ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর আজ শুরু

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মাঠে গড়াচ্ছে ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। স্বাগতিক জার্মানীর পাশাপাশি ইউরোপের হেভিওয়েট ফুটবল দলগুলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালির কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নেবার লক্ষ্যে আগামী এক মাস নিজেদের শক্তিমত্তা প্রমানে ব্যস্ত থাকবে। শুক্রবার মিউনিখে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে জার্মানী ও স্কটল্যান্ড। স্বাগতিক জার্মানীর লক্ষ্য থাকবে আগামী ১৪ জুলাই বার্লিনের ফাইনাল পর্যন্ত তাদের এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে। ২০০৬ বিশ্বকাপের পর এই প্রথমবারের মত জার্মানীর মাটিতে বড় কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজিত হচ্ছে। গত ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের দলগুলোর পারফরমেন্সের বিচারে এবারো প্রিয় দলের দুর্দান্ত লড়াই দেখার জন্য মুখিয়ে আছে পুরো ফুটবল বিশ্ব। করোনা মহামারির কারনে ইউরো ২০২০ আসর এক বছর দেরীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটাও আবার সীমিত সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে। শুধুমাত্র একটি একক দেশে নয়, পুরো ইউরোপ জুড়েই গত ইউরো অনুষ্ঠিত হয়। সেভিয়া থেকে বাকু, কার্যত কোন শহরই ম্যাচ আয়োজন থেকে বঞ্চিত হয়নি। এ কারনে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের আমেজ বহুগুন বেড়ে গিয়েছিল। এবার অবশ্য আবারো একক আয়োজনে ফিরে এসেছে উয়েফা। জার্মানীর উত্তরে হামবুর্গ থেকে দক্ষিনে মিউনিখ পর্যন্ত সর্বমোট ১০টি স্টেডিয়ামে এবারের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৬ সালের সাফল্যেল পুনরাবৃত্তি আশা করছে জার্মানী। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার পর আবারো জার্মানরা জাতীয় দলকে ভালবাসতে শুরু করেছে। ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ফিলিফ লাম এবারের ইউরো ২০২৪ আসরের টুর্ণামেন্ট পরিচালক। লাম নিজেও আশা করছেন এই প্রতিযোগিতা পুরো ইউরোপকে এক ছাতার নীচে নিয়ে আসবে, সকলের মধ্যে সৌহার্দ, বন্ধুত্ব বাড়বে। এক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আরো বাড়িয়ে দিবে জার্মানরা যদি মাঠের পারফরমেন্স ভাল করতে পারে। কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যানের অধীনে গত কয়েক মাসে জার্মান দলের চেহারা অনেকটাই পাল্টে গেছে। গ্রম্নপ-এ'র অপর দুই দল হলো হাঙ্গেরি ও সুইজারল্যান্ড। অভিজ্ঞ পেস্নমেকার টনি ক্রুসের সাথে তরুণ তুর্কি ফ্লোরিয়ান রিটজ ও জামাল মুসিয়ালাকে নিয়ে সাজানো দলটি গ্রম্নপ পর্বের বাঁধা পেরিয়ে আরো অনেকদুর এগিয়ে যাবে বলেই স্বাগতিক সমর্থকদের বিশ্বাস। বায়ার্ন মিউনিখ তারকা মুসিয়ালা বলেছেন, 'আমাদের জাতীয় দল একটি কঠিন সময় পার করেছে। কিন্তু এখানে কিছু একটা হবে বলে আমরা আশা করছি।' টুর্নামেন্টের বাছাইপর্ব থেকেই ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডকে সুষ্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে মানা হচ্ছে। এর পিছনে যথেষ্ট কারনও রয়েছে। ইউরোপের শীর্ষ র?্যাঙ্কধারী দল ফ্রান্স এবং গত দুই বিশ্বকাপে তারা ফাইনালে খেলেছে। কিলিয়ান এমবাপে রিয়াল মাদ্রিদে যাবার পর বেশ কিছু দু:শ্চিন্তারও অবসান হয়েছে। ট্রান্সফার বিষয়াদী মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে এমবাপে এখন জাতীয় দলে মনোনিবেশ করতে পারবে। বিশেষ করে গত ইউরোতে ব্যর্থতার দায়ভার এবার মেটাতে প্রতি শ্রম্নতিবদ্ধ এমবাপে। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলতে এমবাপের পেনাল্টি মিসে ফ্রান্সের বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশ্যম বলেছেন, 'কিলিয়ান আমাদের অধিনায়ক ও অসাধারন এক নেতা। দলে তার সেরা ফর্মের প্রয়োজন রয়েছে।' এখনো পর্যন্ত ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার কষ্ট এবার দুর করতে চায় ইংল্যান্ড। ২০২১ সালে ফাইনালে ইতালির কাছে পেনাল্টিতে পরাজিত হবার দু:সহ স্মৃতি কাটিয়ে নিজেদের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় গ্যারেথ সাউথগেটের দল। এবার দলের মূল ভরসা বায়ার্নের হ্যারি কেন, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সাবেক ও বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদ তারকা জুড বেলিংহাম। জার্মানীতে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে তারা ইংল্যান্ডকে সহযোগিতা করতে পারবে বলে সকলের আশা। এ সপ্তাহে ইংলিশ মিডফিল্ডার ডিক্লান রাইস বলেছেন, 'আমরা ইতিহাস রচনা করতে চাই। সব সময়ই আমরা এটা বলে থাকি। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই এই দলটিকে নিয়ে আমরা এবার আরা বেশী আশাবাদী। আমাদের মধ্যে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস রয়েছে। বিশেষ কিছু করার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।' রোববার জেলসেনকার্চেনে সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টুর্ণামেন্ট শুরু করবে ইংল্যান্ড। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড উভয়ই যদি নিজ নিজ গ্রম্নপের শীর্ষ দল হিসেবে পরের রাউন্ডে যেতে পারে তবে সেমিফাইনালে তাদের দেখা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। স্পেনের সাথে গ্রম্নপ-বি'তে থাকা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালির শিরোপা ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইনজুরি তাদেরকে খানিটকা পিছিয়ে দিয়েছে। যদিও দলের সাবেক কিংবদন্তী গোলরক্ষক গিয়ানলুইগি বুফন বলেছেন, এই ইতালি দলটিকে কিছুটা পিছিয়ে রাখা হলেও মাঠেই তার প্রমান মিলবে। ২০১৬ ইউরো বিজয়ী পর্তুগালও শক্তিশালী দল নিয়েই মাঠে নামতে যাচ্ছে। ৩৯ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো এখনো তাদের মূল শক্তি। ইনজুরির বিষয়টি চিন্তা করে এবার দলগুলোকে ২৩ থেকে বাড়িয়ে ২৬ জন খেলোয়াড় অন্তর্ভূক্তির সুযোগ দিয়েছেন উয়েফা।