শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

প্রতিটি বিশ্বকাপেরই আলাদা অনুভূতি শরিফুলের

প্রতিটা খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলার। সেটা হোক ক্রিকেট, ফুটবল বা যে কোনো কিছু। সেখানে আমি যদি বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারি, অন্যরকম পাওয়া হবে
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
শরিফুল ইসলাম

বিশ্বকাপে খেলা নতুন কিছু নয় শরিফুল ইসলামের জন্য। তিন বছরের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়ে তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট খেলে ফেলেছেন বাঁহাতি এ পেসার। তবু প্রতিটি বিশ্বকাপেরই আলাদা অনুভূতি তরুণ বাঁহাতি পেসারের জন্য। আপাতত হাতের চোটে শঙ্কা থাকলেও বিশ্ব আসরে খেলার রোমাঞ্চে বুঁদ তিনি।

উত্তরবঙ্গের জেলা পঞ্চগড় থেকে প্রতিভার জোরে উঠে এসেছেন শরিফুল ইসলাম। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে প্রতিটা ক্রিকেটপ্রেমীর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন থাকে। বাঁহাতি এই পেসার লাল-সবুজের জার্সি চড়ানোকে অনেক বড় পাওয়া বলেই স্বীকার করেন।

গত বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলারদের একজন শরিফুল। এই সময়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে তার চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন শুধু তাসকিন আহমেদ। চলতি টি২০ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের বড় অস্ত্র হিসেবেই গিয়েছেন ২৩ বছর বয়সি পেসার। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ভার?তের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের শেষ ওভারে নিজের বোলিংয়েই ফিল্ডিং করতে গিয়ে বাম হাতে চোট পেয়েছেন শরিফুল। মধ্যমা ও তর্জনীর সংযোগস্থলে লেগেছে ছয় সেলাই।

অলৌকিক কিছু না ঘটলে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলা হবে না শরিফুলের। অনিশ্চয়তা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরের ম্যাচ নিয়েও। চোটের শঙ্কার বহু আগে বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে থাকতে বিসিবির ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মের আয়োজন 'গ্রিন-রেড' স্টোরিতে নিজের রোমাঞ্চ প্রকাশ করেন শরিফুল। মঙ্গলবার সেটি প্রকাশ করে বিসিবি।

শরিফুল বলেন, 'প্রতিটা খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলার। সেটা হোক ক্রিকেট, ফুটবল বা যে কোনো কিছুর। সেখানে আমি যদি বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারি, অন্যরকম পাওয়া হবে। বিশ্বকাপটা আসলে দুনিয়ার সবাই দেখে। ওই ক্ষেত্রে সবার একটা মনোযোগ থাকে। তাই আমার মনে হয়, বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার জন্য অন্যান্য সিরিজ থেকে একটা ভিন্ন অনুভূতি কাজ করে।'

এখন পর্যন্ত বিশ ওভারের দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন শরিফুল। ২০২১ সালে চার ম্যাচে ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান খরচ করে ৪ উইকেট নেন তিনি। কিন্তু ভালো যায়নি অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া ২০২২ বিশ্বকাপ। ভারতের বিপক্ষে সুযোগ পাওয়া একমাত্র ম্যাচে ৫৭ রান খরচ করেন তিনি।

এবার সুযোগ পেলে আগের বিশ্বকাপকে ছাড়াতে চান শরিফুল। 'প্রতিটা বিশ্বকাপে সবারই লক্ষ্য থাকে সবশেষ বিশ্বকাপ থেকে ভালো করার। আমারও ইচ্ছা আছে, দলেরও ইচ্ছা আছে ম্যাচ ধরে ধরে জেতার চেষ্টা করব।'

২৩ বছর বয়সি ক্রিকেটারের কাছে শান্তর অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সাবলীল ভঙ্গিতে দেয়া উত্তরে বললেন, 'খুব ভালো। খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা দেয়। তার খুব বন্ধুসুলভ আচরণ। সবাই উনাকে খুব পছন্দ করে।'

'আমরা বোলাররা যদি বিশেষ কিছু করতে চাই, উনাকে বলি। তখন উনি গুরুত্ব সহকারে দেখেন। সব অধিনায়কই দেখে, শান্ত ভাইও দেখেন। শান্ত ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন ধরে খেলছি। আচরণ থেকে শুরু করে তার সবকিছুই ভালো।'

দলের ভেতর নানা বয়সি ক্রিকেটারদের ভেতর সম্পর্ক ও একে অপরের প্রতি আচরণের নিয়েও শরিফুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়। স্পষ্টভাবেই জানালেন, খেলোয়াড়রা প্রকৃতপক্ষে খুব কমই সিনিয়র-জুনিয়র বিষয়টা দেখেন। টিম টাইগার্সের সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় মাহমুদউলস্নাহর উদাহরণটাকে বিশেষভাবেই টানলেন, 'আমরা মনে করি সবাই একটা পরিবার। সবার সঙ্গেই বন্ধুর মতো আচরণ করা হয়। রিয়াদ ভাই যেমন সবার সঙ্গে ভালো মিশে যায়। উনি কিন্তু আমাদের চেয়ে বয়সে সবচেয়ে বড়। উনি এমনভাবে মিশে, মনেই হয় না যে আমাদের সঙ্গে এত বয়সের ব্যবধান। উনি পুরা টিমটাকে চাঙ্গা করে রাখেন। মনে হয় যে, আমরা খুব ছোটকাল থেকেই এক সঙ্গে খেলছি।'

'বিপিএলে তাসকিন ভাইয়ের সঙ্গে খেলেছি, ডিপিএলে খেলেছি, জাতীয় দলে খেলেছি। মুস্তাফিজ ভাইয়ের সঙ্গে তো খেলাই হয়। আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম, তখন ভাবতাম কবে উনাদের সঙ্গে খেলবো। তাদের সঙ্গে এখন খেলছি। স্বপ্নগুলোর মাঝে এটা একটা ছিল।'

শরিফুল অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন। বাঁহাতি এই পেসার নিজের জাত দেখিয়ে জাতীয় দলেও প্রবেশ করেন। টি২০ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অবধারিতভাবেই লাল-সবুজের দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশই তাকে বলা যায়। খেলোয়াড়ি জীবনে কাছের মানুষের সমর্থন পাওয়া নিয়ে বিশ্ব আসরে যাওয়ার আগে খোলামনে কথা বলে গেছেন শরিফুল ইসলাম। টি২০ থেকে আগেই অবসরে যাওয়া মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আলাদাভাবেই বললেন, 'খেলার সময় বড় ভাইরা তো অবশ্যই সমর্থন করে। আমি যখন নিউজিল্যান্ডে খেলছিলাম, মুশফিক ভাই আমাকে একটা ভালো কথা বলেছিল। ওই কথাটা এখনো আমার কানে সবসময় লাগে। সেই কথাটা গোপন থাক।'

'এমনিতে পরিবার আমাকে খুব সমর্থন করে। বিশেষ করে আমার স্ত্রী। সবসময় খেলতে যাওয়ার আগে ইতিবাচক কথা হয়। সব মিলিয়ে ভালো লাগে আরকি।'

বল হাতে ছন্দহীন হলে নিজেকে উজ্জীবিত করার জন্য যে ভাবনাটা মাথায় আসে, শরিফুল সেটিও জানান। তার ভাষ্য, 'মাঠে ঢুকে যদি দুই-একটা ওভার খারাপ হয়, তখন চিন্তা করি ভালো সময় আসবে। পরের ওভার ভালো করবো, ওই চিন্তা আসে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে