যুক্তরাষ্ট্র দল

পরবাসীদের নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে যুক্তরাষ্ট্র

মোনাঙ্ক প্যাটেল (অধিনায়ক), অ্যারন জোন্স (সহ-অধিনায়ক), অ্যান্দ্রিস গৌস, কোরি অ্যান্ডারসন, আলি খান, হারমিত সিং, জেসি সিং, মিলিন্দ কুমার, নিসর্গ প্যাটেল, সৌরভ নেত্রাভালকার, শেদলি ফন স্ক্যালয়াক, স্টিভেন টেইলর, শায়ান জাহাঙ্গীর। রিজার্ভ- গজানন্দ সিং, জুয়ানয় ড্রাইসডেল, ইয়াসির মোহাম্মদ।

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, সবার কাছে স্বপ্নের জায়গা। দেশটিতে একবার পা রাখতে পারলে সবাই হয়ে ওঠেন আনন্দে আত্মহারা। সবচেয়ে উন্নত দেশটির নিয়ন্ত্রণে আছে বিশ্বের ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রযুক্তি থেকে শুরু করে অনেক কিছু। সব জায়গায় উন্নতিতে অন্যদের রোল মডেল যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটে এখনো হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলছে। এবারের টি২০ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হওয়ার সুবাদে প্রথমবার তাদের দেখা মিলবে ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে। আইসিসি টি২০র্ যাংকিংয়ের ১৯ নম্বরে থেকে ২০ দলের বিশ্বকাপে দেখা মিলবে মার্কিনিদের। এর আগে ক্রিকেটের আর কোনো বৈশ্বিক আসরে তাদের দেখা মেলেনি। ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় বিশ্বজুড়ে সেভাবে নেই ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। যুক্তরাষ্ট্রও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশটির তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে বেসবল, বাস্কেটবল, আমেরিকান ফুটবল কিংবা গলফের মতো খেলা। কারও কারও হয়তো পছন্দ ফুটবল। মার্কিনমুলুকে যেটি পরিচিত আবার সকার নামে। এত সব খেলার ভিড়ে ক্রিকেট এখনো দেশটিতে পায়নি কোনো স্থান। এমন অপরিচিত খেলাকে জনপ্রিয় করে তুলতে তাই মার্কিনিদের ভরসা অভিবাসী ক্রিকেটাররা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রিকেটারদের এনে দল সাজিয়েছে তারা। বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ব পাওয়ার আগে ক্রিকেট নিয়ে এতটা মনোযোগ ছিল না তাদের। স্বাগতিক হওয়ার দায়িত্ব পাওয়ার পরই মূলত ক্রিকেটে নজর দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তৈরি করে পরিকল্পনা। সেই অনুযায়ী প্রথমে চালু করে নিজেদের দ্বিতীয় সারির মাইনর ক্রিকেট লিগ। এক বছরের ব্যবধানে গত বছর থেকে শুরু হয় মেজর লিগ। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ হওয়ায় ছিল বিদেশি ক্রিকেটাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ। সে সুযোগেই মূলত বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটাররা। দেশটিতে ক্রিকেটের সূচনা সেই ১৮ শতকের মাঝামাঝি। ইউরোপ থেকে আগত অভিবাসীদের হাত ধরে ক্রিকেট খেলার শুরু যুক্তরাষ্ট্রে। সেই সময় মার্কিনমুলুকে হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেট ফের প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। সেটাও অভিবাসী ক্রিকেটারদের হাত ধরে। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত খেলেছে ২৫ টি২০ ম্যাচ। এর মধ্যে ১৪টি জয়ের বিপরীতে হার ৯ ম্যাচে। স্বাগতিক দলের সবচেয়ে বড় তারকা নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলা কোরি অ্যান্ডারসন। বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা ক্রিকেটার যুক্তরাষ্ট্র দলে বড় পার্থক্য তৈরি করবেন বলেই আশা করছেন স্বাগতিকদের ক্রিকেটপ্রেমীরা। এ ছাড়া দলের মূল কান্ডারি হবেন পেসার আলী খান, অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল, অ্যারন জোন্সের মতো ক্রিকেটাররাও। তাদের আছে বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার নিয়মিত অভিজ্ঞতা। স্বাগতিকরা গ্রম্নপ পর্বে লড়াই করবে ভারত-পাকিস্তানের মতো ক্রিকেট পরাশক্তির সঙ্গে। পাশাপাশি তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে আয়ারল্যান্ড ও প্রতিবেশী কানাডা। দলটি তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে। প্রতিপক্ষ কানাডা। পরের দুই ম্যাচ ৬ ও ১২ জুন যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১৪ জুন গ্রম্নপ পর্বের শেষ ম্যাচে তারা মাঠে নামবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। দেশ ছেড়ে নতুন শিকড়ের টানে অ্যান্ডারসন ৩৩ বছর বয়সি কোরি অ্যান্ডারসন নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। পড়তি ফর্মের কারণে ব্রাত্য হয়ে পড়েন তাসমান পাড়ের দেশটিতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যেতে তাই হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এবার বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবেন যুক্তরাষ্ট্রের জার্সিতে। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় দ্রম্নততম সেঞ্চুরিয়ান বড় পার্থক্য গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। শুধু ব্যাটিং নয়, কার্যকরী বোলিংয়েও রাখবেন বড় ভূমিকা। নিউজিল্যান্ডে ব্রাত্য হওয়া অ্যান্ডারসনের যুক্তরাষ্ট্র দলে অভিষেক হয়েছে কানাডার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে। দুই দেশের হয়ে ৩৩ টি২০ খেলা অ্যান্ডারসনের ব্যাটে এসেছে ৫৬৮ রান ও ১৪ উইকেট। কানাডার বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে তার ব্যাটে এসেছে ৪১.৫০ গড়ে ৮৩ রান। তার এই ব্যাটিং পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে নায়ক হতে পারেন অ্যান্ডারসন। অভিবাসীনির্ভর যুক্তরাষ্ট্র অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল খেলেছেন গুজরাট অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। ভারতীয় ক্রিকেটে জায়গা করে নিতে না পারায় পাড়ি জমান মার্কিনমুলুকে। এ ছাড়া একই তালিকায় আছেন কোরি অ্যান্ডারসন, অ্যান্দ্রিস গৌর, হারমিত সিং, মিলিন্দ কুমার, সৌরভ নেত্রাভালকার, স্টিভেন টেইলর, শায়ান জাহাঙ্গীরের মতো দলের বেশির ভাগ সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রে দলে সুযোগ পাওয়া বেশির ভাগ ক্রিকেটার ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাদের আবার বেশির ভাগই অভিজ্ঞতা আছে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার। এ ছাড়া পাকিস্তান থেকে এসেছেন শায়ান জাহাঙ্গীর। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শেফলি ফন স্ক্যালয়াক ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে এসেছেন অ্যারন জোন্স ও স্টিভেন টেইলর। ফলে দলটির জয় যে অভিবাসীদের জয় হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।