রিশাদ হোসেনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন- এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। লেগ স্পিনার নিয়ে টাইগার সমর্থকদের হতাশা তো নিয়মিত ঘটনা। বিশ্বকাপে এসে সেই হতাশা অন্তত খানিকটা ঘুচল রিশাদের কল্যাণে। প্রথম লেগ স্পিনার হিসেবে বাংলাদেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই দারুণ বোলিংয়ে আটকে দিলেন শ্রীলংকাকে। ফলে তাকে ঘিরে তো প্রশংসা হতেই পারে।
অনেক দলেই লেগ স্পিনারদের ভেল্কির দেখা নিয়মিত মিললেও লাল-সবুজের জার্সিতে তাদের দেখা পাওয়াটা যেন দুঃসাধ্য। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তারা কখনো পরিত্যাজ্য, জাতীয় দল তো আরও দূরের ভাবনাই ছিল। রিশাদের ওপর আস্থা রেখে টিম ম্যানেজমেন্ট যেন দিন বদলের বার্তাই দিচ্ছে। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে স্কোয়াডে রাখার প্রতিদান ২১ বর্ষী ক্রিকেটার দারুণভাবে দিলেন। চার ওভারে ২২ রান খরচায় মূল্যবান তিনটি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও জিতলেন।
দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নিকট অতীতেও নিয়মিত লেগ স্পিনারের দেখা লাল-সবুজের দলে নিয়মিত পাওয়া যেত না। অতীতে জুবায়ের হোসেন লিখন হারিয়ে গেলেও রিশাদ নিজেকে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া প্রমাণে যেন মরিয়া। আইসিসির কোনো ইভেন্টে কোনো লেগ স্পিনারের দৃষ্টিনন্দন বোলিংয়ের দৃশ্য এবার তার হাত ধরেই দেখা গেল। দেশের ক্রিকেটে যুগের পর যুগ পেরিয়েছে, তবু এমনটা আগে দেখা যায়নি। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই রিশাদ করলেন বাজিমাত। আর তাতেই যেন লেগস্পিনে যুগের পরিবর্তনটাই এসেছে।
আন্তর্জাতিক টি২০তে এই তরুণ ক্রিকেটার খেলেছেন ১৮ ম্যাচ, পেয়েছেন ১৮ উইকেট। সাধারণত লেগস্পিনাররা উইকেট শিকারি হতে গিয়ে হয়ে পড়েন ব্যয়বহুল। তবে রিশাদের ৭.০৫ ইকোনমি রেটটাকে মারকাটারি টি২০তে
বেশ ভালো বলতেই হয়।
ইনিংসের ৮ম ওভারে রিশাদের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। পাওয়ার পেস্নতে আক্রমণাত্মক ব্যাট চালানো লঙ্কানরা রিশাদের ওপর চড়াও হবেন- এমনটাই মনে হচ্ছিল বাইরে থেকে। প্রথম বলেই পাথুম নিশাঙ্কা চার হাঁকিয়ে এমনটাই জানান দেন। এতে রিশাদ ভড়কে যাননি। পরের বলেই ঘুরে দাঁড়ান। তাতে নিজের প্রথম ওভারে রিশাদের খরচ ছিল মাত্র ৭ রান।
নিজের দ্বিতীয় ওভারের শুরুটাও ভালো করেছিলেন রিশাদ। দারুণ সব ড্রাফট ডেলিভারি আর লেগ স্পিনে প্রতিপক্ষের জন্য রান তোলা হয়ে উঠছিল কঠিন কাজ। তবে টানা ভালো বল করা রিশাদ হুটহাট একটি খারাপ বল করে বসবেন এটা যেন একটা নিয়তি। ম্যাচের ১০ম ওভারের পঞ্চম বলে চারিথ আসালাঙ্কাকে আউট সাইড অফে বল করে বসে রিশাদ। ওই সুযোগ মোটেও হাতছাড়া করেননি আসালাঙ্কা। বল পাঠিয়ে দেন সীমানার ওপারে। তাতে নিজের দ্বিতীয় ওভারে রিশাদের খরচ হয় ৯ রান। দুই ওভার শেষে ১৬ রান খরচায় তার নামের পাশে ছিল না কোনো উইকেট।
একটু খেই হারিয়ে বসা রিশাদকে দিয়ে তৃতীয় ওভার করাতে খানিকটা অপেক্ষাই করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাচের ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন রিশাদ। এবার অবশ্য অধিনায়ককে আর হতাশ করেননি। ওভারের প্রথম বলে আউট হন আসালাঙ্কা। রিশাদের করা আউট সাইড অফে থাকা বল সুইপ করে বড় শটে আগ্রহী ছিলেন এই লঙ্কান। তবে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার পয়েন্টে দাঁড়ানো সাকিব আল হাসানকে ফাঁকি দিতে পারেনি বল। উড়ে আসা বল সহজে তালুবন্দি করেন সাকিব। রিশাদের পরের বলে ফেরেন লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। বল বুঝতে না পেরে স্স্নিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের কাছে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন।
নিজের তৃতীয় ওভারে ঘুরে দাঁড়ানো রিশাদ তৃতীয় উইকেটের দেখা পান নিজের চতুর্থ ওভারে। ওই ওভারে ফেরান আরেক লঙ্কান ব্যাটার ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে। তাতে ইনিংস শেষে রিশাদের বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৪-০-২২-৩। রিশাদ তার করা ২৪ বলের ১০ বলই দিয়েছেন ডট। ইনিংসে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ডট দিয়েছেন রিশাদ। সবচেয়ে বেশি ১৪ ডট দেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমান।