বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত কোনো লেগ স্পিনার জাতীয় দলে লম্বা সময় খেলতে পারেননি। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও লেগ স্পিনার খুব একটা দেখা যায় না। একজন লেগ স্পিনারের খোঁজেই রিশাদ হোসেনের ওপর বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)!
এই তরুণ লেগি বছর খানেক আগে ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত ম্যাচ পেতেন না। তবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিশেষ নজরের কারণে জাতীয় দলে সুযোগ মেলে তার। গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত ম্যাচ খেলছেন লাল-সবুজের জার্সিতে। এই সময়ে তার পারফরম্যান্স আহামরি না হলেও দলে নিয়মিত সুযোগ দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
অভিষেকের পর থেকে টি২০ দলে রিশাদ হোসেন পরিণত হয়েছেন নিয়মিত সদস্য। বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নেমেই শ্রীলংকার বিপক্ষে লেগ স্পিনে ম্যাচসেরা পারফরম্যান্সে ঝলক দেখিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ও মনোভাব তুলে ধরেছেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
লেগ স্পিনারদের নিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের আগ্রহ পুরনো। বাংলাদেশের প্রথম মেয়াদে তার তুরুপের তাস ছিলেন জুবায়ের হোসেন লিখন। এবার আসার পর রিশাদ হোসেনকে অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়েছেন তিনি। অবশেষে তার চেষ্টার ফল মিলতে শুরু করেছে। গত বছরের মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে অভিষেক হয় রিশাদের।
বাংলাদেশের জন্য একজন কার্যকর লেগ স্পিনার খুঁজে বের করার চেষ্টা দায়িত্বের প্রথম মেয়াদেও করেছিলেন হাথুরুসিংহে। তার অধীনে তিন সংস্করণেই অভিষেক হয়েছিল জুবায়ের হোসেন লিখনের। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সমর্থন না পাওয়ায় জুবায়ের থিতু হতে পারেননি। শুধু জাতীয় দল নয়, দেশের ঘরোয়া পর্যায়েও লেগ স্পিনাররা মূলত উপেক্ষার পাত্র। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিস্থিতিতে সামান্য উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে।
রিশাদকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠে আসার জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনেক দিন জাতীয় দলের আশেপাশে থাকার পর গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ অভিষেক হয় তার। এরপর ওয়ানডে অভিষেকের স্বাদ নেন গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে। তবে দলে জায়গা পাকা ছিল না ২১ বছর বয়সি তরুণের। চলতি বছরের মার্চে শ্রীলংকার বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ দিয়ে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন তিনি। এরপর টি২০ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই করেন বাজিমাত। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে গত শনিবার ডালাসে শ্রীলংকাকে হারানোর মূল নায়ক ছিলেন রিশাদ।
বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সোমবার নিউইয়র্কে মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে লেগ স্পিনারদের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা গেছে হাথুরুসিংহের কণ্ঠে, 'আপনারা সবাই জানেন, আমাদের জন্য দলে লেগ স্পিনার নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জের। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। এটাই মূলত আমাদের সংস্কৃতি। আমরা এর (লেগ স্পিনার) মূল্য বুঝি না।'
লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম দুই ওভারে ১৬ রান দিয়ে ফেলেছিলেন রিশাদ। তবে তার ওপর ভরসা হারাননি বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৫তম ওভারে রিশাদকে আক্রমণে ফেরানো হলে ধরেন জোড়া শিকার। নিজের শেষ ওভারে আরেক উইকেট নিয়ে শ্রীলংকার বড় পুঁজির আশা ভেস্তে দেন তিনি। তাকে সমর্থন জোগানোর বিষয়ে বাংলাদেশের কোচ বলেছেন, 'প্রথম দুই ওভারে রান দেওয়ার পরও শান্ত শেষ দুই ওভারের জন্য ওকে বোলিংয়ে এনেছে এবং ম্যাচ বদলে দিয়েছে। শান্তকে তাই কৃতিত্ব দিতেই হবে। তো আমার মতে, আমরা এখন দল হিসেবে লেগ স্পিনের মূল্যটা বুঝতে পারছি। দলের ভেতরে আমরা তাকে সমর্থন করছি।'
যত দিন যাচ্ছে, রিশাদের উন্নতির জায়গা স্পষ্ট হচ্ছে আরও। শ্রীলংকার বিপক্ষে টানা ?দুই বলে চারিথ আশালাঙ্কা ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি। তার শেষ দুই ওভারেই বদলে গেছে ম্যাচের গতিপথ। রিশাদের আত্মবিশ্বাস এখন আগের চেয়ে বেড়েছে বলে মনে করেন হাথুরু।
এখন পর্যস্ত খেলা ১৮ টি২০তে ২১.৯৪ গড় ও ৭.০৫ ইকোনমিতে রিশাদের শিকার ১৮ উইকেট। লঙ্কানদের বিপক্ষে ২ উইকেটের নাটকীয় জয়ের ম্যাচে তার নৈপুণ্য ভীষণ তৃপ্তি দিয়েছে হাথুরুসিংহেকে, 'আমি মনে করি, সবশেষ ম্যাচে এটিই (রিশাদের বোলিং) সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক ছিল। কারণ আমরা এখন প্রায় এক বছর ধরে তাকে সমর্থন করছি। আমরা জানতাম, সে আমাদের ম্যাচ জেতাবে। আর ওই ম্যাচটি জেতানো, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই খুবই সন্তোষজনক ছিল (রিশাদের পারফরম্যান্স)।'