বিশ্বকাপের সূচনাটা ভালোই হয়েছে বাংলাদেশের। কিছুটা লড়াই করে হলেও শ্রীলংকার বিপক্ষে ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। 'ডি' গ্রম্নপে বাংলাদেশের পরের ম্যাচেই অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করছে। নিউ ইয়র্কে নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে টাইগারদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে যাদের বিপক্ষে কোনো জয় নেই টাইগারদের। টি২০ বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলার আশা করছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২ উইকেটে রোমাঞ্চর জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। জয় নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে পারলেও, ব্যাটিং নিয়ে উদ্বেগ আছে টাইগার শিবিরে। তবে প্রথম ম্যাচ থেকে পাওয়া পূর্ণ দুই পয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। টি২০তে এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আট ম্যাচ খেলে কোন জয় নেই বাংলাদেশের। কিন্তু এবার হারের বৃত্ত ভাঙতে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা।
গ্রম্নপ পর্বে এখনও তিন ম্যাচ বাকি নাজমুল শান্তদের। প্রথম ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছে লাল-সবুজের দল। সুপার এইট নিশ্চিতের সমীকরণ কি সহজ না কঠিন, জিততে হবে কয় ম্যাচ?
'ডি' গ্রম্নপে একমাত্র দল হিসেবে প্রথম দুই ম্যাচের দুটোতেই জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর দুই ম্যাচের দুটিতে হেরে তলানীতে অবস্থান শ্রীলংকার। এমন পরিস্থিতিতে শেষ আটে যাওয়ার মূল লড়াইটা হবে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে। তেমন কোনো অঘটন না ঘটলে এই দুই দলের মধ্যে যেকোনো একটি দলই খেলবে শেষ আটে।
এবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সমীকরণে। প্রথম ম্যাচ জেতায় বাকি তিন ম্যাচের দুটিতে জিততে পারলে কোনো সমীকরণ ছাড়াই পরের রাউন্ডে যাবে বাংলাদেশ। বেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাওয়া বেশ কঠিন। সেই হিসেবে বাকি দুই প্রতিপক্ষ নেপাল ও নেদারল্যান্ডস ম্যাচে জয় পেতে মরিয়া চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
প্রথম ম্যাচ জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিততে পারেনি নেদারল্যান্ডস। তাদের নেট রানরেট ০.০২৪। শীর্ষে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার রানরেট অনেকটাই বেশি ০.৭৮৯। দুইয়ে থাকা বাংলাদেশের ০.৩৭৯। যথাক্রমে চার-পাঁচে থাকা নেপাল ও শ্রীলংকার রানরেট যথাক্রমে -০.৫৩৯ এবং -০.৭৭৭।
এমন অবস্থায় নিজেদের পরের ম্যাচে বাংলাদেশ যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারে, তাহলে তালিকার তিনে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দুইয়ে উঠে আসবে নেদারল্যান্ডস। যার ফলে পরের দুই ম্যাচের একটিতে জিতলেই শান্তদের পড়তে হবে সমীকরণের মারপঁ্যাচে। নেদারল্যান্ডসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই।
নেদারল্যান্ডস দুই ম্যাচ খেলে ফেলায় বাকি দুই ম্যাচের দুটিতে জিতলে সরাসরি নিশ্চিত করবে শেষ আট। আর একটি জিতলে পড়তে হবে মারপঁ্যাচে। এর মধ্যে একটি শ্রীলংকার বিপক্ষে। যাদেরকে প্রস্তুতি ম্যাচে হারিয়েছিল ডাচরা। যদি বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের পয়েন্ট সমান হয় তখন দেখা হবে দুদলের নেট রানরেট। যে দল নেট রানরেটে এগিয়ে থাকবে তারাই যাবে শেষ আটে।
গ্রম্নপ পর্বে ইতোমধ্যে শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু মন্থর উইকেটের কারনে দুই ম্যাচেই জয় পেতে বেগ পেতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। ইতোমধ্যেই নিউ ইয়র্কের উইকেট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। উইকেটের উন্নতিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে আইসিসি। তবে উইকেট মন্থর হলে সেখান থেকে বেশি সুবিধা পাবে বাংলাদেশই।
বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমাদের ম্যাচের আগে নিউ ইয়র্কে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে উইকেট সম্পর্কে আমরা কিছু ধারণা পাবো। উইকেট যেমনই হোক না কেন, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে আমরা যেকোনো দলকে হারাতে পারি বলেই আমি বিশ্বাস করি।'
বোলারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারনেই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন শান্ত। ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফরমেন্স করছে দলের বোলাররা। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার কারষে বেশির ভাগ সময় ভেস্তে গেছে বোলারদের অর্জন।
কান্ত বলেন, 'বেশ কিছু দিন ধরেই আমাদের বোলাররা সেরা ফর্মে আছে। বিশ্বেও যেকোন ব্যাটিং লাইন আপকে ধসিয়ে দিতে পারে তারা। আগামী বছরগুলোতেও তারা সেটা ধরে রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।'
তিনি আরও বলেন, 'ব্যাটিং উদ্বেগ থাকলেও আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। সব ব্যাটার এক সাথে জ্বলে উঠবে এমনটা আশা আপনি করতে পারেন না। কিন্তু এটাও সত্য, কাজ করার জায়গা আছে। আমরা আমাদের ব্যাটিং সমস্যা সমাধানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।'
শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের জন্য বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে। প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলংকাকে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের বেশি করতে দেয়নি টাইগার বোলাররা। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের ২ উইকেটের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মিডল অর্ডার ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়ের ২০ বলে ঝড়ো ৪০ রান।
৩৬ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। স্ট্রাইক রেট কম থাকলেও ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী লিটনের ধীর গতির ব্যাটিং ম্যাচে বড় ভূমিকা রাখে। শেষদিকে মাহমুদউলস্নাহর অভিজ্ঞতায় জয়ের হাসি হাসে বাংলাদেশ।