবি মর্কেল। পরের বলে আবারও মারার চেষ্টা করলেও এজ হয়ে বোল্ড হন তিনি। ক্রিজে নেমে তৃতীয় বলে ডট দিয়ে চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকান মর্নে মর্কেল। তাতে শেষ দুই বলে প্রয়োজন পড়ে ২ রান। কিন্তু পঞ্চম বলে বালাজির ইয়র্কার পড়তে ভুল করে বোল্ড হন মর্কেল। এটিই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ উইকেট। তাতে ১ বল হাতে থাকলেও অলআউট হয়ে ১ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় প্রোটিয়ারাদের।