পারফরম্যান্স ছিল একদম পড়তির দিকে। ব্যাটিংয়ে আউট হওয়ার ধরন সমালোচনার সৃষ্টি করছিল অনেক। বোলিংয়েও সাকিব আল হাসান ছিলেন না সাবলীল। তাকে নিয়ে তাই নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনার হয়েছিল। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচ ব্যর্থতার পর তৃতীয় ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষে জ্বলে উঠেছেন সাকিব। হাফসেঞ্চুরি করে হয়েছেন ম্যাচসেরাও। শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে চান তিনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব থেকে বড় তারকার নাম সাকিব আল হাসান। ভক্তরা তাকে নাম দিয়েছে রেকর্ড আল হাসান। কারণ ২২ গজে নামলেই রেকর্ড ভাঙা আর গড়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এবার প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে অলিখিতভাবে সুপার এইট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। দারুণ এই জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। চাপের মুখে ব্যাট হাতে লড়েছেন তিনি। হাঁকিয়েছেন ফিফটিও। সেই সঙ্গে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিফটি হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন সাকিব।
সেন্ট ভিসেন্টের আর্নস ভালে গ্রাউন্ডে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো করলেও তানজিদ হাসান তামিমের বিদায়ে বিপাকে পড়ে তারা। সেই চাপ সামলে লড়তে থাকেন সাকিব।
ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন ১৫৯ রানের সংগ্রহ। এই রান তাড়ায় নেমে ১৩৪ রানেই থেমে যায় ডাচরা। ২৫ রানের জয়ে সুপার এইটে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলে টাইগাররা।
এই ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সাকিব। অষ্টাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে ফন মিকারেনের ডেলিভারি ডিপ মিডউইকেটে শট নিয়ে ৩৮ বলে পূর্ণ করে নেন ফিফটি। আন্তর্জাতিক টি২০তে যেটি ১৩তম।
এই ফিফটিতে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিফটি হাঁকালেন তিনি। আর বিশ্বের ১৯তম ক্রিকেটার হিসেবে এই ক্লাবে নাম লেখালেন তিনি। ফিফটি হাঁকিয়েও লড়ে যান দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। ৪৬ বলে ৬৪ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন তিনি।
নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের সুপার ?এইটের পথে বাংলাদেশ। শেষ আট নিশ্চিতের মিশনে আগামী সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোরে গ্রম্নপপর্বে নিজেদের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামবে নাজমুল শান্তর দল। সেই ম্যাচে জিতে দেশবাসীর ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে দিতে চান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
আগামী সোমবার (১৭ জুন) বাংলাদেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। বাংলাদেশ সময় ওইদিন ভোরেই নেপালের বিপক্ষে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ওই ম্যাচে পরাজয় এড়াতে পারলেই ২০০৭ সালের পর আবার সুপার এইটে নাম লেখাবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশে সেদিন নেপালকে হারিয়ে ঈদ উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করার আশা সাকিবের।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, 'অবশ্যই নেপালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আমাদের। জিততে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাব আমরা। যা আমদের জন্য অনেক বড় অর্জন হবে। আমরা সেই ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছি। যেহেতু ঈদের দিন, আমরা যারা মুসলমান আছি তাদের জন্য অনেক আনন্দের দিন। আর বাংলাদেশের প্রায় সব ধর্মের মানুষেরাই সেই দিনটি উদযাপন করে। ঈদের দিনে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব বলে আশা করছি।'
ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে সাকিব বলেন পুরোইনিংস টেনে খেলার লক্ষ্য ছিল তার, 'উপর থেকে কেউ একজনের পুরো ইনিংস ব্যাট করাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্যাটিংয়ে অবদান রাখতে পেরে খুশি। উইকেট খুব সহজ ছিল না। আমার মনে হয় স্নায়ু ধরে রেখে আমরা ভালো পুঁজি গড়েছি। আমি বলছি না যে এটা জেতার মতন রান ছিল, এটা চ্যালেঞ্জিং রান ছিল।'
কন্ডিশন অচেনা হওয়ায় খুব বেশি ঝুঁকি নিয়ে খেলতে চায়নি বাংলাদেশ, সাকিব জানালেন সেটাও, 'এখানে চার-পাঁচ বছরে হয়তো তেমন কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি (গত দশ বছরে হয়নি)। এজন্য বোঝা যাচ্ছিলো না কত রান নিরাপদ। আমরা তাই উইকেট রেখে ভাবছিলাম কত দূর যাওয়া যায়। এটা ভালো পুঁজি ছিল। ১৬০ রান বিশ্বকাপের ম্যাচে খুবই ট্রিকি।'
ডাচদের বিপক্ষে দলের ব্যাটিং ইনিংসে বিশেষভাবে অবদান রেখেছিলেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদও। আগের দুই ম্যাচে সাকিব ব্যর্থ হলেও রিয়াদ ছিলেন চালকের আসনে। তবে ফর্মে থাকলেও বয়স বিবেচনায় বলা যায় ক্যারিয়ারের শেষ দিকে আছেন মাহমুদউলস্নাহ। তবে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অবসর নিয়ে কথা বলেছেন সাকিব। তার বিশ্বাস আরও কিছু দিন জাতীয় দলকে সার্ভিস দিবেন দেশসেরা এই ফিনিশার ব্যাটার।
সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদের অবসর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার বলেন, যত দিন উনি ফিট থাকেন এবং দলের জন্য পারফর্ম করবেন, 'আমার বিশ্বাস, মাহমুদউলস্নাহ আরও অনেক দিন খেলবেন। তিনি দলের অন্যতম ফিট খেলোয়াড়। খুব ভালো ব্যাটিং করছেন, বোলিংয়েও অবদান রাখছেন।'
শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ জয়ে অবদান ছিল মাহমুদউলস্নাহর। ১৩ বলে ১৬ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল হারলেও নিজের সেরাটা দিয়েছেন মাহমুদউলস্নাহ। তার ২৭ বলে ২০ রানের ইনিংসের কল্যাণে শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ব্যাটে-বলে অবদান রেখেছেন মাহমুদউলস্নাহ। ব্যাট হাতে ২১ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। পাশাপাশি বল হাতেও একটি উইকেট শিকার করেছেন এই অলরাউন্ডার। সবমিলিয়ে তিন ম্যাচেই অবদান ছিল তার।