রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্বকাপে কতদূর যাবে বাংলাদেশ?

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
টি২০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

বিশ্বকাপ আসে, বিশ্বকাপ যায়। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশাটা বদলায় না। বারবার হতাশা উপহার দেওয়া টাইগারদের নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন সমর্থকরা। লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের কাপ্তান নাজমুল হোসেন শান্তর আহ্বান ছিল, প্রত্যাশা না রাখার। সমর্থকরা অবশ্য দল নিয়ে ঠিকই আশায় বুক বাঁধছেন। সেই প্রত্যাশার কতটুকু শান্ত বাহিনী পূরণ করতে পারে, সেই অপেক্ষায় বাংলার কোটি ক্রিকেট প্রাণ। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে একটা দল হয়ে পারফর্ম করতে পারছে না বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগের্ যাংকিংয়ে ১০ ধাপ পিছিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও সিরিজ হেরেছে দল। সেই হারের ক্ষত নিয়েই বিশ্বকাপ মিশনে নামবে টাইগাররা।

বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ শিবিরে নেই স্বস্তি। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হারের ক্ষত, অন্যদিকে ব্যাটারদের ব্যাটে নেই রানের ফোয়ারা। টপ অর্ডারে খেলা লিটন দাস, সৌম্য সরকার কিংবা নাজমুল হোসেন শান্ত খেলতে পারছেন না নিজেদের সেরা ক্রিকেট। টপ অর্ডারের নিয়মিত ব্যর্থতায় সবশেষ ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের রানের ভিত শক্ত হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসেছে টি২০ বিশ্বকাপের নবম আসর। শনিবার শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের মিশন শুরু করছে টাইগাররা। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল এবার কতদূর যাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে কেবল সংশয়ই খেলা করছে।

২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরের দ্বিতীয় পর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রতি আসরেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব থেকেছে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে। কিন্তু সর্বোচ্চ সাফল্য বলতে ওই দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা। নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন এবারের দলের কাছেও আসলে উচ্চাশা করছেন না কেউ। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হারা দলটি যদি গ্রম্নপপর্ব পেরুতে পারে, তবেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন সবাই।

বিপিএলের পর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। সিকান্দার রাজাদের বিপক্ষে সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জেতে টাইগাররা। তবে ওই সিরিজে বিশ্বকাপে আদর্শ প্রস্তুতি কতটা হয়েছে, সেই প্রশ্ন ছিল। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটারা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজেও দল নাজেহাল হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচই হেরে সিরিজ হাতছাড়া করে টাইগাররা। বিশ্বকাপ ?শুরুর আগেই তাই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দলের অবস্থা। এই দায়টা কার? সেই প্রশ্ন অবশ্য থেকে যায়।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই বাংলাদেশ দল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না সাবেক ক্রিকেটাররাও। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার তো সরাসরিই বলছেন, 'এবারের বিশ্বকাপটা (বাংলাদেশের জন্য) সহজ হবে না। কারণ, টি২০ ফরম্যাটে এখনো আমরা ওভাবে ম্যাচ জয়ী দল হতে পারিনি। তাছাড়া বাংলাদেশের গ্রম্নপটাও খুব শক্তিশালী। তুলনায় অন্য গ্রম্নপগুলো সহজ।'

'ডি' গ্রম্নপে বাংলাদেশের সঙ্গী হিসেবে শ্রীলংকা ছাড়াও রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। পাঁচ দলের মধ্যে যেহেতু দুটি দল পরের পর্বে যাবে, তাই এই জায়গাটায় ফেভারিট শ্রীলংকা ও দক্ষিণ আফ্রিকাই। জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিমের মতে, 'দ্বিতীয় রাউন্ডে যদি আমরা খেলতে পারি, তাহলে সেটা অনেক বড় অর্জন হবে বলে। তবে কাজটা অত সহজ হবে না। অনেক কঠিন সময় যাবে বাংলাদেশের।'

এমন মনে হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বেলিম আরও বলেন, 'এবার কেন যানি মনে হচ্ছে, মানসিকভাবে সবাই একটু নেতিবাচক চিন্তা করছে। দেশ ছাড়ার আগে কোচ ও অধিনায়কের কথায় বিষয়টা ফুটে উঠেছে। এই একটা জায়গায়, খেলোয়াড়দের অধিনায়ক, কোচ, সিনিয়র খেলোয়াড়রা কীভাবে দলকে উজ্জীবিত করে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। আর সবাই নিজে কীভাবে চিন্তা করে সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।'

তারপরও বাংলাদেশ অন্তত দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে বলে বিশ্বাস টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীসের। তার কথায়, 'বাংলাদেশ দলের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রেখে আমি আশা করি, বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে। যদি আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে পারি, তাহলে এটা আমাদের টি২০ বিশ্বকাপের এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভালো সাফল্য হবে।'

দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে হলে শ্রীলংকার বিপক্ষে ইতিবাচক ফল খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। নাফীসের মতে, 'বাংলাদেশে গ্রম্নপটা একটু কঠিন। এখান থেকে নিজেদের সেরা সাফল্য পেতে হলে প্রথম ম্যাচ জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি প্রথম ম্যাচে পজিটিভ ফলাফল নিয়ে নিতে পারি, তাহলে এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে এবং পরবর্তী তিন ম্যাচের দুটি জিতলেই হয়তো দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করতে পারব আমরা।'

দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে না পারলে বিশ্বকাপটা বাংলাদেশের জন্য গস্নানিময় হয়ে থাকবে বলেই মনে করেন হাবিবুল বাশার, 'বাংলাদেশ অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত যদি যেতে পারে, তাহলে বলব এই আসরটা সফল বাংলাদেশের জন্য। আর গ্রম্নপ পর্ব পেরুতে ব্যর্থ হলে সেটাকে অবশ্যই ব্যর্থ বিশ্বকাপই বলব।'

হাবিবুল বাশার শুরুতেই বলেছেন, বাংলাদেশ টি২০তে ম্যাচ জয়ী দল হতে পারেনি। এটা আসলে চিরন্তন সত্য। সেই সঙ্গে এটাও সত্য যে, টি২০তে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন, এমন ক্রিকেটার বাংলাদেশে নেই। তাই হাবিবুল বলছেন, 'যদি বাংলাদেশ বিশ্বকাপটা ব্যালেন্সড করতে চায়, তাহলে টিম গেম খেলতে হবে। ইন্ডিভিজুয়াল কারও ওপর নির্ভর না করে সবাইকে পারফর্ম করতে হবে।'

শাহরিয়ার নাফীসের কণ্ঠেও একই কথা, 'বাস্তবতা মেনে নিয়ে দল হিসেবে যেন খেলে সবাই। একক পারফরম্যান্সের ওপর ভরসা না করে দল হিসেবে সবাই যেন অ্যাফোর্ড দিতে পারে। দলের কাছে আমার এই চাওয়াই থাকবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে